অবশেষে টেলিকম ক্ষেত্রের জন্য ইউনিফায়েড (সংযুক্ত) লাইসেন্স নীতি ঘোষণা করল কেন্দ্র।
অনেক দিন ধরেই এই নীতি ঘোষণার দিকে সাগ্রহে তাকিয়েছিল টেলিকম শিল্পমহল। কারণ, এক বার এই নীতি কার্যকর হলে, আলাদা-আলাদা পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রতি বার আর পৃথক ভাবে লাইসেন্স (ছাড়পত্র) নিতে হবে না তাদের। বরং এক বার লাইসেন্স হাতে পেলেই দেওয়া যাবে বিভিন্ন ধরনের (টেলিকম, ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট-টিভি ইত্যাদি) পরিষেবা। ব্যবহার করা যাবে একাধিক প্রযুক্তিও (জিএসএম বা সিডিএমএ)। শুধু প্রত্যেকটির জন্য আলাদা করে স্পেকট্রাম কিনতে হবে তাদের। একই সঙ্গে খুলে যাবে একে অন্যের স্পেকট্রাম ব্যবহারের পথও।
সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের মতে, এর ফলে টেলিকম ক্ষেত্রে আরও মসৃণ হবে বিদেশি লগ্নি আসার পথ। দেশে উন্নততর পরিষেবা দেওয়াও সম্ভব হবে সংস্থাগুলির পক্ষে।
শুক্রবার রাজধানীতে টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিব্বল এবং দফতরের সচিব এম এফ ফারুকি প্রথমে বলেন, নয়া টেলিকম লাইসেন্স নীতি চূড়ান্ত হয়ে যাবে দু’এক দিনের মধ্যেই। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতেই দেখা গেল এ দিনই ইউনিফায়েড লাইসেন্স নীতি ঘোষণা করে দিল কেন্দ্র। যার মূল বিষয়গুলি হল:
• এ বার থেকে আলাদা-আলাদা পরিষেবা দিতে কিংবা ভিন্ন-ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রতি বার আলাদা করে লাইসেন্স নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এক বার ইউনিফায়েড লাইসেন্স নিলেই সব রকম (টেলিকম ও ইন্টারনেট) পরিষেবা দেওয়ার ছাড়পত্র মিলবে।
• একে-অন্যের স্পেকট্রাম ব্যবহারের সুবিধা পাওয়ায় উন্নততর রোমিং পরিষেবা দিতে পারবে সংস্থাগুলি। তবে যে সার্কেলে স্পেকট্রাম হাতে নেই, সেখানে নতুন গ্রাহককে সংযোগ দিতে পারবে না কোনও সংস্থা।
• এখনকার অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হলেই নয়া ইউনিফায়েড লাইসেন্সের আবেদন করতে হবে।
• প্রাথমিক ভাবে নয়া লাইসেন্সের মেয়াদ হবে ২০ বছর। তবে তা শেষ হলে ফের ১০ বছরের জন্য নবীকরণ করা যাবে।
• কড়াকড়ি করা হচ্ছে একই সার্কেলে একই পরিষেবা দেওয়া দু’টি সংস্থায় একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য অংশীদারি রাখার উপরেও। যেমন, এখন ভারতী-এয়ারটেলে ৪% শেয়ার রয়েছে ভোডাফোনের। রিলায়্যান্স টেলিকমে অংশীদারি রয়েছে আর কমেরও। আগে এ নিয়ে সমস্যা না-থাকলেও, এ বার এ বিষয়ে তারা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
• ইউনিফায়েড লাইসেন্স পেতে এক লপ্তে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত উপুড় করতে হতে পারে সংস্থাগুলিকে। তবে এসটিডি বা ইন্টারনেট পরিষেবার মতো ব্যবসার জন্য আলাদা করে এককালীন টাকা গুনতে হবে। লাইসেন্স পেতে আবেদনের জন্য ২২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্ক গ্যারান্টিও দিতে হবে।
শিল্পমহলের অনেকেরই মতে, কেন্দ্রের এই ঘোষণা আরও প্রশস্ত করবে টেলিকম শিল্পে লগ্নি আসার পথ। বিশেষত বিদেশি বিনিয়োগের। এমনিতেই এই ক্ষেত্রে সম্প্রতি ১০০% বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দিয়েছে কেন্দ্র। তার উপর এই নয়া লাইসেন্স নীতি আরও ভরসা জোগাবে বিদেশি লগ্নিকারীদের। এর কারণ হিসেবে তাদের যুক্তি, আগে প্রতি পরিষেবা, প্রতি প্রযুক্তির জন্য আলাদা ভাবে লাইসেন্স দরকার হওয়ায়, সেই অনিশ্চয়তার জন্য টাকা ঢালতে অনেক সময়ই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন না বিদেশি লগ্নিকারীরা। কিন্তু নয়া জমানায় এক বার লাইসেন্স পেলেই নিশ্চিন্ত। তাই তখন নয়া পরিষেবার জন্য স্পেকট্রাম কেনা বা প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরিতে লগ্নি করতে পিছপা হবে না তারা। |