আজ পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী
দিনভর নাটক শেষে টানা
বনধের ঘোষণা গুরুঙ্গের
পাহাড় বনধ শিথিল করবেন বিমল গুরুঙ্গ, এমনই ইঙ্গিত মিলেছিল বৃহস্পতিবার সকালে। নানা মহলের অনুরোধ আসায়, এবং ঈদের কথা মাথায় রেখে, অনির্দিষ্ট কালের বনধ নামিয়ে আনা হবে ৯৬ ঘন্টায়, মোর্চা নেতারা এমনই জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিকেলেই বদলে গেল ছবিটা। সাংবাদিক বৈঠক করে গুরুঙ্গ জানিয়ে দিলেন, শনিবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্যই বনধের ডাক দিচ্ছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
অবস্থান বদল হল কেন? মোর্চা সূত্রে খবর, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার, উভয়ের ভূমিকাতেই প্রবল ক্ষুব্ধ হয়েছেন গুরুঙ্গ। পাহাড়ের শান্তি বজায় রাখতে রাজ্যের দাবি মেনে কেন্দ্র পাঁচ কোম্পানি সিআরপি পাঠিয়েছে। তাতেই চটেছেন গুরুঙ্গ। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হচ্ছে। রাজ্য তা দমনের জন্য বলপ্রয়োগের চেষ্টা করছে। কেন্দ্রও সিআরপি পাঠিয়ে তাতে সামিল হয়েছে। এটা পাহাড়কে অশান্ত করার চক্রান্ত।” সে জন্যই বনধ শিথিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে তিনি বাধ্য হলেন, দাবি করেছেন গুরুঙ্গ। তবে স্বাধীনতা দিবসে বনধ হবে না, বলেন তিনি।
মোর্চার অন্দরের খবর, আজ, শুক্রবার রোশন গিরির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মোর্চা প্রতিনিধি দল দিল্লি যাবে। তার আগে নয়াদিল্লির উপরে চাপ বাড়াতেই গুরুঙ্গরা কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। বনধ বহাল রাখা নিয়ে বুধবার মাঝরাত থেকে বৃহস্পতিবার দিনভর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্দরে বিস্তর ‘নাটক’ হয়। অনির্দিষ্ট কালের জন্য বনধ প্রত্যাহার করার চাপ আসছিল নানা মহল থেকে।
বনধের আগে দার্জিলিঙের চকবাজারে ভিড়। ছবি: রবিন রাই
ওই রাতেই ১২টা নাগাদ মোর্চার একজন সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার নেতা ‘লোকাল কেবল চ্যানেল’-এ জানিয়ে দেন, অনির্দিষ্টকালের বনধ তুলে নেওয়া হয়েছে। ওই নেতা জানান, নানা মহলের অনুরোধ ও ঈদের কথা ভেবে শুধু শনিবার থেকে চার দিন পাহাড়ে বনধ হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে তা ঘনঘন প্রচারিত হতে মোর্চার শীর্ষ নেতাদের অনেকেই চমকে যান। কার নির্দেশে ওই বনধ শিথিলের কথা ঘোষণা হয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয় চাপানউতোর। তর্কাতর্কি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে এক নেতা মোবাইলে কথা বলার সময়ে অন্য নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে লাইন কেটে দেন। কেউ আবার প্রকাশ্যেই সতীর্থের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দলের নেতাদের মধ্যে বিবাদ এড়াতে ফের দার্জিলিঙের সদর দফতরে দুপুরে বৈঠক ডাকেন বিমল গুরুঙ্গ। তত ক্ষণে অবশ্য ‘ফেসবুকে’ বিমল গুরুঙ্গও অনির্দিষ্ট কালের বনধ থেকে সরে আসার কথা লিখে দিয়েছেন।
বৈঠক শুরু হতেই আর এক দফায় হইচই শুরু হয়। মোর্চা সূত্রের খবর, সে সময়ে ‘নিজেরা এমন ঝগড়া করলে দল ভেঙে যাবে’ বলেও কিছু নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যে দলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমেই সিংমারিতে খবর পৌঁছয়, ফের পাহাড়ে অশান্তি হলে মোর্চার যে কোনও নেতাকে গ্রেফতার করার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। এমনকী, মদন তামাং হত্যা মামলায় অভিযুক্ত, নিখোঁজ নিকল তামাংকে মদত দেওয়ার অভিযোগে সিবিআই-ও এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পারে।
