সর্বদল বৈঠকের আর্জি অশোকের
বনধে চলল গাড়ি, পথে ঘুরলেন মন্ত্রী
গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিরোধিতায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টা শিলিগুড়ি বনধের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার শহরের জনজীবন কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে গেল। যদিও বন্ধ উপেক্ষা করে রাস্তায় যান চলাচল করেছে। বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। কিন্তু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শহরের বাণিজ্যিক এলাকার অনেক দোকানপাট বন্ধ ছিল। বন্ধ উপেক্ষা করে ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা যাতে স্বাভাবিক থাকেন, সে জন্য সাহস জোগাতে রাস্তায় নেমেছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি সেবক মোড় থেকে দার্জিলিং মোড় পর্যন্ত হেঁটে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার জন্য সকলের কাছে আবেদন করেন। পাশাপাশি, বন্ধ-পাল্টা বন্ধ করার সমালোচনা করেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য।
শিলিগুড়ির পথে গৌতম দেব।
এ দিন দুপুরে তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “বন্ধ সমাধান নয়। গোর্খাল্যান্ডের দাবি মানা যেমন সম্ভব নয়। তেমনই জিটিএ নিয়ে আরও আলোচনা চলতে পারে। প্রয়োজনে বারবার আলোচনায় সমাধান হতে পারে। বন্ধ বা পাল্টা বন্ধও সমর্থন করি না।” গৌতমবাবু জানান, আজ, শুক্রবার শিলিগুড়িতে দ্বিতীয় দফার বন্ধে যাতে জনজীবন বিপর্যস্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা হবে।
পাহাড় ও লাগোয়া সমতলের পরিস্থিতি যাতে শান্ত হয় সে জন্য দ্রুত সর্বদল বৈঠকের আর্জি জানিয়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু। তিনি বলেন, “জিটিএ চুক্তিটা বড্ড তাড়াহুড়ো করে হয়েছিল। চুক্তিতে গোর্খাল্যান্ডের দাবি বিষয়টি মাথায় রেখে জিটিএ গঠন হতে চলেছে লেখা হয়। এটাকে হাতিয়ার করছে মোর্চা। যাই হোক আমরা আলাদা গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের বিরোধী। তবে পাহাড়ের মানুষের ভাবাবেগের বিষয়টি মাথায় রেখে পদক্ষেপ করতে হবে। জবরদস্তি আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করার পক্ষে আমরা নই। আমরা চাই দ্রুত রাজ্য সরকার সর্বদল বৈঠক ডেকে পদক্ষেপ করুক।” সেই সঙ্গে পাহাড়ে বন্ধ হচ্ছে বলে শিলিগুড়িতে পাল্টা বন্ধ করে বিভেদ বাড়ানোর চেষ্টা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেছেন অশোকবাবু।
সচল হিলকার্ট রোড।
জোর করে কেউ বন্ধ করতে পারবে না বলে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন আগেই জানান। এ দিন অশান্তি ছড়াতে পারে এমন জায়গাগুলিতে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। বাংলা ও বাংলাভাষা বাঁচাও কমিটির সভাপতি মুকুন্দ মজুমদারকে এ দিন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকেই গ্রেফতার করে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির পুলিশ। তিনি এদিন কলকাতা থেকে দার্জিলিং মেলে তিনি শিলিগুড়ি পৌঁছন। পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন বলেন, “নিরাপত্তার কারণেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” মুকুন্দবাবুর দাবি, “বন্ধ ব্যর্থ করতেই এই চক্রান্ত করেছে রাজ্য সরকার। আমরা হাল ছাড়ব না। শুক্রবার ফের মিছিল করব শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকায়।” এ দিন শিবসেনার জেলা সম্পাদক ব্রজগোপাল হালদার গোর্খাল্যান্ডের বিরোধিতা করে স্লোগান লেখা একটি ব্যানার জালিয়ে দেন। দার্জিলিং মোড়ে রাস্তায় শুয়ে পড়ে পথ অবরোধ করার চেষ্টা করলে তাঁকে ও অনিমা কোঁয়ার নামে এক শিবসেনা সমর্থককে ধরে প্রধাননগরের পুলিশ।
এ দিন বনধের অনিশ্চয়তায় পড়ে পাহাড় থেকে নেমে এসেছেন বহু পর্যটক। দলে দলে স্কুল ছেড়ে সমতলে নেমে আসে একাধিক ছাত্র ছাত্রীরা। নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা রিচার্ড ও কোনর এ তাঁর স্ত্রী কিম দার্জিলিঙে এসেছিলেন কয়েক মাসের জন্য বিশ্রাম নিতে।
বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করছে পুলিশ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
গত কয়েকদিন থেকে লাগাতার সমস্যায় পড়ায় তাঁরা দার্জিলিং ছেড়ে কাশ্মীর চলে যাবেন বলে জানান। রিচার্ডের বক্তব্য, “আমরা ছুটি কাটাতে এসেছি। ঘুরতে এসেছি। ঝামেলা পোহাতে নয়। তাই শান্তিতে থাকতে কাশ্মীর যেতে চাইছি। গ্রিসের গিরি তৌসিনও দু’দিন হল শিলিগুড়িতে এসেছেন। তাঁর গ্যাংটক যাওয়ার কথা। ঝামেলার কথা শুনে তিনি যেতে সাহস পাননি।
এ দিকে কার্শিয়াঙের হিমালি বোর্ডিং স্কুলের এক পড়ুয়া অষ্টম শ্রেণির সৌরভ কুমারের বাড়ি বিহারের কিসানগঞ্জে। বাড়ি থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে জানাচ্ছে, “বাড়ি থেকে বনধের কথা শুনে বাড়ি ফিরতে বলেছেন বাবা। সমস্ত শান্ত হল ফের আসব। পড়াশুনোয় সমস্যা হবে। কিন্তু উপায় নেই।” অন্য দিকে ওদলাবাড়ির মানাবাড়ির বাসিন্দা কৃষ্ণ ওঁরাও সৌরিনিতে পাইন হিল স্কুলে দুই ছেলে মেয়ে ভরত ও শান্তিকে আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেওয়ায় তাঁরা ফিরে এসেছেন। কিন্তু মন পড়ে রয়েছে সেখানেই। সব সময় একটা খারাপ কিছুর আশঙ্কা তাড়া করছে বলে জানালেন কৃষ্ণবাবু। বনধের প্রথম দিনে কিছুটা সাড়া মিলেছে ডুয়ার্সের ওদলাবাড়িতে। বেসরকারি বাস কম থাকলেও ট্রেন স্বাভাবিক ছিল। মালবাজার, চালসাতেও দোকানপাট বন্ধই ছিল। বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটির ডুয়ার্সের সভাপতি জীবন মিত্র জানান রসদ নেবার জন্যে ফের পাহাড়ে বনধ শিথিল হলে তাঁরা আবার সমতলে বনধ ডাকবেন। এদিকে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের জন বারলা গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা শুক্রা মুন্ডা গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা পৃথক রাজ্যের দাবি সমর্থন করছি না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.