রাশিয়া এক বছরের জন্য এডওয়ার্ড জে স্নোডেনকে আশ্রয় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। প্রাক্তন মার্কিন গুপ্তচর স্নোডেন কূটনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে বেশ কিছুদিন আটকে ছিলেন মস্কোর শেরেমেটিয়েভো বিমানবন্দরে। এই সিদ্ধান্তের জেরে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রুশ ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক।
ফোন ও ইন্টারনেটে মার্কিন গোয়েন্দাদের ব্যাপক নজরদারির গোপন তথ্য ফাঁস করেছিলেন স্নোডেন। ফলে, আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম উঠে যায় তাঁর। উইকিলিকস ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সাহায্যে লাতিন আমেরিকায় যাওয়ার পথে মস্কোয় এসেছিলেন ওই প্রাক্তন মার্কিন চর।
ইতিমধ্যে স্নোডেনের পাসপোর্ট বাতিল করে দেয় মার্কিন সরকার। তাঁকে প্রত্যর্পণের জন্য রাশিয়াকে চাপ দেওয়াও শুরু হয়। কূটনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে মস্কোর বিমানবন্দরে ‘ট্রানজিট জোন’-এ আটকে পড়েন তিনি। রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে তাঁর আর্জি খারিজ করে ভারত-সহ ২১টি দেশ। |
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, স্নোডেনকে নিয়ে গত কয়েক দিন গোপন আলোচনা চালিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি-র কর্তারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন অফিসারের বক্তব্য, “কিছু দিন ধরেই স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল রাশিয়া। এই সিদ্ধান্তে আমরা অবাক হইনি।”
স্নোডেনের রুশ আইনজীবী আনাতোলি কুচরেনা জানিয়েছেন, প্রাক্তন মার্কিন গুপ্তচরকে এক বছরের জন্য আশ্রয়ের নথিপত্র দিয়েছেন রুশ অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিকদের সেই নথির প্রতিলিপিও দেখান কুচরেনা। স্নোডেন সাধারণ যাত্রীর মতোই ট্যাক্সি ধরে বিমানবন্দর থেকে চলে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে নিরাপত্তার কারণে স্নোডেন কোথায় গিয়েছেন তা বলতে রাজি হননি ওই কৌঁসুলি।
আগে লাতিন আমেরিকায় যেতে চাইলেও এখন স্নোডেন রাশিয়া ছাড়ার কথা ভাবছেন না বলেই জানিয়েছেন কুচরেনা। তাঁর কথায়,“কিছু দিন ধরেই স্নোডেন রুশ ভাষা শিখছিলেন। পড়ছিলেন রাশিয়ার সাহিত্য। এ দেশেই উনি থাকতে চান বলে মনে হয়।”
উইকিলিকসকে গোপন তথ্য সরবরাহ করেছিলেন প্রাক্তন মার্কিন সেনা ব্র্যাডলে ম্যানিং। বুধবারই মার্কিন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। এই পরিস্থিতিতে স্নোডেন রাশিয়ায় আশ্রয় পাওয়ায় স্বভাবতই উৎফুল্ল উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ। টুইটারে তাঁরা বলেছেন, “স্নোডেনকে রাশিয়ায় আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে যাঁরা সাহায্য করেছেন তাঁদের জানাই, আমরা এই লড়াইয়ে জিততে পেরেছি।”
স্নোডেনকে আশ্রয় দেওয়ায় আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে না বলে দাবি করেছিলেন পুতিনের বৈদেশিক সম্পর্ক উপদেষ্টারা। কিন্তু, যথেষ্ট কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সিদ্ধান্তে আমেরিকা একেবারে হতাশ। সেপ্টেম্বরে ওবামার সঙ্গে পুতিনের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তা আদৌ হওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে ভাবছে ওয়াশিংটন।
|