হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর ১৫.৫ কোটি শেয়ার নেওয়ার দাবি নাকচ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চ-এর যুক্তি, যে-প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে এই দাবি, পুরনো হওয়ার ফলে তার আর কোনও মূল্য নেই। একই সঙ্গে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ করে দিল আদালত।
মঙ্গলবার এই আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি ছিল সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠক। এ দিনের বৈঠকে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পেট্রোকেমের চেয়ারম্যান তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে সংস্থার দুই প্রধান অংশীদার রাজ্য সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়, পেট্রোকেম চালানোর জন্য ব্যাঙ্কঋণ পাওয়ার আশা উজ্জ্বল।পার্থবাবু জানান, সংস্থার চূড়ান্ত অর্থ সঙ্কটের কথা ভেবে রাজ্য আপাতত ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। তিনি বলেন, “রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম আগেই ১০০ কোটি ঢালার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার থেকে এখন ২৫ কোটি দেওয়া হবে।” ৪০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ ও রাজ্য সরকারের থেকে ১০০ কোটি পেলে সংস্থাকে চাঙ্গা করা যাবে বলে দাবি করলেন পূর্ণেন্দুবাবু। তাঁর মতে বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অর্থের জোগান এলে এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে পূর্ণ উৎপাদন করা যাবে। তবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর তরফে নয়া পুঁজি ঢালার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন তিনি। তাঁর দাবি, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ৫০০ কোটি টাকা যথেষ্ট।
এ দিনের বৈঠকে সংস্থার নয়া এমডি নিয়োগের প্রসঙ্গ ওঠেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। বর্তমান এমডি সুমন্ত্র চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৮ জুন। পার্থবাবু বলেন, “আমাদের শেয়ার কিনতে চাওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১০ জুন। কেমন সাড়া পাওয়া যায়, সে দিকেই তাকিয়ে আছি। সংস্থার এমডি পরিবর্তন নিয়ে তার পরে আলোচনা করা যাবে।”
শেয়ার নিলামের প্রক্রিয়া আইনি লড়াইয়ের কারণে বিঘ্নিত হবে না বলেই মনে করছে রাজ্য। এ দিনের আদালতের রায়ও রাজ্যকে এ বিষয়ে স্বস্তি এনে দিয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। বিতর্কিত ১৫.৫ কোটি শেয়ার নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে খুশি রাজ্য।
হাইকোর্ট জানিয়েছে ২০০২-এর প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর শেয়ার দাবির আর ‘জীবন’ নেই। ১১ বছর পরে ১৫.৫ কোটি শেয়ার দাবি করার সুযোগও নেই। এ ছাড়াও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর প্যারিসে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। ১৫.৫ কোটি শেয়ারের দাবিকেও ডিভিশন বেঞ্চ ‘মৃত দাবি’ বলে ঘোষণা করল।
চ্যাটার্জি গোষ্ঠী পেট্রোকেমের সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে মামলা করে। পেট্রোকেমও সালিশি আদালতে যাওয়ার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে পাল্টা মামলা করে। হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিলে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে। মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চ চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রায় দিল। |