মুম্বই বিমানবন্দরের দু’প্রান্তে তাঁরা দু’জন। দেখা হল না, কিন্তু কথা হল। আর তাতেই দার্জিলিং পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের কাছে তাঁর বক্তব্য সরাসরি পৌঁছে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিল্পপতি সম্মেলন ছেড়ে শুক্রবার বিকেলে কলকাতায় ফিরছিলেন মমতা। ঘটনাচক্রে সেই সময় শিন্দেও ছিলেন বিমানবন্দরে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খবর পান, একটু আগেই লাউঞ্জে ঢুকে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুনে সরাসরি মমতাকে ফোন করেন তিনি। ইচ্ছে প্রকাশ করেন সামনাসামনি কথা বলার। কিন্তু সময়ের অভাবে তা সম্ভব হয়নি। তাই ফোনেই মমতা বলেন, “দার্জিলিং পরিস্থিতিটা আপনারা গুরুত্ব দিয়ে দেখুন। গোর্খা আন্দোলনকারীরা উৎসাহিত হয়, এমন কোনও ভূমিকা নেওয়া কেন্দ্রের উচিত নয়। আপনারা কেন বারবার ওদের সঙ্গে দেখা করবেন? কথাটা চিদম্বরমকেও (কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী) জানাবেন।” |
এর পাশাপাশি, দার্জিলিঙের জন্য অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতেও শিন্দেকে অনুরোধ করেন মমতা। বলেন, “আগেই বলেছিলাম, কিন্তু এখনও বাহিনী পেলাম না। দয়া করে দেখুন।” প্রতিবেশী রাজ্য অসমের পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া অঞ্চল যে ভাবে অশান্ত হয়ে উঠেছে, সে সম্পর্কেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। তাঁর বক্তব্য: পশ্চিমবঙ্গের উপর এটাও একটা বাড়তি চাপের কারণ হবে।
দার্জিলিঙের পরিস্থিতি নিয়ে সকাল থেকেই বিরক্ত এবং উত্তেজিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কথার ফাঁকে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও, “সাত দিন ধরে ওদের বলছি ওখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে। আমার কথা শোনেনি। গুরুঙ্গদের সঙ্গে বারবার দেখা করে এত কথাই বা ওরা বলবে কেন? কেন্দ্রের এই ভূমিকাতেই তো বিষয়টা আরও ঘোরালো হয়ে যায়।” পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের তরফে যে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রশাসন এবং দলের সর্বস্তরে তা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এক দিকে দার্জিলিঙে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় একশো দিনের প্রকল্পের কাজ চালানো, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অন্য দিকে, তৃণমূলের রাজনৈতিক ভাবে পথে নেমে প্রতিবাদ সংগঠিত করা দুই কৌশলই নিচ্ছেন মমতা। তাঁর মতে, প্রশাসন এবং জনগণ, উভয়কে সঙ্গে নিয়েই দার্জিলিংকে অশান্ত করার চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাকদা বনবাংলো তৈরি করিয়েছিলেন মমতা। সেই বাংলোয় আগুন লাগার খবর তাঁকে শুধু ক্ষুব্ধই করেনি, রীতিমতো দুঃখ দিয়েছে। মমতার নির্দেশে তৃণমূল নেতা মুকুল রায় ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি পৌঁছে গিয়েছেন। তিনি সাংগঠনিক স্তরে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে পরবর্তী কৌশল ঠিক করবেন। আজ, শনিবার মহাকরণে গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
বাকি ছিল দিল্লিকে সরাসরি নিজেদের কথা জানানোর। শিন্দের ফোনে সহজেই সেই কাজটাও হয়ে গেল মুম্বই বিমানবন্দরেই।
|