বিধানসভা ভোটের ধাক্কা সামলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব ২০টি জেলা পরিষদ আসন জিতলেও অন্য জেলা তা পারল না কেন, সে প্রশ্ন তুললেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব। দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, গৌতমবাবুর প্রশ্নের লক্ষ্য লাল দুর্গ হিসেবে পরিচিত বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা নেতৃত্ব।
সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর চতুর্থ প্রয়াণ দিবসে শনিবার দমদমে এক সভায় গৌতমবাবু বলেন, “উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় বিধানসভা ভোটের নিরিখে সিপিএমের গ্রাফ উপরের দিকে। তৃণমূল সন্ত্রাস আর ভোট গণনায় কারচুপি না করলে আমরা আরও ১০টি আসন জিতে জেলা পরিষদ গঠন করতাম।” তাঁর নেতৃত্বে জেলা সিপিএমের সাফল্যের কথা তুলে ধরার পরেই গৌতমবাবু বলেন, “অন্য জেলায় এই ফল হল না কেন, তার জবাব দিতে হবে। শুধু মমতাকে দোষ দিলে হবে না। শুধু সন্ত্রাসের কথা বললে হবে না।”
সরাসরি নাম না করলেও গৌতমবাবু তাঁর বক্তব্যে এক দিকে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেনের বর্ধমান এবং অন্য দিকে পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা নেতৃত্বকে নিশানা করেছেন বলেই মনে করছেন দলের একাংশ। বর্ধমানে ৭৫টি আসনের মধ্যে সিপিএম ১২টিতে জিতেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৬৭টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট জিতেছে মাত্র ২টি আসন। অথচ, গত বিধানসভা ভোটেও পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৯টি আসনের মধ্যে ৯টি এবং বর্ধমানে ২৫টির মধ্যে ৮টি আসন বামেরা জিতেছিল। সেখানে উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৩টি আসনের মধ্যে বামেরা জিতেছিল মাত্র ৪টি আসন। গৌতমবাবু নিজেও হেরেছিলেন।
পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে সিপিএমের অন্দরে অনেকেই বলছেন, সন্ত্রাসের অভিযোগ তো নতুন নয়। তাঁদের প্রশ্ন, সন্ত্রাস সত্ত্বেও উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা বা নদিয়া যদি আসন বাড়াতে পারে, তা হলে পশ্চিম মেদিনীপুর বা বর্ধমান কেন পারল না? সুভাষবাবুর প্রয়াণ দিবসে গৌতমবাবু সে প্রশ্নকেই সামনে এনে দিলেন। এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। গৌতমবাবুর কথার পরে এ নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়বে বলেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের অভিমত। গৌতমবাবু এ দিন বলেন, “মানুষ মনের জ্বালায় মমতাকে এনেছিল। তার উপরে ওঁর সাদামাটা চেহারা, সাধারণ জীবনযাপন, কথাবার্তা। কিন্তু দু’বছর দেখে বহু মানুষ ওঁর বিরুদ্ধে মুখর হয়েছেন।” দুই ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলা ওই ‘মুখর মানুষের’ একাংশের ভোট বামেদের দিকে ফেরাতে সক্ষম হয়েছে বলেই গৌতমবাবুদের দাবি। কেবল তিনি নন, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী, মৃদুল দে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আর এক সদস্য সুজন চক্রবর্তীও একই কথা মনে করেন। |