চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ও রাজ্য সরকারের আইনি লড়াইয়ের জেরে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়া থেমে নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, চলতি মাসের মধ্যেই সংস্থার হাল খতিয়ে দেখে নিতে পারবে ইচ্ছুক ক্রেতারা। এবং আগামী মাসেই দরপত্র জমা দিতে পারবে তারা।
সোমবার সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠক বসে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে। পর্ষদের সামনে নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তুলে ধরে সংস্থার অন্যতম প্রধান অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। ঋণের বোঝায় জর্জরিত পেট্রোকেমকে চাঙ্গা করতে ৫০০ কোটি টাকা জোগাড় করার লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে তারা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়ে যাওয়ায় এই প্রস্তাবকে এখন বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ পর্ষদের অধিকাংশ সদস্য। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “চ্যাটার্জি গোষ্ঠী টাকা জোগাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাব পর্ষদ খতিয়ে দেখবে।” তবে রাজ্য সরকার যে সংস্থার মালিকানা ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তে অনড়, তা-ও স্পষ্ট করেন তিনি। পূর্ব পরিকল্পনা মতো এ বছরেই পেট্রোকেমের মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হবে।
প্রসঙ্গত, গত পরিচালন পর্ষদের বৈঠকেও পূর্ণেন্দুবাবু দাবি করেছিলেন, ৪০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ১০০ কোটি পেলে সংস্থা চাঙ্গা করা যাবে। তাঁর মতে পেট্রো- পণ্যের বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অর্থের জোগান এলে এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে পূর্ণ উৎপাদন করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সংস্থার রাশ হাতে পাওয়ার শর্তে টাকা ঢালার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন পূর্ণেন্দুবাবু। বিরোধী পক্ষের একাংশের অভিযোগ, শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়া ঠেকানোর জন্যই এই প্রস্তাব দিচ্ছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।
মে মাসে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দিতে চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল রাজ্য সরকার। ইচ্ছাপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল ১০ জুন। পার্থবাবু বরাবর দাবি করে আসছেন, আর্থিক অবস্থা বেহাল হলেও কারখানার উচ্চমানের জন্য সংস্থা সম্পর্কে শিল্পমহল আগ্রহী। কারণ বাজারে তাদের উৎপাদিত পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
প্রত্যাশা মতোই পেট্রোকেম কিনতে চেয়ে দরপত্র জমা দেয় ছ’টি সংস্থা। গেইল, ইন্ডিয়ান অয়েল, ওএনজিসি-র মতো ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পাশাপাশি দৌড়ে রয়েছে জিন্দল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার, কেয়ার্ন ইন্ডিয়া ও মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স। রাজ্য সরকারের শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়ার দায়িত্বে রয়েছে পরামর্শদাতা সংস্থা ডেলয়েট।
এর আগেও ধুঁকতে থাকা সংস্থায় ইন্ডিয়ান অয়েলকে বড় অংশীদার হিসেবে পেতে চেয়েছিল বিগত সরকার। কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় সে সময়ে জল ঢেলে দিয়েছিল চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। তাদের সেই অবস্থান এখনও বদলায়নি। আপাতত হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর ছোট অংশীদার হিসেবে ইন্ডিয়ান অয়েল-এর উপস্থিতি রয়েছে। তার হাতে রয়েছে সংস্থার ৮.৮৯ শতাংশ শেয়ার। |