‘একে একে নিভিছে দেউটি’ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়ত সমিতি এবং জেলা পরিষদে বাম আধিপত্য খর্ব হয়েছে। জেলা পরিষদের ফলাফলের নিরিখে, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বাম ‘দুর্গ’ হিসেবে খ্যাত ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রটি। ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় পড়ে ময়ূরেশ্বর ১ ও ২ ব্লক।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ময়ূরেশ্বর ১ নম্বর পঞ্চায়ত সমতি বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল-বিজেপি জোট। ওই সময় ৯টি পঞ্চায়তের মধ্যে ৬টি পঞ্চায়তের ক্ষমতা দখল করেছিল সিপিএম বিরোধী জোট। সিপিএমের হাতে ছিল তিনটি পঞ্চায়তের নিয়ন্ত্রণ। জেলা পরিষদের দু’টি আসনের মধ্যে একটি কংগ্রেসের এবং একটি সিপিআই দখল করে। এ বারের নির্বাচনে তৃণমূল একক ভাবে জেলা পরিষদের দু’টি আসন-সহ পঞ্চায়ত সমিতিতে আধিপত্য কায়েম করেছে। সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে আরও তিনটি পঞ্চায়তের ক্ষমতা। সিপিএম অবশ্য তৃণমূলের কাছ থেকে একটি পঞ্চায়তের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছে।
একই পরিস্থিতি ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকেও। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই ব্লকের দু’টি আসনের মধ্যে একটি তৃণমূল জোটের বিজেপি প্রার্থী, অন্যটিতে সিপিএম প্রার্থী জয়ী হয়। এ বার সিপিএম একটি আসন ধরে রাখলেও, অন্যটিতে বিপুল ব্যবধানে জিতেছে তৃণমূল প্রার্থী। ২০০৩ সাল থেকে পঞ্চায়ত সমিতিটি ছিল তৃণমূল-বিজেপি জোটের দখলে। এ বারে পঞ্চায়ত সমিতির ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই পঞ্চায়ত সমিতির আওতাধীন ৭টি পঞ্চায়তের মধ্যে ৪টি ছিল সিপিএম তথা বামেদের দখলে। তিনটি তৃণমূল-বিজেপি তথা সিপিএম বিরোধী জোটের দখলে ছিল। এ বার তৃণমূল একক ভাবে ৫টি পঞ্চায়তে ক্ষমতা বিস্তার করেছে। দু’টি পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু হয়েছে।
ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের আওতাধীন দু’টি ব্লকের চারটি জেলা পরিষদ আসনের ফলাফলের নিরিখে বামেদের দুর্গ ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রটি এ বারে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ওই কেন্দ্রটিতে একবারই মাত্র কংগ্রেস প্রার্থী জয়লাভ করেছিল। একবার ছিল সিপিআই-এর দখলে। তার পর টানা সিপিএম একছত্র আধিপত্য কায়েম করে রেখেছিল। ২০০৬ সালে সিপিএমের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে লড়েছিল বিজেপি। সে বারে সিপিএমের সাধুচরণ বাগদি পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৮১৪টি ভোট। ২৯ হাজার ৮১৩টি ভোট পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুভাষচন্দ্র মণ্ডল। কংগ্রেসের বামাপদ ভল্লা ৯,১২৫টি ভোট পান।
২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল তৃণমূল। ওই জোটের প্রার্থী তৃণমূলের জটিল মণ্ডলকে ৬,৫২০ ভোটের ব্যাবধানে হারান সিপিএমের অশোক রায়। অশোকবাবু পান ৬৭,৪৭৮টি ভোট। জটিলবাবুর প্রাপ্ত ভোট ৬০,৯৫৮, বিজেপির দুধকুমার মণ্ডল পান ৩১,৩৩০টি ভোট। এ বারের পঞ্চায়ত নির্বাচনে দুই ব্লকের জেলা পরিষদের চারটি আসনে ফলাফলের নিরিখে প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। চারটি আসনে তৃণমূল মোট ৭৩,৫৭১টি ভোট পেয়েছে। সিপিএম তথা বামফ্রন্টের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৬১,২৮৫। বিজেপি প্রার্থীরা পেয়েছেন ২৪,২৭০টি ভোট। ৬,০১৬টি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ধারা বজায় থাকলে এ বারের বিধানসভায় লালদুর্গে ফুটবে সবুজ ঘাস-ফুল। সিপিএম-বিজেপি অবশ্য ওই তত্ব মানতে নারাজ। সিপিএমের ময়ূরেশ্বর কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক তথা জোনাল কমিটির সদস্য অশোক রায় বলেন, “তৃণমূল সন্ত্রাস করে এবং টাকা ছড়িয়ে ভোট করেছে। বিধানসভা নির্বাচনের সময় এই পরিস্থিতি থাকবে না। আমরাই জয়ী হব।” তৃণমূলের সন্ত্রসের অভিযোগ তুলে বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাসে আমরা ঠিক মতো ভোটই করতে পারিনি। তবে বিধানসভা নির্বাচনে কী হবে, তা তখনই বলব।”
সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস সর্বত্র হেরে মুখ রক্ষা করতে সন্ত্রাস সন্ত্রাস বলে গলা ফাটাচ্ছে। আসলে তাদের আর মানুষ নেই। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ময়ূরেশ্বর কেন্দ্রটি তো বটেই, অন্য জায়গাতেও আমরা ভাল ফল করব।” |