নেতারা জেলে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে মানবতা-বিরোধী অপরাধের জন্য একের পর এক শাস্তি পাচ্ছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামাতে ইসলামির নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) ও আজ বাতিল করে দিল ঢাকা হাইকোর্ট। এর ফলে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সময়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে লুঠপাট-খুন-ধর্ষণ চালানোয় অভিযুক্ত এই দলটি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারলেও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
চার বছর শুনানির পরে হাইকোর্টের এই রায়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষেরা উল্লসিত। শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন, কামাল লোহানির মতো বিশিষ্ট জনেরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, জামাতে ইসলামিকে এ বার নিষিদ্ধ করা হোক। তাঁদের অভিযোগ, আদতে জঙ্গি-সংগঠন জামাত গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র তাদের শেকড় ছড়িয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে তালিবান ধাঁচের শাসন প্রতিষ্ঠা এই দলটির ঘোষিত লক্ষ্য। |
বগুড়ায় জামাতের আগুনে পুড়ছে বাস। বৃহস্পতিবার। ছবি: এএফপি |
তবে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে জামাত। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, “জামাতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সরকারি চক্রান্তের অংশ এই রায়। এই ভুল রায় অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।” রায় ঘোষণার পরেই ঢাকায় গাড়ি ভাঙচুর করেন কিছু জামাত-কর্মী। ঢাকা-পাবনা সড়কে অবরোধও হয়। বগুড়ায় কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। কিন্তু একে রোজার মাস, তার ওপর পুলিশি পাহারা জোরদার থাকায় গোলমাল ছড়ায়নি। জামাত নেতৃত্ব জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে ঈদ কেটে যাওয়ার পরে তাঁরা রায়ের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলনে নামবেন। ১২ তারিখ থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাকও দেওয়া হয়েছে।
শাহবাগের আন্দোলনকারীরাও জামাতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় উল্লসিত। শাহবাগের মঞ্চ থেকে জামাতকে নিষিদ্ধ করার ডাক প্রথম দিয়েছিলেনসরকারের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ দিন কাঠমান্ডু থেকে ফোনে তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, “অতীতে তো বটেই, এখনও রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে জামাত। সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ-প্রশাসন তাদের হামলা থেকে বাদ পড়ছে না কেউ। এরা গণতন্ত্রের সুবিধা ভোগ করে পল্লবিত হচ্ছে, আবার গোপনে জঙ্গিদের লালন-পালন করছে।” ইনু বলেন, দলের পক্ষে ও ব্যক্তি হিসেবে তিনি মনে করেন এখুনি জামাতকে নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে ১৪ দলের সরকার সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। অধ্যাপক মুনতাসির মামুন জানিয়েছেন, ১৯৭১-এ স্বাধীনতার পরে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় জামাতও নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু ১৯৭৫-এ রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান খুন হওয়ার পরে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। প্রকাশ্যে আসে জামাত। তবে ১৯৮৬ সালে সেনাশাসক হুসেইন মহম্মদ এরশাদ মৌলবাদী জামাতকে নির্বাচনে টেনে আনেন। তিনি বলেন, “এর আগে তিন বার দলটি নিষিদ্ধ হয়েছে। আশা করব চতুর্থ বারের মতো জামাতকে নিষিদ্ধ করবে এই সরকার।”
প্রধান শাসক দল আওয়ামি লিগ জামাতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেও দলটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপরে ছেড়ে দিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “রায়ে প্রমাণ হয়েছে জামাত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় মানুষ খুশি।” সরকার কি জামাতকে নিষিদ্ধ করছে? এই প্রশ্নের উত্তরে হানিফ বলেন, “আমি আশা করব নির্বাচন কমিশন এ বার জামাতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।”
জামাতের জোটসঙ্গী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন মক্কায় ধর্মীয় সফরে। রায়টি নিয়ে বিএনপি কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলের এক শীর্ষ নেতা গয়েশ্বর রায় বলেন, “এই রায়ে দেশে উত্তেজনা ও অস্থিরতা বাড়বে।” বিএনপির এই প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, কোনও দল প্রকাশ্যে থাকলে তাদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। নিষিদ্ধ হওয়ার পরে গোপনে তারা কোথায় কী করে বেড়াবে, কে নজর রাখবে?
|