মৌসম ভবনের নির্ঘণ্ট মেনেই দেশের মূল ভূখণ্ডে ঢুকল বর্ষা। কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শনিবার কেরলে বর্ষা ঢুকে পড়েছে। সেখানে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এমন পরিস্থিতি বজায় থাকলে দিন সাতেক পরে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার হাজির হওয়ার কথা। অবশ্য বঙ্গোপসাগরে বায়ুপ্রবাহের বদল ঘটলে বর্ষার স্বাভাবিক আগমন থমকে যেতে পারে বলেও আবহবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
আবহাওয়া অফিস সূত্রের খবর, চলতি মরসুমের গোড়া থেকেই বর্ষার স্বাভাবিক আগমনের ইঙ্গিত মিলেছিল। তা বিশ্লেষণ করে মৌসম ভবন জানিয়েছিল, চলতি বছরের ৩ জুন নাগাদ কেরলে বর্ষা ঢুকতে পারে। অনূকূল আবহাওয়া পেয়ে তার দু’দিন আগেই বর্ষা হাজির হল দেশে। যদিও আবহবিজ্ঞানীদের মতে, বর্ষা হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দিনের থেকে দু’-তিন দিন পার্থক্য হলে, তাকে স্বাভাবিক বলেই ধরতে হবে। তবে গত বছর কিন্তু পরিস্থিতি এমনটা ছিল না।
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, গত বছর কেরলে বর্ষা হাজির হয়েছিল ৫ জুন। স্বাভাবিকের চেয়ে চার দিন পরে। তার পর থেকে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়ে ১৮ জুন বর্ষা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছয়। আবহবিদেরা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া অনেকটাই প্রভাব ফেলে। |
গত কয়েক দিন ধরে বঙ্গোপসাগরের যা অবস্থা রয়েছে, তাতে বর্ষার স্বাভাবিক আগমনের হিসেবই মিলছে। মৌসম ভবনের এক আবহবিদ এ দিন বলেন, “দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা হাজির হওয়ার কথা ৮ জুন। কিন্তু আগামী দিন কয়েকের মধ্যে যদি বঙ্গোপসাগরে ফের একটা নিম্নচাপ তৈরি হয়, তা হলে ৮ জুনের আগেই বর্ষা চলে আসতে পারে।”
তবে এমনটা যে হবেই, তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলছেন না আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানান, যাত্রাপথে পরিস্থিতির বদল ঘটলে অনেক সময় বর্ষা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। যেমনটা হয়েছিল গত বছর। মূল ভূখণ্ডে ঢোকার আগে সাগরের উপর দিন ছয়েক টানা একই জায়গায় থমকে ছিল বর্ষা। এ বার দক্ষিণবঙ্গে আসার আগে বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহ বদলে গেলে ফের তেমনটা হতেই পারে। মন্দ হয়ে পড়তে পারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টি-ভাগ্য।
যদিও চলতি বছরে অবশ্য গরমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। যার জেরে মে মাসেও দুঃসহ গরম সইতে হয়নি রাজ্যের বাসিন্দাদের। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, মে মাসের গোড়া থেকেই একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে বিস্তৃত ছিল। তার উপরে ঝাড়খণ্ড ও বিহারে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। নিম্নচাপ অক্ষরেখা ও ঘূর্ণাবর্ত, এই জোড়া ফলায় এ বছর গোটা মে মাস জুড়েই ঝড়-বৃষ্টি মিলেছে। মৌসম ভবনের হিসেবে, চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিক। যা সচরাচর দেখা যায় না বলেই বিজ্ঞানীদের অভিমত। আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা জানান, বৃহস্পতিবার একটি নিম্নচাপ পূর্ব মেদিনীপুর দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকে পড়ায় গোটা দক্ষিণবঙ্গেই ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। ওই নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে গিয়ে ঘূর্ণাবর্তে পরিণত হয়েছে। এখন তা বিহার ও সংলগ্ন এলাকায় থাকার ফলে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের একটা বড় অংশে এ বার মে মাসে গরমের দাপট না থাকলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাংশে গত কয়েক দিন তাপপ্রবাহ চলেছে। এবং এর ফলেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে উত্তর ভারতে টেনে আনার সম্ভাবনা বেড়েছে বলে আবহবিদদের দাবি। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, বছরের এই সময়ে রাজস্থান ও সংলগ্ন এলাকার তাপমাত্রা বাড়লে হাওয়া গরম হয়ে উপরে উঠে যায়। তৈরি হয় নিম্নচাপ। এর ফলেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সহজে উত্তর ভারতে চলে আসতে পারে। মৌসম ভবন সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন ধরে রাজস্থানের একাংশে তাপপ্রবাহ চলেছে। ওই এলাকার অনেক জায়গাতেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন-চার ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বেশি রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাপমাত্রা বেশি থাকার ফলে উত্তর ভারতে মৌসুমি বায়ুকে টেনে আনা সহজ হবে বলে আবহবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। |