|
|
|
|
|
|
|
মিউচুয়াল ফান্ড |
ফান্ড জমা রেখে ধার
ব্যবসার জন্য লাখ দশেক টাকা চাই। কিন্তু ব্যাঙ্কে টাকা নেই।
তাতে কী? হাতে ফান্ড আছে তো! বলছেন নীলাঞ্জন দে |
|
মিউচুয়াল ফান্ড সঞ্চয় বাড়ানোর খুব শক্তিশালী মাধ্যম— এটা সকলেই জানেন। কিন্তু যেটা অনেকেই জানেন না, সেটা হল হাতে থাকা ফান্ডের ইউনিট ব্যাঙ্কে বন্ধক রেখে অনেক সহজে ও বেশ কম সুদে ঋণ পাওয়া যায়। শর্ত একটাই, ওই ব্যাঙ্কের ‘অনুমোদিত তালিকা’য় আপনার ফান্ডটিকে নথিবদ্ধ থাকতে হবে।
অসময়েও বন্ধু
শেয়ার বাজার যখন চাঙ্গা, তখন আপনার সম্পত্তির পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে মিউচুয়াল ফান্ড। কিন্তু বাজার সব সময়ে একই রকম থাকে না। কখনও ঝিমিয়ে পড়ে, কখনও বা ভয়ানক টালমাটাল হয়ে যায়। আর এমন বেসামাল সময়ে হাতে থাকা ফান্ড নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায় পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। অথচ ফান্ড কিন্তু আপনাকে ডোবায় না কখনওই। বরং সব থেকে প্রিয় বন্ধুর মতো হাত ধরেই থাকে। আপনাকে শুধু তার ভাল দিকগুলো ব্যবহারের ঠিক পথটি জানতে হবে। আর তেমনই একটি পথ ব্যাঙ্কে ইউনিট বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার সুবিধা। এ ক্ষেত্রে ফান্ড দু’ভাবে আপনার সুবিধা করে দিচ্ছে—
• আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে আপনাকে ফান্ডের ইউনিট বিক্রি করে দিতে হচ্ছে না। তা আপনারই থাকছে। শুধু আপনার বদলে জমা থাকছে ব্যাঙ্কের কাছে। অনেকটা বাড়ি বা গয়না বন্ধক রেখে টাকা নেওয়ার মতো।
• এ ভাবে অর্থ জোগাড় করে আপনি বাড়তি সম্পদ তৈরি করে নিতে পারছেন বা হঠাৎ তৈরি হওয়া কোনও চাহিদা মেটাতে পারছেন। ‘ফান্ড বন্ধকী ঋণের’ দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগত জানাতে এক পায়ে খাড়া হয়ে আছে বহু সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্ক। পোশাকি ভাষায় এই ব্যবস্থা ‘লোন এগেনস্ট সিকিউরিটি’ বা এলএএস নামে পরিচিত। |
|
ফান্ডে ধারের ফান্ডা
ভাবছেন, ফান্ড জামিন রেখে ধার নিতে গেলে নির্ঘাৎ অনেক ঝক্কি পোহাতে হবে। বরং ব্যাঙ্ক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া অনেক সোজা। তাই তো? কিন্তু আমি বলব, সেটা একেবারেই ভুল ধারণা। ঋণ নেওয়ার এই রাস্তাটা অনেকের কাছেই তেমন পরিচিত নয়। না-হলে দেখতেন এখানেই ভিড় হত বেশি। এখানে সংক্ষেপে ঋণ নেওয়ার পদ্ধতিটা আপনাকে বলে দিচ্ছি।
(১) দেখে নিন, হাতে থাকা ফান্ডের ইউনিটগুলি বেশ কিছু সময়ের জন্য ধরে রাখতে অসুবিধে নেই তো?
