|
|
|
|
দুর্গাশক্তি জটে ঘেঁটে গেল বহু বিলের ভবিষ্যৎ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হচ্ছে কাল। তার আগে সরকারের অন্যতম সমর্থক দল সমাজবাদী পার্টির সঙ্গেই কংগ্রেসের রাজনৈতিক সম্পর্ক তিক্ত আবর্তে ঢুকে পড়ল। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বহু গুরুত্বপূর্ণ বিলের ভবিষ্যৎ।
তিক্ত আবর্তের একটি কেন্দ্র যদি দুর্গাশক্তি নাগপাল। তবে অপর কেন্দ্র রবার্ট বঢরা। উত্তরপ্রদেশের আইএএস অফিসার দুর্গাশক্তির পাশে দাঁড়িয়ে সনিয়া গাঁধী গত কাল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লেখেন। অনুরোধ করেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই আইএএস অফিসারকে চার্জশিট ধরিয়েছে অখিলেশ যাদবের সরকার। শুধু তা-ই নয়, এ দিন সনিয়ার জামাই রবার্টের প্রসঙ্গ তুলেও কংগ্রেস সভানেত্রীকে আক্রমণ করেন সপা নেতৃত্ব। পাল্টা আক্রমণে গিয়ে মুলায়ম-পুত্রকে সামন্তপ্রভু বলে তুলোধোনা করতে ছাড়েনি কংগ্রেসও। এমনকী, দুর্গাশক্তিকে সাসপেন্ড করার জন্য আজ উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে কৈফিয়তও চেয়েছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকার এ দিনই দুর্গাশক্তিকে চার্জশিট ধরানো নিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রকে। |
|
এই যদি হয় সম্পর্ক, তবে খাদ্য সুরক্ষা, জমি অধিগ্রহণ বা পেনশন সংক্রান্ত বিলগুলি পাশ হবে কী ভাবে? এই সব বিল পাশ করিয়েই তো সেগুলিকে লোকসভা ভোটে তরুপের তাস করতে চাইছে কংগ্রেস! এই অধিবেশনে পাশ হওয়ার জন্য রেকর্ড সংখ্যক বিল তালিকায় রয়েছে। ১১৬টি। কিন্তু কংগ্রেস-সপা তিক্ততায় এতগুলি বিলের ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে চলেছে অধিবেশন শুরুর আগের সন্ধ্যাতেই তা বেশ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
নভেম্বরে বিধানসভা নির্বাচন পাঁচ রাজ্যে। তার পর লোকসভা ভোট। এ সবের আগে সংসদের বাদল অধিবেশন কংগ্রেসের কাছে রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোটের আগে এই অধিবেশনেই খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করিয়ে মানুষের আস্থা ফিরে পেতে চাইছে কংগ্রেস। আবার অর্থনৈতিক মন্দার বাতাবরণেও এই অধিবেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এই অধিবেশনেই পেনশন বিল, বিমা বিলের মতো অর্থনৈতিক সংস্কার সংক্রান্ত বিল পাশ করিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া সরকার। তা ছাড়া পরিকাঠামো ও শিল্পে বিনিয়োগ টানতে জমি বিল পাশ হওয়াও জরুরি।
কিন্তু রাজনীতির পরিভাষা অন্য। ভোটের আগে কংগ্রেসকে সহজে খাদ্য সুরক্ষা বিল, জমি বিল পাশ করাতে দিয়ে বা অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি রূপায়ণ করতে দিয়ে কী লাভ বিরোধীদের? আর তাই সংসদের অধিবেশন বসার আগে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়িতে বৈঠকে বসে এনডিএ-র নেতারা আজ স্থির করছেন, আগামী ক’দিন সংসদে কী হবে তাঁদের কৌশল। দুর্নীতি, আর্থিক সঙ্কট, সিবিআই-এর অপব্যবহারের অভিযোগকে সামনে রেখে কী ভাবে সরকারকে নাস্তানাবুদ করার সব রকম চেষ্টা চালাবেন তাঁরা।
প্রতিপক্ষ শিবিরের কাছে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু শাসক শিবিরের সমীকরণ শেষ মুহূর্তে ঘেঁটে দিয়েছে দুর্গাশক্তি প্রসঙ্গ। কংগ্রেসকে উচিত-শিক্ষা দিতে নেমে পড়েছে মুলায়ম-অখিলেশদের দল। খাদ্য সুরক্ষা বিলের বিরোধিতা করবে বলে এ দিন জানিয়ে দিয়েছে তারা। সপা নেতা নরেশ অগ্রবালের কথায়, “খাদ্য বিল পাশ করিয়ে কংগ্রেস ভোটের আগে কৃতিত্ব নিতে চাইছে। কিন্তু তার থেকেও বড় সমস্যা রয়েছে দেশে। তা নিয়ে আগে আলোচনা জরুরি। এ ছাড়া কৃষকদের ফসল কিনে নেওয়ার ব্যাপারে সরকার আশ্বস্ত না করলে সপা খাদ্য বিলে সমর্থন করবে না।” দুর্গাশক্তির পাশ দাঁড়ানোয় সনিয়ার উপরে ক্ষিপ্ত সপা নেতারা আজ এ-ও বলেন, “রবার্ট বঢরার জমি কেলেঙ্কারি ফাঁস করায় কেন হরিয়ানার আইএএস অফিসার অশোক খেমকাকে সরিয়ে দেওয়া হল, তার জবাবও দিতে হবে সনিয়াকে।”
