সাত দিনে জোড়া নিম্নচাপে বর্ষার ধুন্ধুমার
শ্চিম মেদিনীপুর যদি ক্রিস গেইল হয়, পুরুলিয়া যেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। আর বাঁকুড়া ওয়াটসন বা কোহলি!
গত এক সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ধুন্ধুমার বর্ষণ এ ভাবে গেইল-ধোনি-কোহলিদের মারকাটারি ব্যাটিংকেই মনে পড়িয়ে দিয়েছে বারবার। সৌজন্য সাত দিনে দু’টি নিম্নচাপ। তাদের দাপটে পাঁচ জেলায় বৃষ্টি হয়েছে এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে শতকরা ১০০ ভাগেরও বেশি। বৃষ্টি-ঘাটতি মিটে যাচ্ছে মুর্শিদাবাদ ছাড়া সর্বত্রই।
আলিপুর হাওয়া অফিস বলছে, গত এক সপ্তাহে পশ্চিম মেদিনীপুরে স্বাভাবিকের থেকে ৩৪৮% বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ২৪ পরগনায় স্বাভাবিকের থেকে সেটা যথাক্রমে ২৩২, ১৯৮, ১২৮ এবং ১১২% বেশি। আবহবিদেরা বলছেন, স্থানীয় ভাবে মেঘপুঞ্জ সৃষ্টি হয়ে কোনও এলাকায় অতিবৃষ্টি হতেই পারে। কিন্তু একসঙ্গে পাঁচ-ছ’টি জেলায় এমন অতিবৃষ্টি সচরাচর হয় না।
অতিবর্ষণের নিরিখে ওই পাঁচ জেলা এগিয়ে। পিছিয়ে নেই হাওড়া-হুগলিও। জোরদার বৃষ্টি হয়েছে ওই দু’টি জেলাতেও। চলছিল তো ঘাটতি। দক্ষিণবঙ্গের ওই সাত জেলায় হঠাৎ এই অতিবৃষ্টির কারণ কী?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ শুক্রবার বলেন, “এক সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে দু’-দু’টি নিম্নচাপ সচরাচর তৈরি হয় না। এ বার সেটাই হয়েছে। আর দু’টি নিম্নচাপই তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূলে। তারা ওড়িশা দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকে চলে গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের দিকে। তাদের দাপটে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে রাজ্যের উপকূলবর্তী এবং পশ্চিমাঞ্চলের জেলায়। ঘাটতি মিটিয়ে ফেলেছে ওই সব জেলা। ঘাটতি মিটেছে কলকাতারও।”
জোড়া নিম্নচাপের দাক্ষিণ্যে ভাল বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাতেও। ব্যতিক্রম মুর্শিদাবাদ। সেখানে বৃষ্টি-ঘাটতি এখনও মেটেনি। আবহবিদেরা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গে ভাল বৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিক নিয়মেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বৃষ্টির তীব্রতা এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গিয়েছে। গত সাত দিনের নিরিখে বৃষ্টি-ঘাটতির কবলে পড়েছে মালদহ, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং দুই দিনাজপুর।
সাধারণ ভাবে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দক্ষিণবঙ্গের থেকে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়। এ বার সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে। কেন?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, এ বার জুন থেকে আরবসাগর এবং বঙ্গোপসাগরে এত বেশি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে যে, মধ্য ও পশ্চিম ভারতে অত্যধিক বৃষ্টি হয়েছে। দেশের যে-সব এলাকায় সাধারণত কম বৃষ্টি হয়, এ বার সেখানে অতিবৃষ্টির ফলে বর্ষার দাঁড়িপাল্লাটা প্রায় উল্টে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের তিন শুখা জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর এ বার যে-বৃষ্টি পেয়েছে, তেমনটা আগে কবে হয়েছিল, জানতে নথিপত্র ঘাঁটতে শুরু করেছেন আবহবিদেরা। আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা জানান, দেশের অন্যত্র কম বৃষ্টি হলে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হয়। আর যদি নিম্নচাপের জেরে দেশের অন্যত্র, বিশেষত দক্ষিণবঙ্গ এবং মধ্য ভারত যদি অত্যধিক বৃষ্টি পায়, ভারসাম্য রক্ষায় উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমে যায়। বহু দিন পরে এ বার সেটাই হয়েছে।
জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি তুলনায় কম হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলাতেই ধানচারা রোপণ করা যায়নি। তবে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের রেকর্ড বৃষ্টি কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। খরিফ চাষের খোঁজ নিতে এ দিন মহাকরণে বৈঠকে বসেন কৃষিমন্ত্রী, সেচমন্ত্রী এবং তাঁদের দফতরের কর্তারা। কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, গত এক সপ্তাহের ভাল বৃষ্টিতে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে।
পুরুলিয়ায় গত সপ্তাহে মাত্র ২% জমিতে ধান রোয়া গিয়েছিল। শুক্রবারের খবর, সেখানে ৩৫% জমিতে ধান রোয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে অন্যান্য জেলাতেও। এ বার ৪২ লক্ষ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে রাজ্য সরকার। তার ৪৬% জমিতে ইতিমধ্যে ধান রোয়া হয়ে গিয়েছে। ১৫ অগস্টের মধ্যে আরও দু’-এক দফা ভাল বৃষ্টি হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া দফতর কী বলছে?
গোকুলবাবু জানান, বঙ্গোপসাগরে ফের একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে। তার ফলে রবিবার থেকে ফের ভাল বৃষ্টির আশা করতেই পারে দক্ষিণবঙ্গ। ঘূর্ণাবর্তের নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার উপরেই বৃষ্টির পরিমাণ নির্ভর করবে।
পরপর দু’টি নিম্নচাপের বর্ষণে পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কৃষি দফতর চাইছে, এ বার একই রকম বৃষ্টি হোক নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে। তা হলে সারা রাজ্যের চাষে সামঞ্জস্য আসবে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা উপগ্রহ-চিত্রের দিকে নজর রাখছেন। ঘূর্ণাবর্ত ঠিক কোথায় তৈরি হয়, তার উপরেই নির্ভর করছে ওই সব জেলার বৃষ্টিভাগ্য।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.