|
|
|
|
|
|
|
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ |
টাকা দিয়ে ডলারে লগ্নি
ডলার ষাট ছুঁইছুঁই। টিভিতে-কাগজে-পথে-ঘাটে-আড্ডায় এ নিয়ে
আলোচনা
সর্বত্র। আগে কিনলে লাভ হত বলে হাত কামড়াচ্ছেন
না কি?
বলছেন অরিন্দম সাহা |
|
সঞ্চয়ের অনেক রাস্তা রয়েছে। তা হলে কেন আবার টাকা খরচ করে ডলার কিনতে যাব? যা কি না অন্য এক দেশের মুদ্রা?
এ কথা হয়তো আপনার মনে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কয়েক মাস আগেও ১ ডলারের দাম ছিল ৫৫ টাকা। এখন তাই ঠেকেছে প্রায় ৬০-এ। ফলে যখন নিজের ছেলে বা মেয়েকে বিদেশে পড়তে পাঠানোর কথা ভাববেন বা বাইরের দেশগুলিতে এক বার হলেও ঘুরে আসার সাধ পূরণ করতে চাইবেন, তখনই বুঝতে পারবেন টাকার ছ্যাঁকা সরাসরি কতটা আপনার পকেট ফুটো করতে সক্ষম।
আর টাকা পড়লে যে তেলের দাম বাড়ে, সে তো কিছুটা হলেও স্পষ্ট। তেলের দাম বাড়া মানে যে ঘুরপথে সমস্ত জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি, তা-ও অজানা নয়। কিন্তু এই অবস্থাকেই সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন আপনি। লগ্নি করতে পারেন ডলারে। কী ভাবে? সেটাই আজ দেখব।
কমলে ভাল? না বাড়লে?
টাকা নিয়ে গত কয়েক দিনে কাগজে লেখালেখির মধ্যে অনেকেরই মনে হয়েছে যে, লগ্নি করতে গেলে কোনটা ভাল? অর্থাৎ টাকার দাম পড়া, নাকি দর বৃদ্ধি? এ নিয়ে প্রশ্নও এসেছে আমাদের কাছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ডলার কেনা-বেচা বাজারে কেনাকাটার মতোই। ধরে নিন আপনি ১ ডলার কিনছেন। সে জন্য কয়েক মাস আগেও ৫৫ টাকা দিতে হচ্ছিল। এখন ডলার প্রায় ৬০ টাকা। অর্থাৎ ওই এক ডলার কিনতেই পাঁচ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। মানে ডলারের দাম বেড়েছে, আর কমেছে টাকার দর।
এ বার ভাবুন—
• আপনি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে চুক্তি করে ৫৫ টাকায় ডলার কিনলেন। এর পর চুক্তি শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত যে কোনও দিন যে কোনও সময় সেই মুহূর্তের দামে ডলার বিক্রি করতে পারেন। ফলে তখন ডলারের দাম বাড়লে (ধরছি ৬০ টাকা), আপনার মুনাফা। কিন্তু, আপনি চুক্তি শেষ হওয়ার অপেক্ষা করলে এই সুবিধা পাবেন না। কারণ এক বার চুক্তি শেষ হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্ধারিত দামেই তা বেচতে হবে। ধরুন চুক্তি শেষের দিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ডলারের দর বেঁধে দিল ৫৮ টাকায়। তা হলে ৫৮ টাকাতেই তখন ডলার বিক্রি করতে হবে আপনাকে।
অর্থাৎ টাকার দর বাড়লে আগাম পণ্য লেনদেনের বাজারে আপনার সামনে কম খরচে ডলার কিনে রাখার সুযোগ রয়েছে। আবার টাকার দর কমলে রয়েছে ডলার বিক্রি করে লাভ করার সুবিধা। তবে যে-দামে আপনি ডলার কিনতে চুক্তি করেছেন, তার থেকেও যদি ডলারের দর বেশি পড়ে যায় (ধরুন ৫০ টাকায়), তা হলে আপনার লোকসান হবে।
• আবার ধরুন আপনি চুক্তি করে ৬০ টাকায় ডলার বিক্রি করলেন। ডলারের দাম যদি পরে কমে যায় (ধরুন ৫৫ টাকা), তা হলে ৫৫ টাকাতেই ডলার কিনে বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার লাভ। কারণ, ৬০ টাকায় বেচা ডলার ৫৫ টাকায় কিনতে পারলেন আপনি। কিন্তু তেমনই ডলার বেড়ে ৬৫ টাকা হলে ওই বেশি দামেই তা কিনতে হবে আপনাকে। আর চুক্তি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলে দাম স্থির হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দরের ভিত্তিতে।
সাধারণ ভাবে দেখা যায়, যে জিনিসের দামে যত ওঠা-পড়া রয়েছে, লগ্নিকারীদের গন্তব্য হিসেবেও তার কদর বেশি। যে-কারণে মুদ্রার বাজার বিশ্বে সবচেয়ে বড়। |
|
বিনিয়োগের খুঁটিনাটি
• অন্যান্য আগাম লেনদেনের মতোই এমসিএক্স-এসএক্স অথবা এনএসই-তে মুদ্রা কেনা-বেচা করা যায়।
• ন্যূনতম ১,০০০ ডলার কিনতে হয়।
• এখানে আপনি ১ ডলারের দামের উপর টাকা ঢালছেন। অর্থাৎ আপনি যদি মনে করেন, আগামী দিনে ডলারের দাম ৬০ টাকা থেকে আরও বাড়বে, তা হলে এখনই তা কিনে রাখতে পারেন। যদি দাম ৬১ টাকা হয়, সে ক্ষেত্রে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে হিসাব হবে আপনার লাভ।
