সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পরে কাটোয়া থানা তাঁকে স্রেফ সাদা কাগজে সই করিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ জানালেন দাঁইহাটে নিহত গণেশ মুর্মুর বাবা।
কাটোয়া থানা থেকে তিনি বাড়ি ফেরার পরপরই তদন্তে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদার। তাঁর কাছে তিনি অভিযোগ করেন, “সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। কী লিখবে জানি না। একটু দেখবেন স্যার।” এ কথা বলার সময়েই তরুণবাবুকে ফোন করেন মঙ্গলকোটের বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরী। কথা বলতে বলতে দূরে সরে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। পিছু নেন অন্য আধিকারিকেরাও।
পূর্ব রেলের ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার দাঁইহাট রেলগেট থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পশ্চিম নসিপুর গ্রামে রবিবার ভোরের দিকে চার জন মুখ ঢাকা দুষ্কৃতী ঝুপড়ি ঘরে ঢুকে গণেশের বোন ও দিদির সম্মানহানির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গেলে গণেশকে গুলি করা হয়। মৃত্যু হয় বছর কুড়ির এই যুবকের। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার পরেই পৌঁছে যান এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব বিশ্বাস, সার্কেল ইনস্পেক্টর শচীন্দ্রনাথ পড়িয়া, কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাস। তখন সেখানে বসে রয়েছেন নিহতের বাবা। পুলিশ তদন্তের স্বার্থে তখনই প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করতে চাইছিল। |
পুলিশ নিহতের বোন ও দিদিকে গাড়িতে উঠতে বললে তখন সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সদস্য জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় তিন পুলিশকর্তার। জয়শ্রীদেবী পুলিশের উদ্দেশে, “কাটোয়ায় একের পর এক নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আপনারা নিষ্ক্রিয়। এ ভাবে আপনারা ওদের নিয়ে যেতে পারেন না।” পুলিশকর্তারা এ সব শুনে ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা পাল্টা বলেন, “আপনি কে? আপনি কী ওঁদের আত্মীয়? অনেকগুলি ঘটনায় আমরা তদন্ত করে গ্রেফতার করেছি। এ ক্ষেত্রে আপনাদের অভিযোগ থাকলে দিন না।” এর পরেই গণেশের বাবা ও বোনেদের নিয়ে থানায় চলে যায় পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, সাদা কাগজে সই করানোর বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার কিছুক্ষণ পরে নিহতের বোন ও দিদির টিপসই দেওয়া একটি অভিযোগ কাটোয়া থানায় জমা পড়ে। দুই তরুণী অভিযোগ করেছেন, মুখ বাঁধা চার জন দুষ্কৃতী তাঁদের ধর্ষণের চেষ্টা করে। বাধা দিতে গিয়ে খুন হন গণেশ। অভিযোগটি লিখেছেন দেবকুমার মণ্ডল। টিপসই দু’টি শনাক্ত করেছেন অভিযোগকারিণীদের এক আত্মীয়। শেষে সেই অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে কাটোয়া থানা।
এলাকাবাসীর দাবি, নসিপুর এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য নতুন কিছু নয়। আদিবাসী মহিলাদের নিগ্রহের চেষ্টাও এখানে আগে হয়ে বলে অভিযোগ। এই ঘটনাতেও পুলিশ উপযুক্ত ভূমিকা পালন করেনি বলে গ্রামবাসীরা দাবি করেন। সকালে মৃতদেহ আনতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখেও পড়ে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা ও নানা রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, পুলিশ সকাল থেকে সত্য ঘটনা আড়াল করতে চাইছিল। দলমত নির্বিশেষে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসায় শেষ পর্যন্ত তা করতে পারল না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যদিও তদন্তে কোনও রকম গাফিলতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। |