|
|
|
|
ইন্দিরা আবাস যোজনা |
চলতি বছরের বরাদ্দ পেতে খরচে জোর
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
চকচকে মেডেলটা এখনও জ্বলজ্বল করছে। আর সে দিকে চোখ গেলেই অস্বস্তি বাড়ছে প্রশাসনিক কর্তাদের।
পুরস্কার পাওয়ার পর কাজে গতি বাড়ার কথা। কিন্তু ইন্দিরা আবাস যোজনার ক্ষেত্রে পশ্চিম মেদিনীপুরে তার উল্টোটাই ঘটেছে। অবস্থা এমনই, যে গত আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে একটি টাকাও পায়নি জেলা। প্রশাসনিক কর্তাদের কপালের ভাঁজ বাড়িয়ে চলতি বছরেও প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
২০০৮-০৯ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনায় রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিল জেলা। সাফল্যের কারণে মিলেছিল পুরস্কারও। ঠিক তার পরের বছর থেকেই এই প্রকল্প ধাক্কা খেতে শুরু করে। ২০১০-১১ আর্থিক বছরে প্রকল্পের জন্য আসা প্রথম কিস্তির টাকাই (প্রকল্প ব্যয়ের অর্ধেক বরাদ্দ আসে প্রথম কিস্তিতে) খরচ করতে পারেনি জেলা পরিষদ। ফলে দ্বিতীয় ধাপের টাকাও মেলেনি। ২০১১-১২ আর্থিক বছরেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। প্রথম কিস্তির টাকা খরচ করতে ব্যর্থ হয় জেলা পরিষদ। ফলে দ্বিতীয় ধাপের টাকা মেলেনি। পরপর দু’বছর প্রথম কিস্তির টাকা খরচ করতে না পারায় ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের বরাদ্দই মেলেনি! ফলে যাঁদের মাথায় ছাদের ব্যবস্থা করতে সরকার এই প্রকল্প চালু করেছিল সেই দরিদ্র সাধারণ মানুষেরাই বঞ্চিত হচ্ছেন।। চলতি বছরেও কী বরাদ্দ মিলবে? পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “পড়ে থাকা অর্থ দ্রুত গতিতে খরচের কাজ চলছে। জেলা যাতে প্রাপ্য বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে সমস্ত টাকা খরচের হিসাব দিতে পারব বলে আমাদের আশা।”
২০১০-১১ ও ২০১১-১২ আর্থিক বছরে জেলা ইন্দিরা আবাস যোজনায় পেয়েছিল ১১৯ কোটি ৪৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭১ শতাংশ অর্থ। এই প্রকল্পে আগে বাড়ি তৈরির জন্য সাড়ে ৪৮ হাজার টাকা করে দেওয়া হত। প্রথম কিস্তিতে দেওয়া হত ২৪ হাজার ২২৫ টাকা। সেই টাকায় কাজ করার পর দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হত। কিন্তু কেন টাকা খরচ করা যায়নি? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উপভোক্তা চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি ছিল। এমন কিছু ব্যক্তির নাম উপভোক্তার তালিকায় ছিল যাঁদের জমিই নেই। ফলে সমস্যা দেখা দেয়। আবার প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে অনেকে প্রথম কিস্তির টাকা নিয়ে বাড়ি না বানিয়ে অন্য কাজেও খরচ করে। ফলে সম্পূর্ণ টাকা খরচের হিসাব না দেওয়ার কারণে তারা দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পায়নি। ফলে অনেকের বাড়ির কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। এবার সেই সব পরিবারগুলিকে টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। প্রশাসনিক কর্তাদের আশা, মাস দুয়েকের মধ্যেই সমস্ত টাকা খরচ করা সম্ভব হবে। ফলে চলতি আর্থিক বছরে বরাদ্দও মিলবে। এই কারণে জেলা পরিষদ ইতিমধ্যেই দু’টি উপভোক্তার তালিকাও তৈরি করে ফেলেছে। প্রথম তালিকায় ১৫৮০৫ জন উপভোক্তার নাম রয়েছে। দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছেন আরও ৩৩০৮ জন। বরাদ্দ মিললে এদের সবাইকে বাড়ি নির্মাণের জন্য অর্থ দেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ ব্যবহারে উদাসীনতা থাকায় সরকারও এবার বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে নতুন শর্ত চাপিয়েছে। আগে বাড়ি নির্মাণের জন্য দু’দফায় সাড়ে ৪৮ হাজার টাকা করে দেওয়া হত। প্রথম দফার ২৪ হাজার ২২৫ টাকায় বাড়ি তৈরির কাজের পর ব্লক আধিকারিকেরা পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিলে তবেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মিলত। এ বার থেকে তিন কিস্তিতে টাকা দেওয়া হবে। এবার বাড়ি তৈরির জন্য বরাদ্দও সাড়ে ৪৮ হাজার টাকা থেকে হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। তবে উপভোক্তাকে প্রথমে নিজ উদ্যোগে বাড়ির ভিত তৈরির জন্য গর্ত খুঁড়তে হবে। সেই ছবি আওয়া সফট নামে সফটওয়্যারে আপলোড করতে হবে। তবেই প্রথম কিস্তির টাকা মিলবে। সেই টাকায় ভিত তৈরির পাশাপাশি লিনটন তৈরি পর্যন্ত এগোতে হবে। ফের তার ছবি তুলে সফটওয়্যারে আপলোড করলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মিলবে। আর বাড়ি শেষ হলে সেই ছবি আপলোড করার পর মিলবে তৃতীয় কিস্তির টাকা। টাকা দেওয়া হবে উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। শুধু এটাই নয়, উপভোক্তাদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সরকার টাকা দিলেও কিভাবে নিজের বাড়ি তৈরি করতে হবে তা জানানো হবে প্রশিক্ষণে। তার জন্য নিয়োগ করা হবে ‘কোয়ালিটি মনিটর’ নামে অস্থায়ী কর্মীও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত, প্রকল্পকে সফলভাবে রূপায়ণ করার লক্ষ্যেই পদ্ধতির এই পরিবর্তন।
|
পুরনো খবর: বরাদ্দ টাকা পড়ে, লোধাদের রাত কাটে ছিটেবেড়ার ঘরে |
|
|
|
|
|