উর্দিপরা, বন্দুকধারী দুই পুলিশের সাহায্যে উপযুক্ত টিকিট ছাড়াই জবরদস্তি ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় উঠেছিল তারা। তার পরে গভীর রাতে আলো নিভিয়ে চারটি সংরক্ষিত কামরায় চালায় বেপরোয়া লুঠপাট। জনা বিশেকের ওই ডাকাত দলটি লুঠপাট চালানোর সময় দুই পুলিশকর্মীর দেখা মেলেনি। দুষ্কৃতীরা নেমে পালানোর পরে যাত্রীরা বার বার চেন টেনে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন। ট্রেন থামেনি। শুক্রবার রাতে হাওড়ামুখী হিমগিরি এক্সপ্রেসে মোগলসরাই ও ঝাঁঝা স্টেশনের মাঝে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি শনিবার দুপুরে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছয়। মোগলসরাইয়ের ডিভিশনার রেলওয়ে ম্যানেজারকে ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চারটি কামরার যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ, গয়না ও মালপত্র মিলিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার জিনিস লুঠ করেছে দুষ্কৃতীরা। রাত দুটো নাগাদ ট্রেনের এস-১ কামরা ছাড়াও লুঠপাট চালানো হয় এস-৪, এস-৬ এবং এস-১১ কামরায়। যাত্রীরা প্রথমে ঝাঁঝা স্টেশনে রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে হাওড়া স্টেশনেও রেল পুলিশের কাছে ফের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। |
এ দিন দুপুরে হিমগিরি এক্সপ্রেস হাওড়ায় পৌঁছলে ডাকাতির ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ দেখান আক্রান্ত যাত্রীরা। তাঁরা জানান, মোগলসরাই স্টেশনে জনা কুড়ি যুবক জোর করে সংরক্ষিত এস-১ কামরায় উঠে পড়ে। তাদের সঙ্গে দু’জন উর্দিপরা রাইফেলধারী পুলিশও ছিল। যাত্রীরা ওই দুই পুলিশকর্মীর কাছে ওই যুবকদের ট্রেন থেকে নামিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশরা তাতে আমল দেননি বলেও অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের বক্তব্য, রাত বাড়তেই দুষ্কৃতীরা নিজমূর্তি ধারণ করে। গভীর রাতে কামরায় যাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়লে আলো নিভিয়ে লুঠপাট শুরু করে ডাকাতেরা। যাত্রীদের সোনার গয়না, টাকাপয়সা ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুঠপাট করা হয়।
বাবা সত্যম দত্তের সঙ্গে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির কাউন্সেলিংয়ে গিয়েছিলেন গড়িয়ার শর্মিষ্ঠা। তার পর হিমগিরি এক্সপ্রেসের এস-১১ কামরায় ফিরছিলেন তাঁরা। শর্মিষ্ঠা জানান, মাধ্যমিক থেকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত তাঁর সমস্ত পরীক্ষায় সার্টিফিকেট লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে ওই দুষ্কৃতীরা। ঢাকুরিয়ার শিবানী খন্না বলেন, “আমরা সাত বার চেন টানলেও ট্রেন থামেনি।” ওই ট্রেনেরই যাত্রী দমদমের অমরনাথ গোস্বামীর কথায়, “যে সময়টায় দুষ্কৃতীরা লুঠপাট চালিয়েছে, তখন ট্রেনের সংরক্ষিত ওই চারটি কামরার কোনও পুলিশ ছিল না। কোনও টিকিট-পরীক্ষকেরও টিকি দেখতে পাওয়া যায়নি।”
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “ডাকাতির ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেলপথে, স্টেশনে এবং ট্রেনের ভিতর আইনশৃঙ্খলা দেখাভাল করার দায়িত্ব রেল পুলিশের, যা রাজ্য সরকারের অধীনে। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারই ওই ডাকাতির ঘটনার তদন্ত করে দেখবে। তা-ও রেল মন্ত্রক বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।” |