|
|
|
|
বাংলাকে ঘর ভেবে আসুন, হতাশ হবেন না
দেবাশিস ভট্টাচার্য • মুম্বই |
মালাবার হিলসে মহারাষ্ট্র সরকারের অতিথিশালার সমুদ্রঘেঁষা লনে বসে বৃহস্পতিবার সকালে কথায় কথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “ভাবছি আজ শিল্পপতিদের কাছে রবীন্দ্রনাথের সেই লাইনটা বলব এসো এসো আমার ঘরে এসো...! বলব, ওয়েলকাম টু আওয়ার সুইট হোম, মেক ইট ইওরস।”
বিকেলে মুম্বইয়ের কাফ প্যারেডে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে শিল্পপতি সম্মেলনের প্রারম্ভিক বক্তব্যে সেই আহ্বানটাই থাকল মমতার মূল সুর। রুদ্ধদ্বার ওই শিল্পসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যান সমেত পশ্চিমবঙ্গকে বিনিয়োগের ইতিবাচক ঠিকানা হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের যা বললেন, এক কথায় তার মর্মার্থ: এখানে আসুন, সব পাবেন। বিফল হবেন না। আমাদের বিশ্বাস করুন। আজ যেমন মুম্বইকে আমার ঘর মনে করে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আপনারাও এ বার বাংলাকে আপনাদের ঘর মনে করুন।
|
মমতার সাংবাদিক বৈঠকে মিঠুন চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে। ছবি: সুমন বল্লভ।
|
কী পাবেন-কী পাবেন না, কী হবে-কী হবে না সে সব বিতর্ক পরবর্তী দু’ঘণ্টার আলোচনায় কার্যত পিছনের সারিতে চলে গেল। যা বেরিয়ে এল তাতে সাংবাদিক সম্মেলনের মঞ্চে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানালেন, “চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে...।” জমি পাওয়ার সমস্যা, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন এল। সরাসরি জবাব এড়িয়েও মমতার জোরালো আশ্বাস, “আমি শিল্পপতিদের বলেছি, গত ৩৪ বছরে ৭৮ লক্ষ শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম বছর পর্যন্ত নষ্ট হয়েছে পাঁচ হাজার। আর এখনকার পরিসংখ্যানে সেই সংখ্যাটা শূন্য। অর্থাৎ এ রাজ্যে এখন একটিও শ্রমদিবস নষ্ট হয় না। বন্ধ-ধর্মঘট আমরা করতে দিই না।” তাঁর এই আশ্বাসের প্রতিক্রিয়া? মমতা জানালেন, “ভিটামিনের মতো কাজ করেছে। এ টু জেড ভিটামিন যেমন।”
এর পরে নতুন করে সরকারের তরফে আর কিছু বলার থাকে না।
‘শুভসূচনা’ হয়েছিল তিনি ওয়র্ল্ড ট্রেড সেন্টারের গেটে গাড়ি থেকে নামামাত্র। সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ না থাকলেও মুম্বই ওয়র্ল্ড ট্রেড সেন্টারের প্রোমোটার সংস্থার (এমভিআইআরডিসি) কর্তারা গেটে অপেক্ষায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে পাকড়াও করবেন বলে। মমতাকে স্বাগত জানিয়ে সেখানেই তাঁদের প্রস্তাব, ‘আমরা কলকাতায় ওয়র্ল্ড ট্রেড সেন্টার করতে চাই।’ দাঁড়িয়ে পড়েন মমতা। জানতে চান, কত জমি দরকার। রাজারহাটের ফিনান্সিয়াল হাবের পাশে যাবেন? তাঁরা বলেন, কনভেনশন সেন্টার-সহ সব কিছু তৈরি করতে আনুমানিক দশ একর জমি হলে ভাল। মুখ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সামনে দাঁড়িয়ে হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র তো ছিলেনই। মমতা তাঁদের বলেন, “ভাল প্রস্তাব। অবিলম্বে দেখুন কী ভাবে কী করা যায়।” |
মধ্যমণি: শিল্পমহলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ। |
এক কথাতেই মোটামুটি স্থির হয়ে যায়, অবিলম্বে পাঁচ একর জমি দেওয়া যেতে পারে। বাকিটা পরের কথা। আপাত ভাবে ওই সংস্থা রাজিও হয়ে যায়। লিফ্টের দিকে যেতে যেতে মমতার হাল্কা রসিকতা: “সুলক্ষণ। এ তো দেখছি গেট থেকেই শুরু হল। সম্মেলনে এটা জানিয়ে দেব।” সম্মেলনকক্ষটি সাজানো হয়েছিল সারি সারি গোল-টেবিলে। সেখানে বাংলার সন্দেশ, ল্যাংচা, আম-দই। উপহারের যে প্যাকেট অতিথিদের হাতে দেওয়া হয়েছে, সেখানেও আছে বাসমতী চাল, দার্জিলিং চা, বাংলার মিষ্টি এবং বালুচরীর উত্তরীয়।
সম্মেলনে কোন স্তরের কত জন শিল্পপতি আসবেন, সে সব নিয়ে জল্পনা ছিল বিভিন্ন মহলে। কেন আরও আগেই দেশের শিল্প-রাজধানী মুম্বইতে এ ধরনের সম্মেলন মমতা করেননি, সাংবাদিক সম্মেলনে উঠেছিল সেই প্রশ্নও। রসিকতার ভঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আরে বাবা, বিয়েবাড়ি হলে আগে একটু সাজানোর সময় তো লাগে, সেটুকুও দেবেন না?”
