রাজ্যে বড় শিল্পে লগ্নি আকর্ষণের প্রয়াসের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশেও জোর দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর প্রথম ধাপে সরকারি-বেসরকারি কারখানায় বিবিধ সামগ্রীর প্রয়োজন মেটাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তাঁর সরকার। চলতি বছরের মধ্যেই যা রূপায়ণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
কী ভাবে পরিকল্পনাটি কার্যকর হবে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মহাকরণের এক মুখপাত্র জানান, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অধীনস্থ বিভিন্ন বড় মাপের কারখানা এবং বেসরকারি নানা শিল্পে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় হরেক যন্ত্রাংশ দরকার হয়। নাট-বল্টু, স্প্রিং থেকে শুরু করে গিয়ার-বক্স বা ইনসুলেটর পর্যন্ত। আবার কারখানা-কর্মীদের জন্য লাগে পোশাক, মোজা-জুতো-বেল্ট-টুপি ইত্যাদি। কারখানার অফিসে ফাইল-পিন-স্টেপলার প্রভৃতি ‘স্টেশনারি’র যেমন হামেশা চাহিদা, তেমন বালতি-মগ-বাল্ব-টিউবলাইটের মতো নানা জিনিসের দরকার প্রায় সব সময় থাকে। সংস্থাগুলো এখন এ সব মূলত বাইরে থেকে কেনে। এ বার রাজ্যের অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসংস্থাই যাতে তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারে, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প দফতর সে চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র।
এখানে সরকার কী ভূমিকা নেবে?
মহাকরণ-সূত্রের ব্যাখ্যা: সরকার ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। “অর্থাৎ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থের ভূমিকা পালন করবে।” বলেন মুখপাত্র। তাঁর দাবি: পরিকল্পনাটি নিছক খাতায়-কলমে আটকে নেই, বাস্তবায়নেও তাঁরা ক’ধাপ এগিয়েছেন। কী রকম?
মহাকরণের খবর: এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগে ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে। যেমন মাঝ-জুলাইয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিল্পসংস্থার সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের বৈঠক হয়, যেখানে রাজ্যের নতুন পরিকল্পনাটি তুলে ধরেন ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প দফতরের কর্তারা। দ্বিতীয় বৈঠকটি হয়েছে জুলাইয়ের শেষে, চলেছে দু’দিন ধরে। ডিভিসি, অয়েল ইন্ডিয়া, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, হ্যাল, গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স, পূর্ব রেল, কেএমডিএ, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের মতো বিভিন্ন সরকারি ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনায় বসেন ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পোদ্যোগীরা। বিষয়টা বোঝাতে গিয়ে মুখপাত্র বলেন, “ধরা যাক, জাহাজ কারখানায় নির্দিষ্ট মাপের নাট-বল্টু দরকার। যে ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্পসংস্থা তা বানায়, তারা শিপবিল্ডার্স-কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি বসল। কী ভাবে বরাত আসতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করল।”
এ ভাবে সরকারি মধ্যস্থতায় ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের বিভিন্ন উৎপাদক সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে এক দফা কথাবার্তা সেরে ফেলেছে। রাজ্যের ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহ জানান, পরবর্তী ধাপে আগ্রহী বৃহৎ সংস্থাগুলোর অফিসে গিয়ে বৈঠক করবেন ক্ষুদ্র-শিল্পোদ্যোগীরা। ক্রেতা কী ধরনের পণ্য চায়, তার গুণমান কেমন হওয়া প্রয়োজন, দর কত মিলবে, ইত্যাদি বিষয়ে সেখানে বিস্তারিত কথা হবে। ক্ষুদ্রশিল্প-মালিকদের তরফে জানিয়ে দিতে হবে, প্রয়োজনীয় সব শর্ত মেনে তাঁরা ‘সাপ্লাই’ দিতে পারবেন কি না। আর এই পর্ব মিটলে ক্ষুদ্রসংস্থার উৎপাদনক্ষমতা যাচাই করতে তাদের কারখানা পরিদর্শন করবেন সংশ্লিষ্ট বড় শিল্পের প্রতিনিধিরা। সব ঠিক থাকলে দু’পক্ষে বরাত-চুক্তি সম্পাদিত হবে।
এবং পুরো প্রক্রিয়াটি যাতে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করে ফেলা যায়, সরকার সেই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। রাজীববাবু বলেন, “চাহিদা অনুযায়ী ছোট সংস্থাগুলোকে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে হবে। দরকারে পণ্যের গুণমান বৃদ্ধি করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসাতে হবে। এ জন্য আর্থিক সহায়তা লাগলেও রাজ্য মধ্যস্থতা করবে।” যে কারণে ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন ব্যাঙ্ক (সিডবি) এবং বেশ ক’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে উদ্যোগে সামিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সচিবের আশা, তাঁদের পরিকল্পনা সফল হলে এ রাজ্যেই বহু কোটি টাকার ব্যবসার মুখ দেখতে পাবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীরা। |