দলীয় কর্মীকে মারধরের প্রতিবাদে ও মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে আজ, শনিবার ১২ ঘণ্টা কড়িধ্যায় বনধ ডেকেছে বিজেপি। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার দুপুরে উজ্জ্বল কাহার নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিউড়ি বড়বাগান এলাকায় তাঁর বাড়ি। মূল অভিযুক্ত বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য ঘটনার পর থেকে পলাতক। তাঁর খোঁজ চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ পেশায় চা ব্যবসায়ী সাগর সেন নামে বিজেপির ওই কর্মীকে তাঁর দোকান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তথা কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের গত বারের বিদায়ী উপপ্রধান বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য বিজেপির অভিযোগ মানতে চায়নি। মারধরে জখম সাগরবাবুকে শুক্রবার সিউড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
গত বার কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৮ ও তৃণমূল ৫টি আসন পায়। প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন তৃণমূলের প্রবীর ধর। উপপ্রধান হয়েছিলেন কংগ্রেসের বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য। এ বার কড়িধ্যার আসন বেড়ে ১৫ হয়েছে। জেলার অন্যান্য জায়গার মতো এখানে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ রয়েছে। এ বারের নির্বাচনে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী তিনটি ও অপর গোষ্ঠী নির্দল-সহ তিনটি আসন পায়। কংগ্রেস, বিজেপি ও সিপিএম তিনটি করে আসন পায়।
বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের দাবি, “তৃণমূল ও কংগ্রেস যে কোনও উপায়ে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের চেষ্টা করছে। সে জন্য বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নানা ভাবে প্রলোভন ও চাপ দিতে থাকে তারা। ভোটের আগে বিজেপির হয়ে প্রচার করতে সাগরবাবুকে বারণও করেছিল বিদ্যুৎবাবুরা। কিন্তু তাঁদের কথা না শোনায় বৃহস্পতিবার দোকান থেকে তুলে নিয়ে রড ও চেন দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে স্থানীয় বড়মুলো সরকারি খামারের কাছে ফেলে দেয় তারা। বাসিন্দাদের একাংশ স্থানীয় একটি সরকারি খামারের কাছ থেকে সাগরবাবুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থা এতটাই জটিল যে, তাঁকে বর্ধমানে রেফার করা হল।” ওই দিনের ঘটনার জেরে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা দুপুর থেকে সিউড়ির কড়িধ্যায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল। টায়ারও পুড়িয়েছিল তারা। পরে পুলিশ গিয়ে বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। ওই দিনই সিউড়ি থানায় বিদ্যুৎবাবু-সহ কয়েক জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বিজেপির তরফ থেকে।
বিজেপির জেলা সভাপতি বলেন, “বৃহস্পতিবার পুলিশ কথা দিয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মূল অভিযুক্ত বিদ্যুৎ ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু পুলিশ তা না পারায় শুক্রবার বিকেল তিনটের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আজ শনিবার কড়িধ্যায় ১২ ঘণ্টা বনধ (সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) করা হবে। তার পরেও যদি পুলিশ মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে না পারে, তা হলে এর পর থানা ঘেরাও, সিউড়ি এমনকী জেলা বন্ধের ডাক দেওয়া হবে।” এদিকে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় চেষ্টা করেও বিদ্যুৎবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। যদিও ওই দিন ঘটনার পরে কংগ্রেসের সিউড়ি ১ ব্লক সভাপতি অসীম মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘একেবারেই পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে ঘঠনাটি ঘটেছে’ বলে দাবি করেছিলেন। একই দাবি করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রবীর ধরও।
তবে এই ঘটনাকে পারিবারিক বিবাদ বলে মানতে নারাজ সাগর সেনের বাবা তারাপদবাবু। তিনি বলেন, “শুধু রাজনৈতিক ও ক্ষমতা লোভের জন্য কেউ এমন নৃশংস হতে পারে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।” মা মায়াদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার একমাত্র ছেলেকে যারা এভাবে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
|
পুরনো খবর: বিজেপি কর্মীকে মার |