দার্জিলিঙের সর্বনাশ, তো বিশাখাপত্তনমের পৌষ মাস! হালচাল দেখে পুজোর ছুটির বেড়ানোর ছকটা আমূল বদলেই ফেলছেন সল্টলেকের পৌলমী চট্টোপাধ্যায়। এ যাত্রা হিমালয়-দর্শন শিকেয় তুলে বঙ্গোপসাগরে সরে যাচ্ছেন তিনি।
হিন্দুস্থান পার্কের প্রশান্ত গুহ অবশ্য অত সহজে পাহাড় থেকে মুখ ফেরাতে রাজি নন। তবে পুজোর ছুটিতে সপরিবার উটকো ঝঞ্ঝাট থেকে দূরে থাকতে বিস্তর গাঁটের কড়ি গচ্চা দিচ্ছেন। প্রথমে ঠিক করেছিলেন শিলিগুড়ি থেকে ফুন্টশোলিং হয়ে ভুটানে ঢুকবেন। রুট বদলে এখন তাঁরা কলকাতা থেকে সটান পারো উড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
মোর্চার অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণার সঙ্গে-সঙ্গেই বাঙালির পুজোর ছুটির পরিকল্পনা নিয়েও টানাপোড়েনের সূত্রপাত। রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম বা বন উন্নয়ন নিগমের বুকিং অফিসের ফোনও ঘন ঘন বাজছে। বন উন্নয়ন নিগমের এক কর্তা শুক্রবার আফসোস করছিলেন, “উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ের পরে এ বার আমাদের দার্জিলিং-ডুয়ার্সের ‘স্পট’ নিয়ে আগ্রহ ছিল দেখার মতো। গত ৪ জুলাই পুজোর বুকিং শুরুর পরে প্রথম দিনেই শতকরা ৮০-৯০ ভাগ বুকিং সারা হয়ে গিয়েছিল।” এখন হুট করে একটা অনিশ্চয়তার আবহ! পুজোয় দার্জিলিং ‘ঠান্ডা’ থাকবে কি না, প্রশ্নটাই লোককে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
এমন নয় যে পুজোর বুকিং এখনই বাতিল করতে সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গত দেড়-দু’বছরে দার্জিলিং পাহাড়ের নিরুপদ্রব হাসি মুখ দেখার পরে সংশয়ের পুরনো কাঁটাও কিন্তু উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। পর্যটন উন্নয়ন নিগমের এমডি বিশ্বদেব দাশগুপ্ত জানালেন, অগস্ট-সেপ্টেম্বরেও কিছু সফর বাতিল হয়েছে। তাঁর কথায়, “এ সময়টা পর্যটনের অফ-সিজন হলেও এখন বছরভর দার্জিলিঙে ভিড় লেগেই থাকে। গুরুঙ্গদের বন্ধ ঘোষণার পরে দার্জিলিং-কালিম্পং-কার্শিয়াঙে অগস্ট মাসের বেশ কিছু সফর বাতিল হয়েছে।” দেশে-বিদেশে সফরের আয়োজক ক্লাব সেভেন-এর আধিকরিক জয়িতা পালের আফসোস “যাঁরা বেড়াতে যাবেন, তাঁরা চাইলে তো প্ল্যানটা বদলাতে পারেন। কিন্তু দার্জিলিং-ডুয়ার্সে পর্যটন যাঁদের জীবিকা তাঁদের জন্য সুসংবাদ নয়।” দার্জিলিংয়ে লাডেনলা রোডে পর্যটকদের গাড়ি সরবরাহকারী একটি সংস্থার কর্তা সঞ্জয় মিমানির গলাতেও বিষাদের ছোঁয়া, “কী যে সব হচ্ছে! মাঝে খানিকটা খারাপ সময়ের পরে গত দু’বছরে ব্যবসা দারুণ জমেছিল। এখন দুশ্চিন্তার মেঘ ভাল লাগছে না!” তবে সঞ্জয়বাবু জোর গলায় বলছেন, “পর্যটকদের বিরক্ত করা দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্য নয়। পুজো আসতে আসতে নির্ঘাত সব ঠিক হয়ে যাবে।”
শিলিগুড়ির ইস্টউইন্ড হলিডে ট্যুরস-এর কর্তা সম্রাট সান্যাল বা হেল্প ট্যুরিজম-এর অসিত বসুরাও আশাবাদী, সমস্যার উদয় হলেও তা কখনওই দীর্ঘমেয়াদি হবে না। দেশ দুনিয়া-র নন্দিনী সেন বলছেন, “লোকে এখন একটু সতর্ক হয়ে উত্তরবঙ্গ বেড়ানোর বুকিং করছেন। বড়জোর, সফর বাতিল করতে হলে হোটেল বুকিং বাতিলের নিয়ম জানতে চাইছেন। উত্তরবঙ্গ-সিকিম নিয়ে আগ্রহ কিন্তু কমেনি।”
অসিতবাবুর বক্তব্য, “দার্জিলিংয়ে সমস্যা নতুন নয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আগের থেকে ভাল। সব পক্ষের রাজনৈতিক নেতারাই সংবেদনশীল হয়েছেন। পর্যটকদের অসুবিধা হোক কেউই চান না।” নন্দিনীদেবীও বললেন, “আগেও কিন্তু জাতীয় সড়কে পর্যটকদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। সেবক থেকে রংপো পেরিয়ে সিকিমে ঢুকতে বা সিকিম থেকে ফিরতে মনে হয় না কারও সমস্যা হবে।”
এই দোলাচলেও এ দিনই পুজোয় সান্দাকফু সফরের বুকিং সেরে ফেললেন মুদিয়ালির অমৃতা মুখোপাধ্যায়। ওঁরা স্বামী-স্ত্রী এবং কালীঘাটের একটি বন্ধু দম্পতি মিলে জমিয়ে সাত দিন বেড়ানোর প্ল্যান! অমৃতার কথায়, “পাহাড়ে আজ পর্যন্ত আমাদের সমস্যা হয়নি। আর উত্তরবঙ্গের হিমালয় ছাড়া কোথাও ঘুরতেই ভাল লাগে না!” |