কলকাতায় বসে নয়, জেলায় জেলায় ঘুরে তৃণমূলস্তরের কর্মীদের নিয়ে সংগঠন তৈরি করার দাবি উঠল কংগ্রেসে। কলকাতায় সভা-সমাবেশ না করে, কংগ্রেসের বিধায়ক-কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও জেলা থেকে উঠে আসা নেতাদের গ্রামের কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া উচিত। এই প্রক্রিয়ায় লোকসভা ভোটের আগে সংগঠন মজবুত করার কাজ অনেকটাই সম্ভব হবে বলে প্রদেশ সভাপতিকে স্পষ্ট জানিয়েছেন জেলার নেতারা।
পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের বিপর্যয় পর্যালোচনা করতে বসে শনিবার দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতিদের কাছ থেকে ‘জেলায় চলো’র ডাকই পেলেন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। দলীয় সূত্রে খবর, শাসক দলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আগামী ১৭ অগস্ট রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দেন জেলা নেতৃত্ব। শান্তিপুরের বিধায়ক অজয় দে, কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ির বিশ্বরঞ্জন সরকারের মতো প্রবীণ নেতারা বুঝিয়ে দেন, আগামী ১৬ অগস্ট থেকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। ফলে ওই সময় জেলা থেকে কলকাতায় আসা তাঁদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। বৈঠকে উপস্থিত জেলা নেতাদের অনেকেই বৈঠকে বলেছেন, পঞ্চায়েতের ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের সংগঠনকে মজবুত করতে এখন জেলায় নজর দেওয়া আশু প্রয়োজন। তা না করে কলকাতায় সভা করা নিরর্থক।
নড়বড়ে সংগঠন নিয়ে যে জেতা সম্ভব নয়, তা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি অধীর চৌধুরী। একেবারে তৃণমূলস্তর অর্থাৎ বুথস্তর থেকে সংগঠন তৈরি করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তৃণমূলের সন্ত্রাস ও পুলিশি পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শক্তিতে লড়েই মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ জিতে দুর্গরক্ষা করেছে কংগ্রেস। দলের সাধারণ সম্পাদক তথা বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “অধীরদার নেতৃত্বে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেই মুর্শিদাবাদে আমরা মাথা উঁচু রেখে চলতে পারছি।” বুথস্তর থেকে সংগঠন তৈরি করার প্রস্তাব একাধিকবার দিয়েছেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক মানস ভুঁইয়াও। বুথস্তরের সাংগঠনিক শক্তিতেই মানসবাবুর নিজের কেন্দ্র সবংয়ে এ বারই প্রথম পঞ্চায়েত সমিতি পেয়েছে কংগ্রেস।
এ দিন বৈঠকের পরে অজয়বাবু বলেন, “অধীর-দীপা-মানসের মতো গ্রহণযোগ্য নেতা এবং একঝাঁক বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে প্রদেশ সভাপতি ব্লক, মহকুমায় ঘুরে ঘুরে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলুন, সেই প্রস্তাবই দিয়েছি।” এ ভাবে নাগাড়ে জেলায় ঘুরে সভা-সমাবেশ-অভিযান করলে জনমানসে কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে নেতাদের অনেকেরই অভিমত। সেই কারণে রাজ্যকে পাঁচ-ছ’টি অঞ্চলে ভাগ করে দলের জনপ্রিয় নেতা-মন্ত্রীদের জেলার দায়িত্ব দেওয়ারও প্রস্তাব দেন অজয়বাবু। জেলার কর্মীদের সঙ্গে কথা না বললে সেখানকার সমস্যা এবং কীভাবে সেখানে সাংগঠনিক কাজ করা প্রয়োজন, তা বোঝা সম্ভব নয় বলে বৈঠকে অভিযোগ করেন রবীন্দ্রনাথবাবু। পরে তিনি বলেন, “জেলার কর্মীদের মতামত নিয়েই এগোতে হয়। কলকাতায় বসে তা হয় না। জেলায় বড় নেতারা না এলে কর্মীরা উৎসাহী হবেন কী ভাবে!” একই বক্তব্য জলপাইগুড়ির নেতা বিশ্বরঞ্জনবাবুরও। জেলাওয়াড়ি কংগ্রেসকে তার রাজনৈতিক ভিত্তি শক্ত করতে দলীয় বিধায়কদের কাজের মূল্যায়ণও দরকার বলে প্রস্তাব দেন তিনি। |