(২) সেগুলি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার জন্য প্রথমেই ব্যাঙ্কে আবেদন করতে হবে।
(৩) যত টাকার ইউনিট আছে, তার ভিত্তিতেই ঋণ পাবেন। তহবিলের সর্বোচ্চ কত শতাংশ ঋণ দেওয়া হবে, সেটা ব্যাঙ্ক বিশেষে আলাদা।
(৪) সুদের হারও বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে ভিন্ন। বাজারের উপর নির্ভর করে তা ওঠে বা নামে।
(৫) আপনাকে জানাতে হবে কত বছরের জন্য ঋণ নিতে চান আপনি।
(৬) ব্যাঙ্ক প্রথমেই দেখবে আপনি যে-ফান্ডে টাকা ঢেলছেন, সেটি তাদের অনুমোদিত তালিকার মধ্যে পড়ে কি না। এর পর অন্য কিছু বিষয় খতিয়ে দেখে ঋণ মঞ্জুর করা হবে।
(৭) ঋণ মঞ্জুর হলে প্রথমে আপনার নামে একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলবে ব্যাঙ্ক।
(৮) এর জন্য আপনাকে প্রসেসিং ফি গুনতে হবে।
(৯) টাকা ওই অ্যাকাউন্টেই জমা করে দেওয়া হবে।
(১০) যে-কোনও সময়ে, যে- কোনও কাজের জন্য অ্যাকাউন্ট থেকে প্রয়োজন মতো টাকা তুলতে পারবেন।
(১১) উল্লেখযোগ্য হল, অ্যাকাউন্ট থেকে যে-পরিমাণ টাকা তুলবেন, তার উপরই শুধু সুদ কাটবে ব্যাঙ্ক। অ্যাকাউন্টে জমা পুরো টাকার উপর নয়।
(১২) চাইলে ঋণের টাকা মেয়াদ শেষের আগেই মিটিয়ে দিতে পারেন।
(১৩) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধার শোধ করতে না-পারলে অবশ্য ব্যাঙ্ক মেয়াদ বাড়াতে পারে। তার ফি লাগবে।
(১৪) তবে সুদ দিতে না-পারলে বা শেষ পর্যন্ত আসল ফেরত দেওয়া সম্ভব না-হলে, ব্যাঙ্কের অধিকার আছে আপনার জমা রাখা ফান্ড ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার॥
(১৫) সতর্ক থাকবেন, বেআইনি কাজে যেন ঋণের টাকা লাগানো না-হয়। তা না হলে পরে বিপদে পড়তে পারেন।
চমক কোথায়?
ব্যাঙ্ক থেকে তো ব্যক্তিগত ঋণ করেও টাকা জোগাড় করা যায়। তা হলে কেন ফান্ড জামিন রেখে ধার নেব? প্রথমে এই প্রশ্নটাই যে-কারও মাথায় আসবে। কারণ আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিটি মোড়ে লাভ-লোকসানের হিসাব করে এগোনো খুবই জরুরি। আর জরুরি বলেই ‘ফান্ড বন্ধকী ঋণ’ আপনাদের আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। কারণ—
(ক) বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ব্যক্তিগত ঋণে সুদের যা হার, তার তুলনায় ফান্ড জমা রেখে নেওয়া ঋণে সুদ কম।
(খ) বাজারের ভিত্তিতেই সুদ কমে-বাড়ে। ফলে বাজারে সুদ কমলে, এখানে হার আরও কমে যায়।
(গ) ব্যাঙ্ক যে-টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে জমা রাখছে, শেষ পর্যন্ত তার পুরোটা দরকার না-ও হতে পারে। এবং সে ক্ষেত্রে যতটা ব্যবহার করবেন, সুদও গুনবেন ঠিক ততটার উপরই।
(ঘ) এমনকী ঋণের কতটা অর্থ আপনি ব্যবহার করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ারও স্বাধীনতা আছে আপনার।
(ঙ) এখানে ঋণের প্রক্রিয়াকরণ ও আনুষঙ্গিক খরচ তুলনায় অনেক কম।
(চ) প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হয় ঠিকই, তবে ঝক্কিও অনেকটাই কম।
|
মাথায় রেখে এগোন |
• ঋণ নেওয়ার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেয় সব ব্যাঙ্কই। থাকে ন্যূনতম সীমাও।
• ঋণগ্রহীতার নামে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে টাকা জমা করে দেওয়া হয়।
• সুদের হার সাধারণত ব্যক্তিগত ঋণের সুদের থেকে কমই হয়।
• অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য গ্রাহককে প্রসেসিং ফি দিতে হয়। এটা তাঁর মোট খরচের সঙ্গেই যুক্ত হয়।
• কারেন্ট অ্যাকাউন্টে জমা টাকা থেকে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নেওয়ার সুবিধা আছে।
• তবে বন্ধক রাখা মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটগুলির বাজার দর যেহেতু বদলাতে পারে, তাই সেই অনুযায়ী সময়ে সময়ে গ্রাহকের টাকা তোলার ক্ষমতা কমাতে-বাড়াতে পারে ব্যাঙ্ক।
• প্রতিটি ব্যাঙ্কেরই ফান্ড বন্ধকী ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজস্ব কিছু শর্ত থাকে। সেগুলি ভাল করে দেখে নিতে হয়।
• সাধারণত ঋণ শোধের মেয়াদ এক বছর ধরে রাখে ব্যাঙ্ক। এবং তার পর থেকে প্রতি বার বছর শেষে তা নবীকরণ করা হয়। |
|
লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|