শহরতলির নয়া ত্রাস নম্বরহীন বাইক, পুলিশ আঁধারেই
কাল সাড়ে ১০টা। গাড়ি চালিয়ে বাসন্তী হাইওয়ে দিয়ে চর্মনগরীর অফিসে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী নবীন অগ্রবাল। আচমকা পাশ থেকে একটি মোটরবাইক তাঁর গাড়ির সামনে এসেই এক ঝটকায় সরে গেল। খুব জোরে ব্রেক কষেছিলেন নবীন। রাস্তার মাঝখানে প্রায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেল তাঁর গাড়ি। আশপাশে গাড়ি না থাকায় সে যাত্রায় বেঁচে গেলেন তিনি। পুলিশে অভিযোগ জানানোর জন্য বাইকটির নম্বর নিতে গিয়ে নবীন সবিস্ময়ে দেখলেন, সেটির নম্বরপ্লেটটি একেবারে সাদা।
মাস দু’য়েক আগে রাজারহাট এলাকায় ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ নিয়ে দুই সিন্ডিকেটে সংঘর্ষ চলছিল। বৃষ্টির মতো পড়ছিল বোমা। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছতেই দু’পক্ষের বাইক-বাহিনী চম্পট দেয়। পুলিশকর্তারা জানান, বাইকগুলির একটিতেও নম্বর ছিল না। তাই ওই দিনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনও ধরা যায়নি।
সম্প্রতি দক্ষিণ শহরতলির ভাঙড় এলাকায় রাতে একটি মোটরবাইকে তল্লাশি চালিয়ে একটি নাইন এমএম পিস্তল পায় পুলিশ। মিনাখাঁ থানা এলাকা থেকে বাসন্তী চুনাখালি এলাকায় ওই পিস্তলটি পাচার করছিল এক দুষ্কৃতী। ওই মোটরবাইকেও কোনও নম্বর লেখা ছিল না।
নম্বরবিহীন এ রকম মোটরবাইক নিয়েই এখন বিব্রত শহরতলির পুলিশ। দক্ষিণ ও উত্তর শহরতলির রাজারহাট-নিউ টাউন, কাশীপুর, ভাঙড়, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকায় পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের নাকের ডগায় অবাধ গতিতে চলাচল করছে নম্বরহীন মোটরবাইক। ঝাঁ-চকচকে আধুনিক বাইকগুলির সওয়ার একাধিক যুবক। পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে ওই বাইকগুলি দেখা যাচ্ছে সোনারপুর, বারুইপুর এবং ই এম বাইপাস সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকাতেও।

দক্ষিণ শহরতলির কাশীপুর এলাকায় এ ভাবেই
অবাধে চলছে নম্বরপ্লেটবিহীন মোটরবাইক। ছবি: সামসুল হুদা
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই সব এলাকায় নির্মাণকাজে ইমারতির দ্রব্য সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত এক শ্রেণির যুবকই এ ধরনের বাইক ব্যবহার করছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ওই সব এলাকায় সিন্ডিকেটগুলির মধ্যে গোলমাল লেগেই রয়েছে। মাঝেমধ্যেই বোমা-গুলিও চলছে। গোলমালের সময়ে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়ে বাইকে চড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বাইকগুলির নম্বর না থাকায় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।”
শুধু সিন্ডিকেটের সংঘর্ষই নয়। বাসন্তী হাইওয়ে-সহ রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় গাড়ি থামিয়ে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছিনতাই করে বাইকে চড়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বাইকের নম্বর না থাকায় ওই তদন্তও এগোয়নি। নম্বরহীন এই বাইকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
আইনজীবীদের বক্তব্য, বাইকে নম্বর না থাকলে পরিবহণ আইনের ১৯২-এ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ ও পরিবহণ দফতর। ওই আইন অনুযায়ী নম্বরহীন কোনও গাড়ি রাস্তায় প্রথম বার ধরা পড়লে জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা হতে পারে। একই ব্যক্তি যদি দ্বিতীয় বার ধরা পড়েন, তা হলে জরিমানার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর এক বছরের জন্য হাজতবাসও হতে পারে।
আইন থাকলেও কেন ধরা যাচ্ছে না ওই বাইকচালকদের?
এ ব্যাপারে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা চপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের জেলায় ওই সব অভিযান চালানোর জন্য মাত্র তিন জন কর্মী রয়েছেন। এ দিয়ে ওই সব এলাকায় ধরপাকড় চালানো সম্ভব নয়।” একই অজুহাত দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিবহণ দফতরের কর্তারাও।
পুলিশকর্তারা অবশ্য নম্বরবিহীন মোটরবাইক ধরার জন্য অভিযান শুরু করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ওই সব থানা এলাকায় নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল ধরার বিশেষ অভিযান করার পরিকল্পনা করছি। কিছু দিনের মধ্যেই আমরা ওই অভিযান শুরু করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.