রাজ্যের একমাত্র ব্লাড ব্যাগ তৈরির কারখানায় উৎপাদন বন্ধ বহু দিন। এ বার খাতায় কলমে এই সরকারি কারখানা গুটিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হল। সল্টলেক সেক্টর ফাইভের কারখানার ৪৪ জন কর্মীকে ছাঁটাইয়ের নোটিস ইতিমধ্যেই ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুজোর মুখে রুজি-রুটি হারাতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ৩১ অগস্টই তাঁদের চাকরির মেয়াদ শেষ।
ধুঁকতে থাকা রাজ্য সরকারি সংস্থা ইলেকট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর অধীনে রয়েছে এই ব্লাড ব্যাগ তৈরির কারখানা। সল্টলেক সেক্টর ফাইভে প্রায় ৬ বিঘা জমির উপর তৈরি এই কারখানা ২০০১-এ চালু হয়। ২০০২ থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, গড়ে বার্ষিক ১ কোটি টাকার ব্যবসা করত সংস্থা। ২০০৬-’০৭ পর্যন্ত দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সরবরাহ করত এই কারখানা। দৈনিক ৮০০ ব্ল্যাড ব্যাগ উৎপাদন দিয়ে শুরু। সেই সংখ্যা প্রায় ৪৫০০-এ পৌঁছে যায়।
উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয় দামি মেশিন। আর, সমস্যার সূত্রপাত এখানেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা দামের যন্ত্র কেনা হলেও তা চালু করার জন্য সেই বিদেশি সংস্থাকে কাজে লাগানো হয়নি। কেনার মাস সাতেক পরে মোড়ক খোলা হলে দেখা যায়, ওই মেশিনের কাজ জানা কোন কর্মীই এখানে নেই। পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু যন্ত্রাংশও। এর পরে আর এক বার মেশিন সারানোর চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। উল্টে জলে যায় ২০ লক্ষ টাকা দাম দিয়ে কেনা নয়া যন্ত্রাংশ।
বাজার ও পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কারখানায় উৎপাদন বন্ধ প্রায় সাত বছর। মাস গেলে কর্মীদের বেতন বাবদ কয়েক লক্ষ টাকাও ব্যয় করে রাজ্য। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। অথচ এ রাজ্যেই রয়েছে ব্লাড ব্যাগের বিশাল বাজার। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৪৫-৪৮ হাজার সিঙ্গল ব্লাডব্যাগ লাগে।
কর্মীদের অভিযোগ, শুধুমাত্র প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে কারখানার এই বেহাল দশা। অধিকাংশ কর্মী সংস্থার প্রথম দিন থেকে যুক্ত রয়েছেন। তবে পাকা চাকরি কোনও দিন হয়নি। ওয়েবেল সাপোর্ট মাল্টিপারপাস সার্ভিসেস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মাধ্যমে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত এঁরা। রাজ্য সরকার সোসাইটিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, ওই কর্মীদের চাকরির মেয়াদ এ মাসেই শেষ। সংস্থা কর্তৃপক্ষের দাবি, সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্দেশেই কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে।
নাভিশ্বাস উঠেছে মূল সংস্থা বিধান রায়ের আমলে তৈরি ইলেকট্রো মেডিক্যাল-এরও। ব্লাড ব্যাগ কারখানাটির এই দশা তারই প্রতিফলন। এ ছাড়া সংস্থার আর একটি কারখানা রয়েছে। বি টি রোডের সেই কারখানায় এক্স-রে ফিল্ম ও এক্স-রে মেশিন উৎপাদন হত। তাও আপাতত বন্ধ। যদিও চলতি বছরের গোড়ায় সংস্থা কর্তৃপক্ষ ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে ১৪ কোটি টাকার ব্যবসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে খোদ কর্মীদের মনেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর ১৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার সিকি ভাগ ব্যবসাও এখন পর্যন্ত করেনি সংস্থা।
প্রসঙ্গত, যে-চারটি প্রায় বন্ধ সরকারি সংস্থার উদ্বৃত্ত জমি ও সম্পত্তি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করে সরকারি কোষাগারে অর্থ জোগানোর পরিকল্পনা করেছে রাজ্য, ইলেকট্রো মেডিক্যাল অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রিজ তার অন্যতম। বাকি ৩টি হল: ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (নিস্কো), লিলি বিস্কুট ও নিও পাইপস। |