বীরভূমের কসবা পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থীর নিহত বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষের পুত্রবধূর অভিযোগপত্র পেয়ে তদন্ত শুরু করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কমিশনের তিন সদস্যের এক প্রতিনিধিদল পাড়ুই থানার বাঁধনবগ্রামে নিহতের বাড়িতে যায়। তাঁরা নিহতের ছেলে হৃদয় ঘোষ, স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ ছাড়াও পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই প্রতিনিধিদল অবশ্য ওই খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলেনি। তবে প্রতিনিধিদলের হয়ে ইন্সপেক্টর রঞ্জিত দাস বলেন, “নিহত সাগরচন্দ্র ঘোষের পরিবারের মুখ থেকে গোটা ঘটনার কথা আমরা শুনলাম। তাঁরা বিষয়টি লিখিত ভাবেও ফের আমাদের জানালেন। তবে তদন্তের এটি প্রাথমিক পর্যায়। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের সঙ্গে আমরা ফের কথা বলতে পারি। এ দিনের রিপোর্ট কমিশনের চেয়ারম্যানকে জমা দেব।”
গত ২৩ জুলাই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে সাগরবাবুর খুনের ঘটনায় অভিযোগ জানিয়ে জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন শিবানীদেবী। চিঠির প্রতিলিপি গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল, বীরভূমের জেলাশাসক এবং রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছেও। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত কেবল মাত্র মানবাধিকার কমিশনই নড়েচড়ে বসল। এ দিন পর্যন্ত পুলিশ নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এসডিপিও (বোলপুর) বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব না। যা বলার পুলিশ সুপারই বলবেন।” বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। শেষ হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হৃদয়বাবুর বাড়িতে যাওয়ার আগে অবশ্য এ দিন সকালেই ওই প্রতিনিধিদল পাড়ুই থানায় গিয়েছিলেন। পুলিশেরই সূত্রের খবর, পাড়ুই থানার কর্মীদের কাছে প্রতিনিধিদল জিজ্ঞাসাবাদ করেন, ওই দিন সাগরবাবু গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে কোন কোন পুলিশ আধিকারিক-কর্মী নিহতের বাড়িতে গিয়েছিলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা ঠিক কী দেখেছিলেন, পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে গিয়ে কাদের কাদের ধরা হয়েছিল, সাগরবাবু গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে পুলিশের গতিবিধি কী রকম ছিল। তাঁরা আলাদা করে কথা বলেন পাড়ুই থানার ওসি সম্পদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তবে আদালতের কাজে বাইরে থাকায় এসআই দ্বিজরাজ সাহানার সঙ্গে প্রতিনিধিদলের কোনও কথা হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রের খবর।
এমনিতে বীরভূমের পাড়ুই থানার বিরুদ্ধে নিহতের পরিবার বারবারই গুরুতর অভিযোগ তুলে এসেছেন। সাগরবাবুর স্ত্রী আগেই অভিযোগ করেছিলেন, পাড়ুই থানা তাঁদের লিখিত অভিযোগ নেয়নি, উপরন্তু সাদা কাগজে তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করে ভুয়ো অভিযোগ লিখিয়ে নেওয়া হয়। পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই খুনের ঘটনায় এক একাদশ শ্রেণির ছাত্র-সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। যাঁরা প্রত্যেকেই এখন জেল হাজতে। নিহতের পরিবারের অবশ্য দাবি, ধৃতেরা কেউ ওই খুনের ঘটনায় জড়িতই নন। বরং তাঁরা যে সব ব্যক্তির নামে খুনের অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাঁদের কাউকেই এখনও গ্রেফতার করেনি। জেলার পুলিশ সুপার তাঁদের পাঠানো অভিযোগপত্রের প্রাপ্তি স্বীকার করলেও, ‘তদন্ত শুরু হয়েছে’ ছাড়া পুলিশ এখন ওই খুনের ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চায় না।
এ দিন পাড়ুই থানায় তদন্ত সেরে পুলিশের সঙ্গেই বাঁধনবগ্রামে পৌঁছন মানবাধিকার কমিশনের ওই প্রতিনিধিদল। ঘটনার রাতে বাড়িতে উপস্থিত নিহতের স্ত্রী সরস্বতীদেবী ও পুত্রবধূর সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। হৃদয়বাবুকেও তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রতিনিধিদল সাগরবাবুর এক প্রতিবেশীর শঙ্করী দাসের সঙ্গেও কথা বলেন। এ দিনও নিহতের পরিবারের সদস্যেরা সবিস্তারে গোটা ঘটনার কথা লিখিত ভাবে কমিশনের তদন্তকারী দলকে জানিয়েছেন। ঘণ্টাখানেক থাকার পরে এ দিনই প্রতিনিধিদল ফিরে যায়। হৃদয়বাবু বলেন, “কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সবিস্তারে ঘটনার রাতের এবং পরের দিন সকালের কথা জানিয়েছি। পুলিশ তো এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নিল না। দেখা যাক এ ক্ষেত্রে কী হয়।”
কসবায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে নির্দল প্রার্থীদের বাড়িতে হামলা করার নিদের্শ দিতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের নেতা অনুব্রতর বিরুদ্ধে। এমনকী তিনি পুলিশকে বোমা মারার কথাও বলেন। পরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে অনুব্রত ওই বক্তব্যকে ‘স্লিপ অফ টাং’ বলেই দায় সেরেছিলেন। যদিও তাঁর ওই ‘নিদের্শে’র পরপরই কসবা পঞ্চায়েতের ১২ নম্বর সংসদের নির্দল প্রার্থীদের বাড়িতে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটে। ভোটের আগের রাতেই গুলিবিদ্ধ হন নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষ। পরে বর্ধমান মেডিক্যালে তাঁর মৃত্যু হয়। |