মুখ্যমন্ত্রী বারবার দাবি করেছেন, “জঙ্গলমহলে একশোয় একশো হয়ে গিয়েছে। এ বার লক্ষ্য দু’শো।” জঙ্গলমহলে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের পরিসংখ্যান অবশ্য একেবারে উল্টো কথা বলছে।
প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরের গোড়া থেকেই জঙ্গলমহলের তিন জেলায় একশো দিনের কাজ প্রকল্পের হাল খারাপ। গত এপ্রিল থেকে জুন, এই তিন মাসে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মাওবাদী প্রভাবিত ২৪টি ব্লকের ১১টিতে কেউই একদিনও কাজ পাননি। এর মধ্যে পুরুলিয়ার ৮টি ব্লক ও বাঁকুড়ার ৩টি ব্লক রয়েছে। সমস্যা মেটাতে তিন জেলার জেলাশাসককেই চিঠি পাঠিয়েছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের যুগ্ম সচিব তথা একশো দিনের কাজ প্রকল্পের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার। কেন এই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ১৯ জুন এক বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন জঙ্গলমহলের জন্য গঠিত ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’-এর চেয়ারম্যান তথা অতিরিক্ত মুখ্যসচিব জয়া দাশগুপ্ত। জয়াদেবী স্টেট প্ল্যানিং বোর্ডের সদস্যও। এই বৈঠকের পরই জঙ্গলমহলের তিন জেলার জেলাশাসককে চিঠি পাঠানো হয়। |
কাজের খতিয়ান
২০১২-১৩ অর্থবর্ষে |
পশ্চিম মেদিনীপুর
• জঙ্গলমহলে কাজের গড় ২৭ দিন
• সার্বিক ভাবে জেলার গড় ৩০ দিন
• জঙ্গলমহলে পঞ্চায়েত পিছু খরচ ৭৩ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা
• অন্যত্র গ্রাম পঞ্চায়েত পিছু খরচ ১ কোটি ২ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা |
বাঁকুড়া
• জঙ্গলমহলে কাজের গড় ৪০ দিন
• সার্বিক ভাবে জেলার গড় ৩৯ দিন
• জঙ্গলমহলে পঞ্চায়েত পিছু খরচ ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা
• অন্যত্র পঞ্চায়েত পিছু খরচ ১ কোটি ২৩ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা |
পুরুলিয়া
• জঙ্গলমহলের কাজের গড় ৪২ দিন
• সার্বিক ভাবে জেলার গড় ৩৯ দিন
• জঙ্গলমহলে পঞ্চায়েত পিছু খরচ ৯৪ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা
• অন্যত্র পঞ্চায়েত পিছু খরচ ৯৯ লক্ষ ৮ হাজার টাকা। |
|
রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, “চলতি আর্থিক বছরের গোড়া থেকে জঙ্গলমহল এলাকায় কাজের পরিস্থিতি খুব সন্তোষজনক নয়। বরং উদ্বেগের। কাজের গতি আরও বাড়াতে হবে। আসলে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা চলছে।” সমস্যাগুলো কী? ওই আধিকারিকের কথায়, “রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক, দুই ধরনের সমস্যাই আছে।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরেছেন। বারবার বলেছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে ১০০ দিনের কাজ ১০০ দিন হয়ে গিয়েছে। আমরা চাই ভাই-বোনেরা ১০০ দিনের প্রকল্পে ২০০ দিন কাজ করুক।’’ জঙ্গলমহলের তিন জেলায় এই প্রকল্পের পরিসংখ্যান যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দাবির সঙ্গে মিলছে না। গত জুনে জঙ্গলমহলের জন্য গঠিত ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’-এর পর্যালোচনা বৈঠকে এই প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তাতে উঠে এসেছে, গত ১ এপ্রিল থেকে ২৪ জুন, এই সময়ের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছেন ১৬ দিন। আর জেলার জঙ্গলমহলের ১১টি ব্লকে মানুষ গড়ে কাজ পেয়েছেন ১৩ দিন। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের ৫টি ব্লকের মধ্যে সিমলাপাল, রাইপুর এবং সারেঙ্গা ব্লকে মানুষ একদিনও কাজ পাননি। জয়পুর এবং রানিবাঁধে গড়ে ১৫ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে। পুরুলিয়ার পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ। এই জেলার জঙ্গলমহলের ৮টি ব্লকের মধ্যে কোনও ব্লকেই মানুষ কাজ পাননি। তবে অন্যত্র কাজ হয়েছে। পুরুলিয়ায় এই তিন মাসে মানুষ কাজ পেয়েছেন গড়ে ৯ দিন।
এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের তিন জেলার জেলাশাসককে পাঠানো চিঠিতে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসনও। ইতিমধ্যে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের নোডাল অফিসার এবং জঙ্গলমহল এলাকার বিডিওদের কাছে। কাজের ক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়াতে বলা হয়েছে। রাজ্য স্তরের এক আধিকারিকের কথায়, “সকলকেই আরও উদ্যোগী হতে হবে। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। তবেই প্রকল্পে গতি আসবে।” |