মাওবাদীদের কলকাতা সিটি কমিটির সদস্য জয়িতা দাসকে শুক্রবার গ্রেফতার করার পর ওই নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল সম্পর্কে একটি তথ্য জেনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন গোয়েন্দারা।
কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর তদন্তকারীদের দাবি, মাওবাদীদের প্রাক্তন পলিটব্যুরো সদস্য, কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা চণ্ডী সরকার এখন এই রাজ্যে পার্টির যাবতীয় সাংগঠনিক কাজকর্মের সমন্বয় সাধনের দায়িত্বে। জয়িতার কাছ থেকে পার্টির যে-সব গোপন নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তাতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের বক্তব্য। তাঁরা জানিয়েছেন, চণ্ডী সরকারের সঙ্গে জয়িতার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, জয়িতা কৃষ্ণনগর ও অন্যত্র চণ্ডীবাবুর সঙ্গে দেখাও করতেন। কিছু দিন আগে চণ্ডী সরকারের মেয়ের বিয়েতে ভিন রাজ্য থেকেও মাওবাদী নেতারা কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। এখন অবশ্য চণ্ডী সরকার পলাতক এবং তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
তদন্তে এসটিএফ জেনেছে, জঙ্গলমহলে যেখানে আকাশ, বিকাশ, মদন মাহাতো, রঞ্জিত পাল, জয়ন্তদের মতো মাওবাদী অ্যাকশন স্কোয়াডের নেতাদের গ্রেফতার করতে যৌথবাহিনী ও গোয়েন্দারা অভিযান চালাচ্ছেন, সেই সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন শহরাঞ্চলে কয়েকটি গণ সংগঠনের আড়ালে পার্টিকে মজবুত করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন চণ্ডী সরকারের মতো নেতারা। |
সাত বছর জেলে থাকার পর গত বছরের অগস্ট মাসে চণ্ডী সরকার মুক্তি পান। তাঁর বিরুদ্ধে থাকা ছ’টি মামলার মধ্যে তিনটিতে তাঁকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয় এবং অন্য তিনটিতে তাঁর জামিন হয়। ২০০৫-এর ২৩ সেপ্টেম্বর নদিয়ার চাপড়া থেকে চণ্ডীবাবুকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
এসটিএফের এক অফিসার বলেন, “জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এই ধরনের মাওবাদী নেতার উপর সাধারণত নজরদারি তেমন থাকে না। সেই সুযোগেই চণ্ডী সরকার নতুন করে পার্টির কাজে পুরোদস্তুর জড়িয়ে পড়েন। ইদানীং তাঁকে কেন্দ্র করেই এই রাজ্যে মাওবাদীদের যাবতীয় কাজকর্ম হচ্ছে। জয়িতা ধরা না-পড়লে হয়তো এটা জানাই যেত না।”
তদন্তকারীদের দাবি, চণ্ডী সরকার যে-কাজ রাজ্য স্তরে করছেন, সেই কাজই কলকাতা শহর ও আশপাশে করছিলেন জয়িতা। বিভিন্ন গণ সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় সাধন, তাদের আড়ালে পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি, বিভিন্ন কলকারখানা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন তৈরি এবং শহর ও শহরাঞ্চলের সঙ্গে জঙ্গলমহলের যোগসূত্র স্থাপন করা এ সব কাজই করছিলেন জয়িতা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রাক্তন ছাত্রী, ৩০ বছরের তরুণী অবশ্য মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতির নেত্রী বলেই পরিচিত। জয়িতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিজ্ঞান সরকার নোনাডাঙায় উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন এবং পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল।
গত বছরের এপ্রিল মাসে দেবলীনা চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা হলেও জয়িতাকে ধরা হয়নি। অথচ দেবলীনা ও জয়িতা কার্যত একে অপরের ছায়াসঙ্গিনী ছিলেন। মাওবাদী কার্যকলাপে জয়িতার জড়িত থাকার অভিযোগ পুলিশ বহু দিন ধরেই করে আসছে। কিষেণজির দেহ আনতেও দু’জনে এক সঙ্গে মেদিনীপুরে গিয়েছিলেন। তা হলে এখন জয়িতাকে গ্রেফতার করার কী কারণ?
এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “জয়িতা দাস যে মাওবাদীদের কলকাতা সিটি কমিটির সদস্য, তার প্রমাণ এত দিন আমাদের হাতে ছিল না। কিন্তু অন্য দুই মাওবাদী নেতার চিঠি চালাচালি থেকে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। সেই চিঠি আমাদের হাতে আসার পর জয়িতাকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকেনি। তা ছাড়া, গত তিন মাস ধরে জয়িতার কার্যকলাপ খুব বেড়েছিল। তখন আমরা ওঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড়ে উঠেপড়ে লাগি।” শনিবার দুপুরে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক জয়িতাকে ১৬ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। |