খয়রাশোলে আসছে বিশেষজ্ঞ দল
সুগন্ধী ধানের উৎপাদন বাড়াতে পরামর্শ
শুধুমাত্র পায়েস খাওয়ার জন্য সামান্য পরিমাণে জমিতে চাষ হত সুগন্ধী গোবিন্দভোগ চাল। চাষ করতেন খয়রাশোল ব্লকের মুষ্টিমেয় তিন-চারটি গ্রামের কয়েক জন চাষি। জেলা কৃষি দফতরের উদ্যোগে সেই গোবিন্দভোগ চালকেই বাণিজ্যিক আকারে চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই এলাকার চাষিরা। উদ্দেশ্য, সুগন্ধী চালের এলাকা বিস্তার ও বীজ উৎপাদন শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথাগত ধান চাষের একঘেয়েমি কাটে এবং কৃষকেরা যাতে ধান চাষেই আরও বেশি লাভের মুখ দেখতে পারেন। কৃষি দফতরের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে এবং পরামর্শ মেনে ইতিমধ্যেই বীজতলা তৈরি করেছেন অনেকেই। চাষিদের কেউ কেউ আবার ‘শ্রী পদ্ধতি’তে এই চাষ করবেন ভেবে এ বার সবে বীজতলা তৈরিতে হাত দিয়েছেন।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলায় একমাত্র খয়রাশোলের বিনোদপুর, শিরা, পলপাই এবং ভবানীগঞ্জএই চারটি গ্রামের মোট ৮৪ জন চাষি পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে ওই সুগন্ধী ধানের চাষ করবেন। জেলা উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, “চালের গুণগতমান যাতে বজায় থাকে সে জন্য সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে গোবিন্দভোগের চাষ হচ্ছে। চাষ হবে বাদশাভোগ চালেরও। শুধু তাই নয়, সুগন্ধী ধান চাষের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদিত ফসল কৃষক যাতে উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে পারেন সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কৃষি বিপণন দফতরের সঙ্গে যোগযোগ করা হয়েছে। কী পরিমাণ হতে চলছে সুগন্ধী ধান চাষের? ভবিষ্যতে এলাকার আরও চাষি কি ওই ধান চাষে উৎসাহিত হবেন? এই সব বিষয় নিয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত স্থানীয় কৃষকেরা, তেমনই আগ্রহী জেলা কৃষিবিভাগ।

ফলন কি বাড়বে? পরামর্শের অপেক্ষায় চাষিরা। গোবিন্দভোগ ধান জমির ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেগুপ্ত।
বাণিজ্যিক আকারে গোবিন্দভোগ বা বাদশাভোগ চাষের জন্য জেলার মধ্যে কৃষিতে তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকা খয়রাশোল ব্লকের ওই চারটি গ্রামের কথাই কেন ভাবা হল? খয়রাশোল ব্লক কৃষি দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০১১ সালে খয়রাশোলের শাল ও হিংলো নদীর মধ্যবর্তী আঞ্চলে থাকা পলপাই গ্রামের এক চাষি তাঁর জমিতে চাষ করা সামান্য পরিমাণ গোবিন্দভোগ চাল এনে খয়রাশোল ব্লকের সহ-কৃষিঅধিকর্তা দেবব্রত আচার্যকে পায়েস করে খেয়ে দেখার জন্য দিয়েছিলেন। ওই গোবিন্দভোগ চালের মান দেখে, এলাকায় সুগন্ধী ধানের চাষ করা সম্ভব কি না চিন্তাভাবনা শুরু করেন ওই আধিকারিক। স্থানীয় চাষিরা জানাচ্ছেন, সেটা খতিয়ে দেখতেই এলাকায় গিয়ে গোবিন্দভোগ ধানের চাষ কী ভাবে করেন চাষিরা সে বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেন ওই দেবব্রতবাবু। তাঁরই উৎসাহে এই প্রকল্প এখন বাস্তবের কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে মত চাষিদের।
