এক দিকে বর্ষা, অন্য দিকে পঞ্চায়েত ভোট। এই দুইয়ের মাঝে পড়ে চার মাস রাজ্যে বেশ কিছু ভাঙন রোধের কাজ এবং সেচের কয়েকটি নতুন প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যায়নি। তাই ভোটপর্ব মিটতেই সেই সমস্ত প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে কাজ শুরুর কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখতে চাইছে রাজ্য সরকার। যাতে বর্ষা মিটতেই কাজে হাত দেওয়া যায়।
এমনিতেই বর্ষার সময় বাঁধ নির্মাণ, নদীর পাড় বাঁধানো, খাল সংস্কার, সেতু নির্মাণ-সহ সমস্ত ধরনের কাজ বন্ধ রাখতে হয়। কিন্তু সেই সব কাজ বন্ধ থাকলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পাশাপাশি নতুন কাজের অনুমোদন এবং অনুমোদিত কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে রাখতে হয়। যাতে বর্ষা মিটলেই সেপ্টেম্বরের শেষ বা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সমস্ত কাজ শুরু করা যায়। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে নতুন কোনও কাজের যেমন অনুমোদন করা যায়নি, তেমনি আবার অনুমোদিত কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু করা সম্ভব হয়নি। তাই পঞ্চায়েত ভোট মিটতেই তড়িঘড়ি সমস্ত কিছু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে জানান সেচ দফতরের আধিকারিকরা।
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় |
সেই জন্যই আগামী ৭ অগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত জেলা পরিদর্শনে যাবেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি জেলায় গিয়ে তিনি সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখান থেকেই জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধের নতুন কী কাজ করতে হবে এবং ইতিমধ্যেই অনুমোদিত কোন কাজটি আগে করতে হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজীববাবু বলেন, “প্রায় ১৩০ কোটি টাকার কাজ অনুমোদন করা হয়ে গিয়েছে। টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু ভোটের জন্য একটিরও টেন্ডার ডাকা হয়নি। ভোটের কাজের জন্য ৩০০ ইঞ্জিনিয়ারকে নেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে প্রতি
জেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” জেলার সেচের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন সেচমন্ত্রী।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, জলপাইগুড়িতে করলা নদী বাঁধের উন্নতিসাধন, হাওড়ায় নদী সুরক্ষার কাজ, লোয়ার বাগজোলা খালের সংস্কার, সুন্দরবনে আয়লার বাঁধ নির্মাণ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ভাঙন রোধের কাজ-সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের টেন্ডার ডাকা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করা হবে। পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে প্রায় ৪৫টি ছোট-বড় সেতুও নির্মাণ করছে সেচ দফতর। তারও বেশ কয়েকটির কাজ অর্ধেক হয়ে রয়েছে। যেমন পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় সেতু তৈরির কাজ। এই রকম বেশ কয়েকটি অর্ধসমাপ্ত সেতুর কাজ ফের শুরু করার পাশাপাশি নতুন সেতু নির্মাণের প্রকল্পও অনুমোদন করে টেন্ডার ডাকা হবে।
সেচমন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে কোথাও তেমন বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গালুডি ব্যারাজ থেকে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার গ্যালন জল ছাড়ার ফলে গোপীবল্লভপুর, দাঁতন, ঘাটাল এলাকার কিছু অংশ জলমগ্ন হয়েছিল। সেই জল নামতেও শুরু করেছে। জল ছাড়ার বিষয়ে রাজ্য প্রতিনিয়ত বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড-সহ সিকিম, ভূটানের বাঁধ ও ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। |