শিল্পপতিদের সঙ্গে শিল্পীদের নিয়েও যে বৃহত্তর বিনিয়োগের ক্ষেত্র গড়তে চান মমতা, তা আগে বারবার বলেছেন তিনি। এ দিনও তাঁর ডাকা শিল্পপতি সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ, বাপ্পী লাহিড়ী, গৌতম ঘোষ প্রমুখ। সম্মেলনেই মমতা জানান, তাঁর সরকারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ খান মুম্বইয়ে নেই। শহরে নেই অমিতাভ বচ্চনও। থাকলে তাঁরাও নিশ্চয় আসতেন। পরে বলিউড ও টলিউডের মধ্যে সম্পর্কের সুতোটা কত শক্ত করে বাঁধা, তার ব্যাখ্যা দেন মমতা। অতীতের দুই সাংসদ-অভিনেতা সুনীল দত্ত ও অমিতাভ বচ্চনের পাশাপাশি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর ‘রিস্তা’র কথাও সাংবাদিকদের বলেন। বলেন, “মরাঠি ভাষা আমি বেশ বুঝতে পারি। আপনাদের মধ্যে কেউ মরাঠিতে প্রশ্ন করুন, আমি বুঝে নিয়ে উত্তর দেব।” |
সভার শেষে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলালেন সকলে। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে। —নিজস্ব চিত্র |
প্রশ্নটা এল, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মহারাষ্ট্রে এসে বিনিয়োগকারীদের ডেকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে। মমতা বললেন, “সো হোয়াট? দেশ তো একটাই। ভারতবর্ষ। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী যদি পশ্চিমবঙ্গের বিনিয়োগকারীদের এখানে আমন্ত্রণ জানাতে চান, জানাবেন। বলার কী আছে? আপনার বাড়িতে আমি আসব, আমার বাড়িতে আপনি যাবেন, এটাই তো অখণ্ড ভারতের ছবি। দেশ তো এ ভাবেই এগোবে।”
এই শিল্পপতি সম্মেলনের আয়োজনে গোড়া থেকেই বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সম্মেলন শেষে সাংবাদিক বৈঠকের মঞ্চে অমিতবাবু-সহ আরও দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে নিয়ে মমতা যখন হাজির, ঘটনাচক্রে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চেয়ার তখনও খালি। মঞ্চ থেকেই খোঁজ উঠল, ‘কোথায় কোথায়, পার্থদা কোথায়?’ পিছিয়ে পড়া পার্থবাবু যখন নিজের চেয়ারে পৌঁছলেন, তার আগেই বক্তব্য শুরু করে দিয়েছেন মমতা।
|
ওঁরা বলেন |
ভোটে এত বড় জয় পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে
আপনি বাণিজ্যনগরীতে।
দ্যাট মিনস, ইউ মিন বিজনেস!
মুকেশ অম্বানী,
রিলায়্যান্সের কর্ণধার |
মুখ্যমন্ত্রী, আজ আপনার দিন! মুকেশ যখন
লগ্নির ব্যাপারে কথা দিয়েছেন, বাকিরাও
উৎসাহী হবেন! কারণ মুকেশই নেতা!
যোগী দেবেশ্বর,
আইটিসি-র চেয়ারম্যান |
দিদি, আপনি মুম্বইয়ের হৃদয়
জয় করেছেন।
এ বার মুম্বইয়েরও
টাকার
থলিটা খোলার সময় এসেছে!
উদয় কোটাক,
কোটাক-মহীন্দ্রা ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান |
আপনার প্যাশন আমরা টিভিতে
দেখেছিলাম।
আজ আপনার কথা শুনে
সেটা নিজেরা অনুভব করলাম।
ছন্দা কোচার,
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রধান |
জিন্দল গোষ্ঠীর প্রধান সজ্জন জিন্দলকে মমতা
আপনাদের প্রকল্পের কী হল?
তাড়াতাড়ি করুন,
নইলে পরের বার
সোজা আপনার বাড়ি চলে যাব! |
সূত্র: ডেরেক ও’ব্রায়েনের টুইট |
|
আপনাদের আশা বাংলাকে ঘিরে। আমি এখানে এলাম,
কারণ আমার আশা মুম্বইকে ঘিরে। —মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
পুরনো খবর: ফুরফুরে মেজাজে লক্ষ্য পূরণের আশায় মমতা |
|
|
|
|
|