খয়রাশোল ব্লকের ওই কৃষি আধিকারিক বলেন, “ওই চারটি গ্রামের চাষিদের সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারি, প্রথাগত ভাবে (রাসায়নিক সার ব্যবহার করে) বহু বছর ধরে খুব কম পরিমাণ জমিতে এবং বাড়ির প্রয়োজনে এই চাষ করছেন কয়েকজন চাষি। এ কথা জানার পর প্রথমেই একটি ‘ফার্মাস প্রোডিউসার গ্রুপ’ তৈরি করতে বলি। তার পরে কোথাও শ্রী পদ্ধতি অবলম্বন করে কোথাও বা প্রথাগত ভাবে (মূলত জৈব পদ্ধতিতে) কিছুটা বেশি পরিমাণ জমিতে গোবিন্দভোগ ধান চাষ করার পরামর্শ দিই উৎসাহী চাষিদের। আশানুরূপ ফল পাই। খুব ভাল ফলন হয় গোবিন্দভোগের। বিশেষ করে যাঁরা শ্রী পদ্ধতিতে চাষটা করেছিলেন।” তিনি জানান, এর পর জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাঁদের অনুমোদন সাপেক্ষে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
গত বার ওই এলাকায় উৎপাদিত চাল কৃষি বিপণন দফতরে পাঠিয়ে গুণগত মানও যাচাই করা হয়েছিল এবং ওই দফতর শিলমোহর দিয়েছিল। ওই আধিকারিকের আশা, “রাজ্যের অন্যান্য সুগন্দী চাল উৎপাদনকারী জেলার পাশাপাশি খয়রাশোল ব্লকের জায়গা হবে এবং রাজ্য সরকারের ওই প্রকল্পের আওতায় আরও এক হেক্টর জমিতে শুধুমাত্র ওই চালের বীজ উৎপাদন করার কাজ চলছে।”
এ ব্যাপারে চাষিদের কী মত? পলপাই গ্রামের চাষি আভিজিৎ ঘোষ, বিনোদপুর গ্রামের চাষি তপন লাহা, শিরা গ্রামের জয়হরি ঘোষরা বলছেন, “পায়েসের জন্য যে চাল উৎপাদন করা হতো, সেই চাল বিক্রি করে যদি বেশি টাকা রোজগার হয় সেটা অবশ্যই খুশির। তা হলে এলাকার অন্যান্য চাষিরাও এই ধান চাষ করতে চাইবেন।” তবে একটা অশঙ্কার কথাও বলছেন চাষিরা! কীসের আশঙ্কা? ওই কৃষকদের কথায়, “কেজি প্রতি প্রায় ৬০ টাকা দরে সুগন্ধী চাল বিক্রি হলেও আনেক কম দমে ধান বিক্রি করতে হয় স্থানীয় চালকলে। তার উপর ধান থেকে চাল বানানোর সময় বেশ কিছু চাল ভেঙে যাওয়ায় বিক্রি করতে সমস্যা হবে।”
কী বলছে রাজ্য কৃষি বিপণন দফতর? দফতরের এক আধিকারিক জানান. তোলাইপাঞ্জি বা গোবিন্দভোগের মতো সুগন্ধী চাল কিনে সেটা প্যাকেজিং করে রাজ্য সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা এবং বিপণনের ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়ার কাজ চলছে। সে ক্ষেত্রে খয়রাশোলের গোবিন্দভোগ চালও বিবেচিত হবে। তবে গুণমানের প্রতিযোগিতায় আসা অবশ্যই প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত রাজ্যে সুগন্ধী চালের যে মূল্য রাজ্য সরকার নির্ধারণ করছেন, তাতে দাম অনেকটাই বেড়েছে। উৎপাদন ও মান বজায় থাকলে আশঙ্কার খুব বেশি কিছু নেই বলে মনে করছেন আধিকারিকেরা। একই মত জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিকদেরও। তাঁরা জানাচ্ছেন, চাষিদের মনে ওই চাষের ব্যাপারে যাতে কোনও সংশয় না থাকে, সে ব্যাপারে চাষিদের প্রশিক্ষণ দিতে। আগামী ৭ অগস্ট কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞ দল খয়রাশোলে আসছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.