বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে ফের কঙ্কালের কারবার শুরু হয়েছে পূর্বস্থলীর ভাগীরথীর পাড়ে। অভিযান চালিয়ে এমন তথ্যই এল পুলিশের হাতে। গত শুক্রবার পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বেলেরহাট রেললাইন লাগোয়া যজ্ঞেশ্বরপুর ঘাটে তিনটি বেড়ার তৈরি ঘর থেকে বেশ কিছু খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় দেহ পচানোর রাসায়নিক, কয়েকটি নীল ড্রাম-সহ নানা সরঞ্জাম। অভিযানের সময়ে এক যুবককে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ। বিজয় চৌধুরী নামে ওই ধৃতের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি মেলে। তাকে জেরা করেই পূর্বস্থলীতে ফের এই বেআইনি কারবার শুরু হওয়ার কথা জানা গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বছরখানেক আগে কালনা মহকুমা পুলিশের কাছে খবর আসে, দেবনগর চর ও যজ্ঞেশ্বরপুর ঘাটে রমরমিয়ে চলছে কঙ্কাল তৈরির কাজ। খবর পেয়ে এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকার পূর্বস্থলী থানার পুলিশকর্মীদের নিয়ে অভিযানে নামলেও তাঁদের খালি হাতেই ফিরতে হয়। পুলিশ জানতে পারে, সেখান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে কারবারিরা সরে গিয়েছে নদিয়ায়। |
গত বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে ফের খবর আসে, কঙ্কালের কারবার চালাতে ফের যজ্ঞেশ্বরপুর ঘাটে ফিরে এসেছে দুষ্কৃতীরা। বিক্রির জন্য বেশ কিছু কঙ্কালও তারা সেখানে জড়ো করেছে। পুলিশ জানায়, ওই ঘাটে এই কারবারের মালিক পূর্বস্থলীর বাসিন্দা মুক্তি বিশ্বাস ও তার ছেলে বলা বিশ্বাস। তারাই এজেন্টের মাধ্যমে নানা জায়গা থেকে মৃতদেহ সংগ্রহ করে ভাগীরথী লাগোয়া যজ্ঞেশ্বরপুর ঘাটে নিয়ে আসে। সেখানে রাসায়নিকের মাধ্যমে দেহ পচিয়ে কঙ্কাল তৈরি করা হয়। এর পরে পিচবোর্ড ও কাঠের বাক্সে বন্দি করে তা বিক্রি করে দেওয়া হয় রাজ্যের নানা প্রান্তে।
পুলিশ জেনেছে, রাতের অন্ধকারে মৃতদেহ আনা হয়। দেহ পচানোর জন্য ছোট ছোট খাল তৈরি করা হয়েছে। পলিথিনে দেহ জড়িয়ে রাসায়নিক ছড়িয়ে তা ওই খালে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। ৭-১০ দিন পরে ওই দেহ তুলে লম্বা ড্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই কঙ্কাল তৈরি করে কাঠের বাক্সে ভরা হয়। পুলিশ জানায়, যখনই অভিযান চালানো হয়, মুক্তি ও বলা গা ঢাকা দেয়। বছর পাঁচেক আগে এই কঙ্কাল তৈরির ঘটনাতেই মুক্তি বিশ্বাস এক বার গ্রেফতার হয়েছিল। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরেও সে সেই কারবার চালাচ্ছে বলে পুলিশের কাছে খবর রয়েছে।
শুক্রবার অভিযানে ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে ছিলেন পূর্বস্থলীর আইসি রঞ্জন সিংহ। ধৃত বিজয়কে শনিবার আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, সে ও তার বাবা অজিত চৌধুরী কঙ্কাল-কারখানার কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছে। তাদের বাড়ি নদিয়ার চাকুন্দি গ্রামে। পুলিশের দাবি জেরায় ধৃত জানিয়েছে, মেডিক্যাল কলেজে সরবরাহের নাম করে এক ব্যক্তি এই সব কঙ্কালগুলি কিনে নিয়ে যায়। কঙ্কাল তৈরির জন্য জলে ভেসে যাওয়া দেহ, শ্মশান থেকে আধপোড়া দেহ, মাঝে-মধ্যে নানা হাসপাতালের ডোমেদের সঙ্গে আঁতাত করেও মৃতদেহ সংগ্রহ করা হয় বলে জানা গিয়েছে, দাবি পুলিশের। তবে কত দামে কঙ্কাল বিক্রি করা হয়, তা ধৃতের কাছে জানা যায়নি বলে পুলিশ জানায়। |