• সাধারণত আমরা দশমিকের পর দুই ঘর হিসাব করে টাকার দাম বলি। যেমন, ৫০.২৫ টাকা, ১৫০.২৫ টাকা ইত্যাদি। তবে লেনদেনের বাজারে এই হিসাব কিছুটা আলাদা। এখানে দশমিকের পর চার ঘর হিসাব করে দর বলা হয়। অর্থাৎ ৬০.০০২৫ টাকা, ৫৯.১২৭৫ টাকা ইত্যাদি।
• প্রত্যেক পণ্যেরই নির্দিষ্ট টিক সাইজ রয়েছে। ডলার-টাকা লেনদেনে তা ০.০০২৫ পয়সা। দামের ওঠা-পড়া নির্দেশ করতে এই টিক সাইজ কাজে লাগে। লাভ-ক্ষতি হিসাবও হয় এর মাধ্যমে। যে কারণে ডলারের দামের শেষ দুই ঘর সব সময়ে ০.০০২৫ পয়সার গুণিতকে হয়।
• ডলারের দাম ০.০০২৫ পয়সা বাড়লে বা কমলে এক লটে লগ্নিকারীর ন্যূনতম লাভ বা ক্ষতি হয় ২.৫০ টাকা। আর দাম এক পয়সা বাড়লে বা কমলে সেই মুনাফা বা ক্ষতি দাঁড়ায় ১০ টাকা।
• এখানে পণ্য হাতে নেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। সরাসরি অ্যাকাউন্টে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক জমা পড়ে। যে কারণে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট লাগে না।
লগ্নির খরচাপাতি
• ন্যূনতম লগ্নির অঙ্ক অন্যান্য পণ্যের তুলনায় কম। মার্জিনও ৭.৫%। সাধারণত ৪,৫০০ হাজার টাকা দিয়েই এক লট ডলার কেনা যায়।
• লেনদেন খরচ এ ক্ষেত্রে অনেকটাই কম। এখানে শেয়ারের মতো সিকিউরিটিজ ট্রান্জাকশন ট্যাক্স (এসটিটি) বা পণ্য লেনদেনের জন্য প্রযোজ্য কমোডিটি ট্রান্জাকশন ট্যাক্স (সিটিটি) দিতে হয় না।
• লাগে শুধুমাত্র বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-র ধার্য করা খরচ (কোটিতে ১০ টাকা), এক্সচেঞ্জের খরচ (কোটিতে প্রায় ১১০ টাকা) ও ব্রোকার সদস্যের খরচ (আলোচনা করে স্থির হয়)।
• মূলত শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি), স্টক এক্সচেঞ্জগুলি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। এর সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তো রয়েছেই।
লাভ-ক্ষতির হিসেব নিকেশ
• অনেক সময়ে টাকা ২-৩ পয়সা পরিবর্তন হলে খরচ পুষিয়ে যায়। তার পর লাভের মুখ দেখতে পারেন।
• মুদ্রায় লগ্নির ক্ষেত্রে অন্যান্য পণ্য বা শেয়ারের মতো অনিয়মের কথা শোনা যায় না। তাই ঠিক মতো লগ্নি করলে ক্ষতি আটকানো তুলনায় সহজ।
• শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে অনেক দিনই ২-৫% ওঠা-নামা দেখা যায়। আগাম পণ্যের লেনদেনেও একই ধরনের ওঠা-পড়া চলে। সেখানে ডলারের ওঠা-পড়া এখন গড়ে ৫০-৬০ পয়সা (১%)। ফলে টাকার দর ৫০ পয়সা পরিবর্তন হলে এক লটে ৫০০ টাকা লাভ-ক্ষতি হতে পারে। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে যার অঙ্ক অনেকটা বেশি।
|
জানেন কি? |
• মুদ্রা লেনদেনের বাজার শেয়ারের থেকে প্রায় ১০০ গুণ এবং পণ্য লেনদেনের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বড়।
• ভারতে আগাম লেনদেনের বাজারে বিদেশি মুদ্রা কেনা-বেচা চালু হয় ২০০৮ সালে।
• অপশন লেনদেন শুরু হয় ২০১০-এ।
• এমসিএক্স-এসএক্স, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই) এবং ইউএসইএই তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জে মুদ্রা লেনদেনের সুযোগ আছে।
• ভারতে বর্তমানে ৪টি বিদেশি মুদ্রায় (ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েন) লগ্নির সুযোগ মেলে।
• চারটির মধ্যে প্রায় ৯০% লেনদেনই হয় ডলারে।
• সারা বিশ্বেই অন্যান্য দেশের ব্যাঙ্ক ও এক্সচেঞ্জগুলিতে বাড়ছে ডলারের মাধ্যমে টাকায় লগ্নি।
• ভারতের ব্যাঙ্কগুলিও মুদ্রা লেনদেন করে। তবে তাতে অংশ নিতে পারে শুধুমাত্র বিদেশি সংস্থাগুলি।
• দেশের এক্সচেঞ্জগুলিতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মুদ্রা লেনদেন চলে। সময় বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। |
|
চলবে...
লেখক এমসিএক্স স্টক এক্সচেঞ্জ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট (মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|