কমল গুহের বহু সংগ্রামে তৈরি সাজানো বাগান যেন ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল। শুধু ঝড়ই নয়, দেখাশোনার অভাবে, উপযুক্ত সার-বীজের অভাব এর অন্যতম কারণ।
‘ফেসবুকে’ এই দুই লাইনের মন্তব্য তৈরি করেছে বির্তক। কোচবিহার সহ রাজ্যের ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা কর্মীদের মধ্যে এই মন্তব্য আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। কারণ যিনি মন্তব্য করেছেন তিনি আর কেউ নন, প্রয়াত ফরওয়ার্ড ব্লকের দাপুটে নেতা কমল গুহের মেয়ে ইন্দ্রাণী ব্রহ্ম। বির্তকের অন্যতম কারণ হল কমল গুহর মৃত্যুর পর কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ইন্দ্রাণীদেবীর ভাই উদয়নবাবু।
তবে কী দলে ভাইয়ের নেতৃত্বকেই দুষেছেন ইন্দ্রাণী দেবী?
মঙ্গলবার ফেসবুকে কমল গুহের একটি ছবি ‘পোস্ট’ করে তার নীচে ওই দুই লাইনের মন্তব্য লেখেন তিনি। এ দিন, বুধবার ইন্দ্রাণী দেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি যেটা উপলব্ধি করেছি, সেটাই লিখেছি। লেখার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে বহু লোকের ফোন পেয়েছি।”
ফেসবুকের মন্তব্যে ‘দেখাশোনার অভাব, উপযুক্ত সার, বীজের অভাব’ এগুলি কী উদয়নবাবুর উদ্দেশ্যেই? ঘটনাচক্রে এক সময়ে উদয়নবাবু সার এবং বীজের ব্যবসা করতেন। এবং এ বারে কোচবিহারে প্রচারে এসে কৃষি প্রতিমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা বেচারাম মান্না উদয়নবাবুর বিরুদ্ধে সার ও বীজ কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলেছিলেন।
এক সময়ে বাবা কমল গুহের হাত ধরে ফরওয়ার্ড ব্লকের যে কোনও ছোট বড় সভায় উপস্থিত হওয়া ইন্দ্রাণীদেবীর কথায়, “বাগানের দায়িত্ব থাকে বাগান মালিক, মালির হাতে। দলের ক্ষেত্রেও সেনাপতির মূল ভূমিকা থাকে। বাগান নষ্ট হলে মালিক বা মালিকে দায়ী করা যায়। আমি নির্দিষ্ট কাউকে দোষারোপ করিনি। বড় দলের ক্ষেত্রে সকলের উপরেই দায় বর্তায়।” এ বছর ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্মেলনের সমাবেশেও উপস্থিত ছিলেন ইন্দ্রাণীদেবী।
ইন্দ্রাণীদেবী মুখে যাই বলুন না কেন, দলের একাংশ নেতা কর্মীরা মনে করছেন, সরাসরি উদয়নবাবুকেই দুষেছেন তিনি। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় উদয়নবাবুর নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরে, তিনি জেলা ছেড়ে চলে যান। যদিও সেই সময়ে তাঁকে রাজ্য নেতৃত্ব জেলায় ফিরে ‘কারাবরণের’ নির্দেশ দিয়েছিল বলে জানা যায়। তিনি তা মানেননি বলে দলের উপর তলায় অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। গ্রেফতারির ভয়ে জেলায় না ফেরা, জামিন পেয়ে ফিরলেও জেলায় ভোটের আগে বড় সভা না করার কারণে উদয়নবাবুর উপে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সন্তুষ্ট নয় বলে জানা গিয়েছে। ইন্দ্রাণীদেবীর মন্তব্য প্রসঙ্গ অবশ্য এ দিন এড়িয়ে গিয়েছেন তাঁর ভাই। বুধবার বিকেলে উদয়নবাবুর সঙ্গে এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ও (ইন্দ্রাণীদেবী) কী লিখেছে, তা আমি জানি না। তাই কী করে এই নিয়ে মন্তব্য করব?” ফেসবুকের মন্তব্য উদয়নবাবুকে পড়ে শোনানো হলে তাঁর জবাব, “আমি লেখাটি দেখিনি। ওর (ইন্দ্রাণীদেবী) সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে তার পরে কিছু জানাতে পারব।” |