দু’বছর আগে তাঁর জন্য যে কারণে উদ্বিগ্ন ছিল কেন্দ্রীয় সরকার, এখন সেটাই তাঁর সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের নিরাপত্তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে দিল্লি থেকে নিয়মিত সতর্ক করা হত মহাকরণকে। বুদ্ধদেব সরকারের আর্জি মেনে মমতাকে বোঝাতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। এখন কেন্দ্রের দুই প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী ও দীপা দাশমুন্সি তাঁর সরকারের নিরাপত্তা নিতে অস্বীকার করায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছে মহাকরণ। অগত্যা দিল্লির নর্থ ব্লকে আবেদন জানিয়ে দু’জনকে বোঝানোর আর্জি জানাচ্ছে মমতা সরকার।
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, গত ১৮ জুলাই কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) পার্থসারথি ঘোষ মহাকরণে চিঠি (মেমো নম্বর-এসপিএস-৭০৯৫) লিখে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী এবং নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি কলকাতা পুলিশের কোনও নিরাপত্তা নিচ্ছেন না। বার বার বলা সত্ত্বেও তাঁরা নিরাপত্তা নিতে অস্বীকার করছেন। পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ওই গোয়েন্দা কর্তা রাজ্যকে জানিয়েছেন, দুই মন্ত্রীই রাজ্যের নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটির বিচারে ওয়াই (পজিশনাল) ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পান। সেই অনুযায়ী কলকাতায় থাকার সময় ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রাপ্য তাঁদের। কলকাতার বাইরে কোথাও গেলেও এসকর্ট থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কলকাতা পুলিশের কোনও নিরাপত্তা নেবেন না বলে নিরাপত্তা কর্মীদের ফিরিয়ে দেন দু’জনেই। |
দুই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কী ভাবে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ে অসহযোগিতা করে চলেছেন, তা জানাতে গিয়ে যুগ্ম-অধিকর্তা (গোয়েন্দা) লিখেছেন, রেল প্রতিমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে তাঁর কলকাতায় থাকার কোনও খবর দেওয়া হয় না। অধীরবাবুর সঙ্গে থাকা অফিসার-অন-স্পেশ্যাল ডিউটি হিসেবে কর্মরত কর্তার কাছে জানতে চাইলেও তাঁর গন্তব্য সম্পর্কে কিছু জানানো হয় না। কলকাতা পুলিশকে কিছু অসমর্থিত সূত্র থেকে খবরাখবর সংগ্রহ করতে হয়। নিরাপত্তা রক্ষীরা গেলে জানিয়ে দেওয়া হয়, এখন কলকাতা পুলিশের নিরাপত্তা প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন পড়লে কলকাতা পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন রেল প্রতিমন্ত্রী।
একই ভাবে দীপা দাশমুন্সিও তাঁর কমর্সূচি, গন্তব্য সম্পর্কে কলকাতা পুলিশকে আগাম কিছু জানাতে চান না। তিনিও নিরাপত্তা কর্মীদের ফিরিয়ে দেন।
গোয়েন্দা কর্তার এই চিঠি পেয়ে তৎপর হয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। তাদের এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে চিঠি লিখে পরিস্থিতি জানানো হবে। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যাতে নিরাপত্তা নিতে রাজি হন তা বোঝানোর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য দিল্লির কাছে আর্জি জানানো হবে।
কিন্তু যাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে এই টানাপোড়েন, তাঁরা কী ভাবছেন?
অধীরবাবুর বক্তব্য, “আমি তো সরকারকে সাহায্যই করছি। রাজ্যে এমনিতেই পুলিশের সংখ্যা কম। আমাদের পিছনে এত পুলিশ লাগিয়ে রেখে কী লাভ? রেল পুলিশ তো আমার সঙ্গে থাকে। আবার কলকাতা পুলিশ নিয়ে কী হবে?”
অধীরবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী কি রাজ্য বা কলকাতা পুলিশের নিরাপত্তা নিতেন? নিরাপত্তা যখন আমাকে দেওয়া হবে, তখন কোন সংস্থার নিরাপত্তা নেব, সেটুকু স্বাধীনতা আমাকে দিতেই হবে।”
দীপাদেবী বলেন, “আমি কোনও কালেই নিরাপত্তা নিইনি। কলকাতা বা রাজ্য পুলিশ কারও না। ফলে মন্ত্রী হওয়ার পরে আলাদা করে নিরাপত্তা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।
রাজ্য সরকার বরং আম-জনতার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবুক। কামদুনি থেকে খোরজুনা যা ঘটছে— তাতে কি মনে হচ্ছে আমাদের নিরাপত্তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?”
মন্ত্রীরা যাই বলুন, আসলে কংগ্রেস-তৃণমূলের রাজনৈতিক লড়াইয়ের কারণেই রাজ্যের নিরাপত্তা নিতে তাঁরা অস্বীকার করছেন বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। |