বছরের শুরুতে একশো দিনের কাজে মজুরির জন্য বরাদ্দ খরচে পিছিয়ে পড়েছে গোটা রাজ্যই। চলতি আর্থিক বর্ষে প্রথম সাড়ে তিন মাসে যে মজুরি বরাদ্দ ধার্য হয়েছিল তার এক-তৃতীংয়াশের বেশি খরচ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের যুগ্ম সচিব তথা একশো দিনের কাজ প্রকল্পের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকারও।
সম্প্রতি দিব্যেন্দুবাবু তাঁর ব্লগে জানিয়েছেন, মজুরি বরাদ্দ ব্যবহারের ব্যাপারে এ বার একটি নিম্নমুখী ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে। এই মাসগুলিতে প্রশাসনের বড় অংশ পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকাই সম্ভবত এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ বলে তাঁর মত। অর্থবর্ষের শুরুর এই কয়েক মাসে মজুরি বরাদ্দের মাত্র ৩৩.৬৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে।
একশো দিনের প্রকল্পের ‘ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম’ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে ১৩ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে সব থেকে বেশি মজুরি বরাদ্দ নির্ধারিত ছিল বর্ধমানের জন্য। প্রায় সাড়ে ৮২ লক্ষ টাকা ছিল এই বাবদ। বর্ধমান ছাড়া বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও মুর্শিদাবাদ৪০ লক্ষের বেশি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এই সব জেলাতেও। বাকিদের মধ্যে তিন জেলায় ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা, চার জেলার জন্য ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা, পাঁচ জেলায় ১০-২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। দশ লক্ষেরও কম টাকা ধার্য ছিল কোচবিহার, শিলিগুড়ি (এমপি) এবং জলপাইগুড়ির জন্য। |
ব্যবহৃত
মজুরি বরাদ্দ |
|
খরচ |
• কোচবিহার |
৯৭.৭৯ |
• বর্ধমান |
৬৬.৪ |
• জলপাইগুড়ি |
৫৩.৯৩ |
• উত্তর ২৪ পরগনা |
৫২.৬৮ |
• পূর্ব মেদিনীপুর |
৫০.৫৬ |
• মালদহ |
৪৮.৩৩ |
• বীরভূম |
৪০.৬৩ |
• শিলিগুড়ি (এমপি) |
৩৪.৩৪ |
• হুগলি |
৩৩.৭৭ |
• হাওড়া |
৩৩.৭০ |
• পশ্চিম মেদিনীপুর |
৩২.১৭ |
• দক্ষিণ ২৪ পরগনা |
২৫.৪৮ |
• দক্ষিণ দিনাজপুর |
১৭.৫২ |
• নদিয়া |
১২.১০ |
• উত্তর দিনাজপুর |
৮.২০ |
• মুর্শিদাবাদ |
৬.৬৭ |
• বাঁকুড়া |
৫.৭৯ |
• জিটিএ |
৩.৮৪ |
• পুরুলিয়া |
১.২০ |
* শতাংশের হিসেবে |
|
যে চার জেলায় সব থেকে বেশি বরাদ্দ ছিল তাদের মধ্যে টাকা খরচের ব্যাপারে সব থেকে পিছিয়ে মুর্শিদাবাদ। তারা মাত্র ৬.৬৭ শতাংশ টাকা ব্যবহার করেছে। সব থেকে বেশি টাকা খরচ করেছে বর্ধমান (৬৬.৪%)। এত বেশি বরাদ্দ সত্ত্বেও দুই-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি টাকা খরচ করে বর্ধমান আশার আলো দেখিয়েছে বলে মনে করছেন একশো দিনের কাজ প্রকল্পের কমিশনার দিব্যেন্দুবাবু। সারা রাজ্যে শতাংশের হিসেবে অবশ্য বরাদ্দ ব্যবহারে শীর্ষে কোচবিহার। তারা প্রায় ৯৮ শতাংশ টাকা খরচ করেছে। তবে তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ৮ লক্ষ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা।
জিটিএ এবং শিলিগুড়ি (এমপি) এলাকা-সহ মোট ১৩ জেলা অর্ধেক বরাদ্দও কাজে লাগাতে পারেনি এই পর্যায়ে। তার মধ্যে দশ শতাংশেরও কম টাকা খরচ হয়েছে মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, জিটিএ এবং উত্তর দিনাজপুরে। পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে পরিচিত পুরুলিয়ায় ব্যবহার হয়েছে মাত্র ১.২ শতাংশ টাকা, যা রাজ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন।
পঞ্চায়েত নির্বাচন না থাকা সত্ত্বেও জিটিএ এলাকায় মোট বরাদ্দের মাত্র ৩.৮৪ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। অর্থাৎ, টাকা খরচ কম হওয়ার পিছনে পঞ্চায়েত ভোটই যে একমাত্র কারণ নয়, তা জিটিএ-র দিকে তাকালেই পরিষ্কার হয়। বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দিব্যেন্দুবাবুও। একশো দিনের কাজে গত অর্থবর্ষের মতো গতি বজায় রাখতে হলে ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরে সমস্ত জেলাকে বরাদ্দ ব্যবহারের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে বলেও ব্লগে জানিয়েছেন দিব্যেন্দুবাবু। |