ভরসন্ধেয় ভূকম্পে কেঁপে উঠল মহানগর! তবে তার তীব্রতা ছিল সামান্যই। স্থায়িত্ব ছিল মাত্র এক সেকেন্ড। তবে এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল কলকাতার কাছেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনে। শনিবার রাত পর্যন্ত ভূমিকম্পের জেরে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।
কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রক জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে কেঁপে ওঠে কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকা। রিখটার স্কেলে তার তীব্রতা ছিল ৩.৬। ভূমিকম্পটির উৎসস্থল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮ কিলোমিটার গভীরে।
ভরসন্ধেয় এমন কম্পনে অনেকেই চমকে উঠেছেন। কেউ কেউ অবশ্য বুঝতেও পারেননি। চাঁদনি চক এলাকার এক ব্যবসায়ী প্রকাশ দাস বলেন, “দোকানে বসেছিলাম। আচমকা যেন চেয়ারটা নড়ে উঠল। পরে লোকজনের কথা শুনে বুঝলাম, ভূমিকম্প হয়েছে।”
উত্তর-পূর্ব ভারতে ভূকম্পের জেরে কলকাতায় এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য আগেও হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কালে শহরের এত কাছে ভূকম্পের উৎসস্থলের কথা শোনেননি বাসিন্দারা। যদিও ভূতত্ত্ববিদেরা মনে করেন, কলকাতা ও সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভূমিকম্প খুব অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, কলকাতার নীচ দিয়ে সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশের পাবনা পর্যন্ত একটি ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চল রয়েছে। এ দিনের ভূকম্পের উৎসস্থলও সেই বরাবর বলে বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ দাবি করেছেন। |
খড়্গপুর আইআইটি-র ভূকম্পবিশারদ শঙ্করকুমার নাথ জানান, কলকাতার নীচ দিয়ে সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশের পাবনা পর্যন্ত যে ভূকম্পপ্রবণ এলাকা রয়েছে, ভূতত্ত্বের পরিভাষায় তার নাম, ‘ইয়োসিন হিঞ্জ জোন’। ২৫ কিলোমিটার চওড়া এই এলাকার মধ্যে বেশ কয়েকটি ফল্ট অর্থাৎ ভাঁজ রয়েছে। যার ফলে এই এলাকায় মাঝেমধ্যেই ভূকম্প হয়। তবে তার তীব্রতা এতটাই কম যে অনেক সময় তা অনুভূত হয় না।
তবে ইতিহাস বলছে, এই এলাকায় এর আগে ভয়াবহ ভূকম্প হয়েছে। ভূবিজ্ঞানীরা জানান, ১৮৮৫ সালে পাবনায় রিখটার স্কেলে ৬.৮ তীব্রতার ভূকম্প হয়েছিল। ওই ভূমিকম্পে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তার পর থেকে কলকাতার কাছে এই এলাকায় এত তীব্র ভূকম্পের কথা অবশ্য মনে করতে পারছেন না তাঁরা।
ঘটনাচক্রে, এ দিনের ভূকম্পও তীব্রতার নিরিখে তেমন কিছু নয়। তবে কলকাতার ক্ষেত্রে কিন্তু তা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কার কারণ রয়েছে। কেন? শঙ্করবাবুর মতে, কলকাতার সাড়ে সাত কিলোমিটার নীচ পর্যন্ত পুরো পলির স্তর রয়েছে। সাধারণত, ভূকম্পপ্রবণ এলাকায় পলির স্তর থাকলে তা কম্পনকে শুষে নেয় এবং উপরিস্তরে পাঠিয়ে দেয়। সেই কারণেই এ দিন কম মাত্রার ভূকম্পেও কেঁপে উঠেছে কলকাতা। শঙ্করবাবুর আশঙ্কা, এই ভূকম্পপ্রবণ এলাকায় ভবিষ্যতে আরও বেশি তীব্রতার কম্পন হতে পারে। এবং ভূস্তরে পলি থাকার ফলে তার প্রভাবও বেশি পড়বে মহানগরে। |