দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। এর পরে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশের জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, কাল সেই রায় দেবে ঢাকা হাইকোট। মাস চারেক পরে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। হাইকোর্ট জামাতের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের নির্দেশ দিলে এই নির্বাচনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে না। এর প্রভাব জোটসঙ্গী বিএনপির ওপরেও পড়বে।
অন্য ৩৮টি দলের সঙ্গে ২০০৮-এ জামাতে ইসলামিও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়। সে সময়ে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নেওয়ার কথা জানায়। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এই দলের সক্রিয় বিরোধিতা ও পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে গণহত্যা, লুঠপাট-ধর্ষণে জামাত নেতাদের প্রধান ভূমিকা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে এই নিবন্ধনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট কয়েক জন। ২০০৯-এর ২৭ জানুয়ারি তাঁদের এই আবেদনে জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়। তার পরে বিচারের নানা পর্ব পেরিয়ে শুনানি শেষ হতে চার বছর লেগে যায়। অবশেষে বৃহস্পতিবার এই মামলার বার বেরোতে পারে বলে হাইকোর্ট সূত্রে জানানো হয়েছে।
আবেদনকারীদের আইনজীবী তানিয়া আমির জানিয়েছেন, শুনানির সময়ে তাঁরা আগাগোড়া বলে এসেছেন, জামাতে ইসলামির গঠনতন্ত্র বাংলাদেশে সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্বকে মানে না। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে তারা পাকিস্তানের সমর্থনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে এসেছে। সুতরাং তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হোক। জামাতের আইনজীবী আব্দুর রজ্জাকের যুক্তি, বাংলাদেশে বহু ইসলামি দলের গঠনতন্ত্রই এই দলের মতো। সেগুলি দিব্যি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। তাদের নিষিদ্ধ করার জন্য কোনও আবেদন করা হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই জামাতের বিরুদ্ধে এই আবেদন করা হয়েছে।
জামাতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আবেদনে চারটি যুক্তি দেওয়া হয়েছে। এক, এই দলের সংগঠনে দেশের জনগণকে সর্বশক্তিমান বলে মানা হয় না। আইন প্রণয়নে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ অধিকারও স্বীকার করা হয় না। দুই, আইন অনুসারে কোনও সাম্প্রদায়িক দল নিবন্ধন পেতে পারে না। কিন্তু নীতি ও আদর্শে জামাত সম্পূর্ণ একটি সাম্প্রদায়িক দল। তিন, নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের বৈষম্য না রাখার কথা বলা বয়েছে। কিন্তু জামাতের গঠনতন্ত্রে বলা রয়েছে, কোনও অমুসলিম ও নারী তাদের শীর্ষ পদে বসতে পারবে না। চার, নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে কোনও দলের বিদেশে কোনও শাখা থাকতে পারবে না।
কিন্তু বিদেশের একটি সংগঠনের শাখা হিসেবে জামাত নিজেদের পরিচয় দেয়।
আদালত জামাত নেতাদের কাছে এই সব প্রশ্নের জবাব চেয়ে রুলিং দিয়েছিল। ২০০৯-এর এই রুলিংয়ে ৬ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। আবেদনকারীদের আইনজীবী তানিয়া আমির জানিয়েছেন, জামাতের নেতারা আজও এই প্রশ্নগুলির কোনও জবাব দেননি। তবে, জামাত নিষিদ্ধ হলে বাংলাদেশে বিরোধী বিএনপি-জামাত জোট জোর ধাক্কা খাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগের খালেদা জিয়ার আমলে জামাতের দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রীও সরকারে ছিলেন, যাঁরা এখন যুদ্ধাপরাধের আসামি।
এক জনকে প্রাণদণ্ডও দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত। |