শুধু বিরোধী বা সমর্থক দলগুলি নয়, ভোটের আগে এখন ফোঁস করছেন শরিকরাও। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার আজ বলেন, “খাদ্য বিল নিয়ে অর্ডিন্যান্স আনা হয়েছে বলে তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে না, এমন হতে পারে না। বিভিন্ন রাজ্য আগে থেকেই এই ক্ষেত্রে কিছু প্রকল্প শুরু করেছে। তাদের ভালটা নেওয়া যেতেই পারে। সে জন্য বিলটিতে সংশোধন প্রস্তাবের জন্যও খোলা মন নিয়ে চলতে হবে।” এ কথা বলে এনসিপি নেতা পওয়ার যে কংগ্রেসকে চাপে রাখতে চাইছেন, সেটা স্পষ্ট। |
বাদল সংসদে ঝড়ের মেঘ |
বকেয়া ১১৬-র কয়েকটি |
• জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা অধ্যাদেশ। প্রস্তাবিত যে আইনের মাধ্যমে ৬৭% মানুষের খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে চায় সরকার। • পেনশন বিল। লক্ষ্য পেনশন ফান্ড নিয়ন্ত্রককে ক্ষমতাশালী করা ও পেনশন খাতে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির পথ সুগম করা। • কোম্পানি বিল। কর্পোরেট গভর্নেন্স প্রক্রিয়ার সংস্কার।
• বিমা বিল। বিমা খাতে প্রত্যক্ষ লগ্নির সীমা বাড়িয়ে ৪৯% করা।
• লোকপাল ও লোকায়ুক্ত বিল। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা।
• হুইসল ব্লোয়ার বিল। আমলাদের মনোবল বাড়ানো।
• বিচারব্যবস্থার দায়বদ্ধতা বিল। বিচার ব্যবস্থার সংস্কার।
• প্রত্যক্ষ কর বিধি বিল। কর ব্যবস্থার সংস্কার।
• নাগরিক পরিষেবা বিল। পরিষেবা দানের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া, না হলে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা।
• বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিল। এ দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরির পথ খুলে দেওয়া। |
|
তবে কংগ্রেস তথা সরকারের নেতারা এখনও আত্মবিশ্বাসী। বিশেষ করে খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশের ব্যাপারে। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক কারণেই এই বিলের বিরোধিতা করার ঝুঁকি নিতে চাইবে না কোনও দল। তবে অন্য বিলগুলির ব্যাপারে নিশ্চিত নন সরকারের নেতারাও। কংগ্রেসের নেতাদের বড় আশঙ্কা তেলেঙ্গানা প্রসঙ্গ নিয়ে। পৃথক রাজ্য গঠনে বিরোধিতা করে সংসদের অধিবেশন পণ্ড করার চেষ্টা করতে পারেন বাকি অন্ধ্রপ্রদেশের সাংসদরা। কংগ্রেসের সাংসদরাও থাকতে পারেন সেই দলে।
এমনিতেই সংসদের বাদল অধিবেশন এ বার দেরিতে শুরু হচ্ছে। ৩০ অগস্ট তা শেষ হওয়ার কথা। মাত্র এই ক’দিনের মধ্যে বিভিন্ন কারণে সংসদ অচল থাকলে গুরুত্বপূর্ণ সব বিল পাশের জন্য খুব কম সময়ই হাতে থাকবে। এই অবস্থায় আজ সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ জানিয়েছেন, প্রয়োজনে অধিবেশনের মেয়াদ বাড়াবে সরকার। তাঁর কথায়, “যে সব বিল এ বার পাশ করাতে চাইছে সরকার, তা দেশবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চেষ্টায় কোনও খামতি রাখবে না।” যদিও এ-ও ভুলে গেলে চলবে না যে, সরকারকে ব্যর্থ প্রতিপন্ন করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখবে না বিজেপি তথা বিরোধীরাও। তাদের সঙ্গে পা মিলিয়ে মুলায়মও শেষ পর্যন্ত বিরোধিতায় নামবেন, নাকি দরকষাকাষিতে তুষ্ট হয়ে ফের ত্রাতা হবেন সরকারের, তা সময়ই বলবে। |
পুরনো খবর: দুর্গাশক্তির পাশে এ বার সনিয়া, চিঠি মনমোহনকে |
|
|
|
|
|