গুরুঙ্গ ইস্তফা দেওয়ার পরে তাঁর গাড়ি, নিরাপত্তা রক্ষী সব তুলে নিয়েছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে জিএলপি সদস্য পরিবৃত হয়ে চলাফেরা করছেন গুরুঙ্গ। মোর্চা সূত্রে খবর, পুরনো কোনও মামলায় গুরুঙ্গকে গ্রেফতার করা হতে পারে কি না, এ দিন আলোচনায় সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তাঁর অনুগামীদের কয়েকজন। তখনই মোর্চা নেতারা ঠিক করেন, আপাতত বনধ শিথিল না-করে কেন্দ্র ও রাজ্যের উপরে চাপ বাড়িয়ে আলোচনার জমি তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে। তাই বনধ বহাল রাখলেও আজ, দিল্লিতে গিয়ে প্রথমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে ও পরে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টাও করবে মোর্চা প্রতিনিধি দল।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির কথায়, “গোর্খাল্যান্ডের দাবি ত্যাগ করে আমরা জিটিএ গড়িনি। কাজেই আমাদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। নয়াদিল্লিতে সে কথাই ফের বলা হবে। কোনও আশ্বাস মিললে দলের সভাপতিকে জানানো হবে। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
অনির্দিষ্টকালের বনধ হবে কি না তা নিয়ে দিনভর ঘনঘন সিদ্ধান্ত বদলের খবর চাউর হওয়ায় পাহাড়বাসীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। ক’দিনের জন্য রসদ সংগ্রহ করতে হবে তা জানতে মোর্চা নেতাদের কাছে বাসিন্দাদের ফোন আসতে থাকে। কোনও নেতাই সন্ধ্যা পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলতে না-পারায় অনেকেই ক্ষুব্ধ। আজ, শুক্রবার পাহাড়ে বনধ শিথিল থাকবে। কিন্তু, সমতলে কয়েকটি সংগঠনের তরফে শিলিগুড়ি ও লাগোয়া ডুয়ার্সের কিছু এলাকায় বনধ বহাল রয়েছে। বৃহস্পতিবার সমতলের বনধ সমর্থক নানা সংগঠনের সদস্যরা বাণিজ্যিক এলাকায় পিকেটিং করার চেষ্টা করেন। পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অধিকাংশই বনধ ছিল। সন্ধ্যার পরে অবশ্য পাইকারি বাজার থেকে ছোট গাড়ি বোঝাই করে চাল-ডাল-তেল-নুন, আনাজ পাহাড়ের পথে যেতে দেখা গিয়েছে। পাহাড় থেকে আবাসিক স্কুল-কলেজের বাইরের ছাত্রছাত্রীরা প্রায় সকলেই এদিন সমতলে নেমেছেন। ‘টাউন অব স্কুলস’ নামে পরিচিত কার্শিয়াঙের একাধিক আবাসিক স্কুলের অধ্যক্ষরা আশা করছেন, দিল্লিতে সমস্যার জট কাটতে পারে। মোর্চার বনধ বিরোধী গোষ্ঠীও দিল্লিতে মুখরক্ষার কোনও উপায় মিলতে পারে বলে আশাবাদী। রাজ্য সরকার অবশ্য পাহাড়ের জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়ে দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেছেন, “পাহাড়-সমতল কোথাও বনধের রাজনীতি বরদাস্ত করবেন না মুখ্যমন্ত্রী। আমরা পাহাড়ের জনজীবন স্বাভাবিক রাখার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি। কেউ জবরদস্তি করলে পুলিশ-প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।” সরকারি সূত্রের খবর, শুক্রবার বেলা ১১টার মধ্যেই পাঁচ কোম্পানি সিআরপি পাহাড়ে পৌঁছে যাবে। যার মধ্যে এক কোম্পানি মহিলা সিআরপি।
আজ, দার্জিলিঙের আমজনতার নজর কিন্তু থাকবে দিল্লির দিকেই।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.