মৃতদেহ সংগ্রহ করে বেআইনি ভাবে কঙ্কাল তৈরির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার রাতে ধৃত ওই দু’জনের নাম মনোজ পাল ওরফে গপসা ও কুশ বিশ্বাস। গপসার বাড়ি পূর্বস্থলীর নন্দা কলোনিতে। বছর পঁয়ষট্টির কুশবাবুর বাড়ি বহড়া এলাকায়। পুলিশ জানায়, দু’জনকে গ্রেফতারের সময়ে বেশ কিছু হাড়গোড়ও উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার তাদের কালনা মহকুমা আদালতে তোলা হলে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বছর চারেক আগে বর্ধমানে কঙ্কালের কারবার নিয়ে হইচই শুরু হয়। রাতের অন্ধকারে গোদা বা কালনার কোম্পানিডাঙার মতো বেশ কিছু এলাকার কবরস্থান মৃতদেহ সরাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। তা প্রকাশ্যে আসায় অনেকে গ্রেফতারও হয়। কিছু দিন সব চুপচাপ থাকার পরে ফের তেমন কারবার শুরু হয় পূর্বস্থলী এলাকায়। পূর্বস্থলীর সীমানায় মেড়তলা পঞ্চায়েতের দেবনগর গ্রামে ভাগীরথীর তীরে এমনই এক কঙ্কাল তৈরির ডেরার কথা জানাজানি হয় সম্প্রতি। দেবনগরে ওই ডেরার মালিক ছিল বছর ছাব্বিশের গপসা। বছর চারেক আগে ধরপাকড়ের সময়েও সে এই কারবারে যুক্ত ছিল। তবে তখনও মালিক হয়নি। অন্য কঙ্কাল কারখানার কর্মচারী ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল,এখন তার ‘কারখানায়’ কর্মী হিসেবে কাজ করত দু’জন। |
এলাকা সূত্রে জানা যায়, ডেরার আশপাশে কয়েকটি চৌবাচ্চায় ভরা থাকে রাসায়নিক মেশানো জল। ছেঁড়া কাপড়ে লাশ মুড়ে ওই সব চৌবাচ্চায় চুবিয়ে দেয় গপসার শাগরেদরা। কিছু দিন পরে কাপড়ের মোড়ক খুলে ফেললেই খসে যায় হাড় ছাড়া বাকি অংশ। এর পরে ভাগীরথীর জলে ধুয়ে ফেলে প্লাস্টিকের বস্তায় মুড়ে দালাল মারফত রেল বা সড়ক পথে পাচার হত কঙ্কাল। গপসা নিজেই জানিয়েছিলেন, সরকারি হাসপাতালের মর্গে ডোমেদের হাত করে বেওয়ারিশ লাশ বা নদীতে ভেসে আসা লাশ সংগ্রহ করেই কারবার চালান তিনি। সেই খবর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশের পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এর পরেই ভাগীরথীতে নৌকায় করে গিয়ে গপসার ডেরার খোঁজে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে প্রথমে তাদের খালি হাতেই ফিরতে হয়। পরে পুলিশ জানতে পারে, গপসা ডেরা সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে নদিয়া জেলার অন্তর্গত এলাকায়। স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ ও কারবার নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার জেরেই এই ডেরা বদল বলে জেনেছে পুলিশ।
শনিবার রাতে বাড়ি থেকে গপসাকে গ্রেফতারের পরে কুশ বিশ্বাসের এই কারবারে জড়িত থাকার কথা জানতে পারে পুলিশ। তাকেও সেই রাতেই ধরা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় গপসা জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই এই চক্রের সঙ্গে সে যুক্ত। মহকুমার এক পুলিশকর্তা জানান, উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। ধৃত দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েক জনের নাম জানা গিয়েছে। তাদের মধ্যে এক জন এই কারবারের পাণ্ডা। তাদের খোঁজ চলছে। |