নিকিতা হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে আদালতে যাতে কোনও আইনজীবী সওয়াল না করেন সেই আবেদন করবেন ফালাকাটার বাসিন্দারা। খুব দ্রুত আইনজীবীদের কাছে ওই আবেদন করতে ফালাকাটা থেকে একটি প্রতিনিধি দল আলিপুরদুয়ার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রবিবার দুপুরে ফালাকাটা টাউন ক্লাবে এলাকার শতাধিক বাসিন্দা একটি বৈঠক করেন। সেখানে দোষীদের ফাঁসির দাবি তোলা হয়। পাশাপাশি, আগামী বৃহস্পতিবার ফের বৈঠক করে কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এ দিনের বৈঠকে সভাপতি ইতি রায় বলেন, “ফালাকাটার ইতিহাসে এভাবে দিনে দুপুরে কেউ খুন হয়নি। ওই স্কুল ছাত্রীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই এই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। অভিযুক্তদের হয়ে যাতে কোনও আইনজীবী সওয়াল না করেন, আমরা আইনজীবীদের কাছে সেই আবেদন রাখব।”
২৮ জুলাই সকাল ১১টা নাগাদ প্রাইভেট টিউশন পড়ে ফেরার পথে সুভাষ কলোনি এলাকায় একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নিকিতা দত্ত’কে মাথায় গুলি করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবক তাপস দাস ওরফে খুলুর নামের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরীর। পুলিশ খুলু ও তার সঙ্গী গোপাল আচার্যের পাশাপাশি নিকিতার প্রাক্তন গৃহশিক্ষক বিজিৎ দত্তকে গ্রেফতার করে। ওই শিক্ষকের কাছ থেকেই খুলু নিকিতার টেলিফোন নম্বর জোগাড় করেছিল বলে অভিযোগ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফালাকাটা জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। এলাকায় বন্ধ সহ দোষীদের ফাঁসির দাবিতে বাসিন্দারা মিছিল বার করেন। মহিলারা আলাদা মিছিল করে টানা এক ঘণ্টা ফালাকাটা থানা ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। আদালত ১৫ দিনের জন্য ৩ অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বর্তমানে ফালাকাটা থানার হাজতে তিনজন রয়েছে। সকালবেলা রুটি-তরকারি ও চা, দুপুরে ভাত, ডাল, তরকারি এবং প্রতিদিন রাতে তিনটি রুটি সবজি দেওয়া হচ্ছে অভিযুক্তদের। সঙ্গে চলছে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ। অভিযুক্তরা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে সেইজন, গরমের জন্য প্রতিদিন স্নান এবং হাজতের বাইরে থেকে একটি পাখার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, খুন করার ঘটনায় যে সে অনুতপ্ত তা রবিবার পুলিশের জেরায় খুলু দাবি করেছে। পুলিশকে খুলু জানিয়েছে, নিকিতাকে গুলি করার পর নিজেকেও সে শেষ করার কথা ভেবেছিল। গুলি করতে পারব না বলে নিকিতা চ্যালেঞ্জ করলে মাথা গরম হয়ে যাওয়ায় সে গুলি করে বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে। এর মধ্যে খুলুর এক আত্মীয় তার জন্য পোশাক দিয়ে গিয়েছে। বিজিৎ এবং গোপালের পরিবারের দুই দিন তার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছে। খুলু পুলিশ অফিসারদের বলে, ফালাকাটা শহরে বাসিন্দারা যে তার ফাঁসি চাইছে তা সে জানে। তার আইনজীবী দরকার নেই।
আর ধৃত গোপাল এ দিন পুলিশকে বলেছে, খুলু এমনটা যে করে ফেলবে তা তার জানা ছিল না। বাইকে করে ওকে সে শুধু মাথাভাঙায় পৌঁছে দিয়ে আসে। জেল থেকে ছাড়া পেলে ফালাকাটায় সে আর যাবে না বলে পুলিশকে বলেছে। নিকিতার প্রাক্তন গৃহশিক্ষক ধৃত বিজিৎ দত্ত পুলিশকে জানান, একটা নম্বর দেওয়ার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হল। প্রাইভেট টিউশন দূরের কথা, কোনও কাজও আর কোনও দিন কেউ দেবে না। |