অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগের বিরোধিতা ও নতুন ছোট রাজ্য গঠনের দাবির দাপটে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই আজ অচল হল সংসদ। কিন্তু ঝঞ্ঝা কাটিয়ে চলতি সপ্তাহেই সংসদে খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করাতে চাইছেন মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধী। এ ব্যাপারে সনিয়া এতটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে লোকসভায় তাঁর উপস্থিতিতে অন্ধ্রের বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস সাংসদদের ওয়েলে নামতেও দেননি এ দিন। বিরোধীদের বাগড়ায় যাতে সংসদ অচল হয়ে না পড়ে, তার জন্য সরকারও বিরোধীদের দাবি মেনে মুদ্রার অবমূল্যায়ন, মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনায় রাজি হয়ে যায় অধিবেশনের প্রথম দিনেই।
প্রত্যাশিত ভাবেই অন্ধ্রপ্রদেশের সাংসদরা আজ দল নির্বিশেষে পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের বিরোধিতায় সরব হন সংসদে। আবার তেলঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার জেরে বড়োল্যান্ড, বিদর্ভ-সহ আরও ছোট রাজ্য গঠনের দাবি ওঠে দুই সভাতেই। কংগ্রেস সাংসদদের সনিয়া প্রথমে ওয়েলে নামতে না দিলেও, তিনি সভা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সীমান্ধ্রের কংগ্রেস সাংসদরাও রাজ্য ভাগের বিরোধিতায় স্লোগান তুলতে শুরু করেন। পরিণামে সংসদের উভয় সভাই মুলতবি হয়ে যায়। আর তার জন্য বিজেপি দায়ী করে সরকারকেই।
সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী আজ অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধীদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। দুই কক্ষেই সভা অচল হয়ে পড়া নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন পরে বলেন, “কংগ্রেস আগে নিজের ঘর ঠিক করুক। ওঁদের জন্যই আজ সংসদ চলেনি।” পরে কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটুকু উষ্মা প্রকাশের জানলা দিতেই হয়। সেই কারণে অন্ধ্র, বড়োল্যান্ডের সাংসদদের আজ প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাল থেকে সংসদ চালাতে চায় সরকার।
আজ শরিক ও বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে কংগ্রেসের বাঠকে স্থির হয়েছে, প্রয়োজনে অধিবেশনের মেয়াদ বাড়াবে সরকার। সম্ভবত ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে অধিবেশন।
সমাজবাদী পার্টি গত কাল খাদ্য সুরক্ষা বিলের বিরোধিতা করার হুমকি দিলেও আজ কিন্তু কংগ্রেস সূত্রে দাবি করা হয়, সংসদ চললে ওই বিল পাশ করাতে কোনও অসুবিধা হবে না। সমাজবাদী পার্টিখাদ্য সুরক্ষা বিলকে সমর্থন করবে। বিলটি সমর্থনের কথা বসপা আগেই ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে সমর্থন জানাবে সংযুক্ত জনতা দলও। বিজেপি সূত্রের ইঙ্গিত, সরকারের পক্ষে এই সংখ্যা দেখে তারাও খুব বেশি বিরোধিতা করবে না বিলটির। বড় জোর সংশোধন প্রস্তাব আনতে পারে তারা।
তবু কি কাল থেকে সংসদ স্বাভাবিক ভাবে চলবে? অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের যে চার জন মন্ত্রী রয়েছেন হাইকম্যান্ড ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে তাঁদের কিছুটা শান্ত করেছে। সনিয়া যদি কাল বকে-ধমকেও অন্ধ্রের দলীয় সাংসদদের ঠান্ডা রাখেন, তেলুগু দেশমের সাংসদরা কিন্তু চুপ থাকতে রাজি নন।
এই অবস্থায় অন্ধ্রের সাংসদদের আশ্বস্ত করতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ রাজ্যসভায় বলেন, “পৃথক তেলঙ্গানা গঠন নিয়ে কেন্দ্র একটি বিস্তারিত ক্যাবিনেট নোট তৈরি করছে। তাতে দু’দিকের মানুষের সব উদ্বেগ নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার উল্লেখ থাকবে। এর মধ্যে, নদীর জল বণ্টন, বিদ্যুৎ বণ্টন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা, নিরাপত্তা সবই রয়েছে।”
কিন্তু পৃথক তেলঙ্গানা গঠনে সায় দিলেও, সরকারকে বিপাকে ফেলতে অন্ধ্রের নেতাদের উস্কানি দিতে ছাড়ছে না বিজেপি। অরুণ জেটলি আজ মূলত সেই লক্ষ্যেই বলেন, “চিদম্বরমের বক্তব্যেই স্পষ্ট, সরকার যথেষ্ট হোমওয়ার্ক না করেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিয়েছে। আসলে প্রশাসনিক কারণে অন্ধ্র ভাগ করেনি কংগ্রেস, তা করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।” |