|
|
|
|
ঠিক শাস্তিই হয়েছে দুর্গার, হুঙ্কার মুলায়মের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তোপ দাগলেন মুলায়ম সিংহ। জানিয়ে দিলেন, “আইএএস অফিসার দুর্গাশক্তিকে সাসপেন্ড করে অখিলেশ যাদবের সরকার ঠিক কাজই করেছে। সিদ্ধান্ত ফেরানোর প্রশ্নই নেই।” তুলনায় নরম কংগ্রেসের সুর। প্রধানমন্ত্রী আজ প্রথমবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেও, দলের তরফে কিন্তু আজ তেমন তীব্র ভাবে আক্রমণ করা হয়নি উত্তরপ্রদেশের সরকারকে। খাদ্য সুরক্ষা-সহ এক গুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশের জন্য সমাজবাদী পার্টির সমর্থন দরকার কংগ্রেসের। সে কারণেই তাদের সুর কিছুটা হলেও নরম এখন। তবে দুর্গাশক্তিকে ঘিরে রাজনীতির এই সব হিসেব-নিকেশের বাইরে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটেছে আজ। তা হল, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল আজ এক আবেদনের ভিত্তিতে নির্দেশ জারি করেছে, “পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র ছাড়া দেশের কোনও নদী থেকেই বালি তোলা যাবে না।” বালি মাফিয়াদের অবৈধ খননের ফলে পরিবেশে কী প্রভাব পড়ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্তের নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক।
গত ২৭ জুলাই মসজিদের দেওয়াল ভেঙে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে দুর্গাশক্তিকে সাসপেন্ড করে উত্তরপ্রদেশ সরকার। যদিও অভিযোগ ওঠে, বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করায় তাঁকে ওই শাস্তি পেতে হয়। বালি মাফিয়াদের বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরব হয় বিভিন্ন মহল। এমনকী, খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ওই ঘটনায় প্রয়োজনে পদক্ষেপ করারও অনুরোধ করেন। গোটা ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে উত্তপ্রদেশ সরকারকে তিনটি চিঠিও লেখে কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রক। বিভিন্ন মহল থেকে চাপের মুখে পড়েও দুর্গাশক্তিকে কাল চার্জশিট ধরায় অখিলেশ সরকার। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্তও শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন। দুর্গা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছে অখিলেশ প্রশাসন। তাতে মসজিদের দেওয়াল ভাঙার সময়ে দুর্গা অনুপস্থিত ছিলেন বলা হলেও রাজ্যের গোয়েন্দাদের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্গার সিদ্ধান্তে এলাকায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা ছিল। দুর্গার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অখিলেশ আজ লখনউয়ে এক দলীয় সভায় বলেন, “যদি কোনও অফিসার ভুল করেন, তখন তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে। এ ভাবেই সরকার কাজ করে থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকেই জীবনে ভুল করায় পিতা-মাতা বা শিক্ষকদের তিরস্কার শুনতে হয়েছে।” এই ব্যাখ্যাখারিজ করে দিয়ে রাজ্যের বিরোধী নেত্রী মায়াবতীর দাবি, “দুর্গাশক্তির ঘটনাই বুঝিয়ে দিচ্ছে উত্তরপ্রদেশে কী ভাবে গুন্ডারাজ চলছে।” দুষ্কৃতীরাজ ঠেকাতে সপা প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ দিকে আজই দুর্গার সাসপেনশনের বিষয়ে আজই প্রথম মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, “আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি। এ ব্যাপারে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনেই পদক্ষেপ করা হবে।” পরে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক বার্তা দিতে সনিয়া গাঁধী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন ঠিকই, কিন্তু এই ঘটনাটির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভূমিকা সীমিত। যত ক্ষণ না দুর্গাশক্তি নিজে কর্মিবর্গ মন্ত্রকের কাছে কোনও অভিযোগ জানাচ্ছেন, তত ক্ষণ কেন্দ্র বিশেষ কিছুই করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক আমলা বলেন, “অতীতে মায়াবতী জমানায় প্রায় ২৭ জন আইএএস অফিসারকে একসঙ্গে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তখনই বা কেন্দ্র কী করতে পেরেছে।”
গোটা বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব যে ভাবে সরব রয়েছে তা নিয়ে গত কালই ক্ষোভ জানিয়েছিলেন সপা নেতৃত্ব। খাদ্য সুরক্ষা বিলে সরকারের বিরোধিতা করা হবে বলে কংগ্রেসকে হুমকিও দেন তাঁরা। আর আজ মুলায়মের ভাই তথা সপা-র অন্যতম শীর্ষ নেতা রামগোপাল যাদব জানিয়ে দেন, “কেন্দ্র যদি চায় তা হলে রাজ্য থেকে সমস্ত আইএএস অফিসার প্রত্যাহার করে নিক তারা। আমরা রাজ্যের আমলা দিয়েই চালাব।”
কংগ্রেসের অনেকে মনে করছেন, দুর্গা প্রশ্নে সপা-র সেঙ্গে দূরত্ব যে ভাবে বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে সমর্থন পেতে সমস্যা হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে আর সপা-র সঙ্গে খুব বেশি তিক্ততা বাড়াতে চাইছে না সরকার।
বরং রামগোপালের আক্রমণের জবাবে কংগ্রেস নরম সুরে জানিয়েছে, আমলা বাদ দিয়ে সরকার যে চলে না সেটা প্রবীণ নেতাদের বোঝার কথা। কংগ্রেস জানিয়েছে, প্রশাসনের সঙ্গে রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। দল শুধু চায় কোনও অফিসার যাতে অন্যায়ের শিকার না হন। |
পুরনো খবর: দুর্গাশক্তি জটে ঘেঁটে গেল বহু বিলের ভবিষ্যৎ |
|
|
|
|
|