প্রত্যাশা মতোই হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের শেয়ার কিনতে চেয়ে ইচ্ছাপত্র জমা দিল মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স গোষ্ঠী। একই ভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ৩ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গেইল, ইন্ডিয়ান অয়েল (আইওসি), ওএনজিসি-ও। এ ছাড়া, কেয়ার্ন-সহ আরও দু’টি সংস্থাও ইচ্ছাপত্র দাখিল করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
সোমবার ১০ জুন এই শেয়ার কিনতে চেয়ে ইচ্ছাপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। রাজ্য সরকারের শেয়ার নিলামের সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে উঠে এসেছিল রিলায়্যান্স, গেইল, আইওসি এবং ওএনজিসি-র নাম। গোটা প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা পরামর্শ -দাতা সংস্থা অবশ্য এ নিয়ে মুখ খোলেনি। পেট্রোকেম চেয়ারম্যান তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সব মিলিয়ে ৬টি সংস্থা ইচ্ছাপত্র জমা দিয়েছে বলে শুনেছি।”
পেট্রোকেমের শেয়ার বিক্রি নিয়ে বর্তমান রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই আশাবাদী। পার্থবাবুর দাবি, রাজ্যের এই সংস্থায় শেয়ার কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বড় বড় সংস্থা। কারণ সংস্থার আর্থিক হাল খারাপ হলেও বাজারে তার উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্থার উৎপাদনের মান বরাবরই উঁচুদরের। যেমন, এই সংস্থার রাশ হাতে নেওয়ার আগ্রহ প্রথম থেকেই দেখিয়েছে আইওসি। আপাতত পেট্রোকেমে ‘মাইনর’ অংশীদার হিসেবে উপস্থিত আইওসি। হাতে ৮.৮৯% শেয়ার। তবে তাদের বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে টানতে চেয়েছিল বিগত সরকার। কিন্তু তখন রাজ্য সরকারের সেই প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দেয় সংস্থার অন্যতম অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাটিকে ২৬% মালিকানা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল বিরোধিতা করেছিল তারা।
অংশীদারি বাড়াতে না-পারলেও এ বার পেট্রোকেমের শেয়ার নিলামে অংশগ্রহণ করছে আইওসি। তার জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজও চালিয়েছে সংস্থা। আইওসির মতোই এই সংস্থার শেয়ার কিনতে চেয়েছিল আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসির শাখা মাঙ্গালোর রিফাইনারিজ। শিল্প মহলের দাবি, পেট্রোকেম ক্ষেত্রে একচেটিয়া ব্যবসা করার লক্ষ্যে হলদিয়া পেট্রোকেম-এর মালিকানা পেতে আগ্রহী মুকেশ অম্বানীর সংস্থা রিলায়্যান্সও।
মে মাসে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দিতে চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেখানেই ইচ্ছাপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ১০ জুন ধার্য করা হয়। পার্থবাবু তখনই জানিয়েছিলেন, সংস্থার আর্থিক অবস্থা বেহাল হলেও কারখানার উচ্চমানের কারণে সংস্থা সম্পর্কে আগ্রহ রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, বাজারে হলদিয়া পেট্রোকেম-এর উৎপাদিত পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
তবে সংস্থার শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই এক প্রস্ত আইনি জটিলতায় জড়িয়ে গিয়েছে। নিজেদের পুরনো অবস্থানে থেকেই চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর বক্তব্য, রাজ্য সরকার যে ৬৭.৫০ কোটি শেয়ার বিক্রি করতে চাইছে তার মধ্যে ১৫.৫০ কোটি শেয়ার তাদের। শেয়ার নিলামের বিরোধিতা করে চ্যাটার্জি পেট্রোকেম (মরিশাস) ও চ্যাটার্জি পেট্রোকেম (ইন্ডিয়া) সংস্থা দু’টির পক্ষ থেকে পাবলিক নোটিস দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও সংস্থা ইচ্ছাপত্র জমা দিলে তা নিজের ঝুঁকিতে দিতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে পরিচালন পর্ষদের বৈঠক শেষে পার্থবাবু জানিয়েছিলেন ৩০ জুনের মধ্যে পেট্রোকেমের মালিকানা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চায় রাজ্য।
গত মঙ্গলবার ছিল সংস্থার পর্ষদের সাম্প্রতিক বৈঠক। সেখানে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা ছাড়াও ছিলেন পার্থবাবু ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে সংস্থার দুই প্রধান অংশীদার রাজ্য সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়, সংস্থা চালানোর জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়ার আশা উজ্জ্বল। যদিও খাতায় কলমে প্রতিশ্রুতি দেয়নি ব্যাঙ্কগুলি। আগামী ১৪ জুন ব্যাঙ্কগুলির আর এক দফা বৈঠকে বসার কথা। সেই বৈঠকেই ঋণ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে অবশ্য সংস্থার চূড়ান্ত অর্থ সঙ্কটের কথা ভেবে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। |