কোনও দিনই বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। তাও দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে জেলা পরিষদের আসন থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে শুভাশিস পালই বাজিমাত করলেন। জেলা জুড়ে তিনি সোনা পাল নামে পরিচিত। ভোটের পর দিন এক পুলিশ অফিসারকে প্রকাশ্য রাস্তায় আটকে নিগ্রহের ঘটনায় তাঁর নাম উঠেছে।
মঙ্গলবার হরিরামপুর তৃণমূল পার্টি অফিসে বসে তিনি বললেন, “সোনা পাল ছাড়া হরিরামপুরে কারও অস্তিত্ব নেই। এ জয় মানুষের, দলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের।” শাসক দলের নেতা হয়েও তাঁর অভিযোগ, “সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-সহ এক দিকে সমস্ত দল। পুলিশের চাপ। এ সবের সঙ্গে একা লড়তে হয়েছে। ২০ জায়গায় পুলিশ ‘বিরক্ত’ করেছে, লাঠি চালিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে আমার ক্ষোভ স্বাভাবিক।” তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক হরিরামপুরে জেলা পরিষদের আসনে দাঁড়িয়ে সিপিএমের কাছ থেকে আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে আরেকটি জেলা পরিষদের জেতা আসনে কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করেছেন। অর্ধেক গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেও তাঁর বক্তব্য, “জেলা পরিষদের এক আসন মাত্র ৩০০ ভোটে হেরেছি। ফাঁকতালে তা সিপিএম পেয়ে গেল।” |
২০০৩ ও ২০০৮ সালের ভোটে তাঁর নেতৃত্বে হরিরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি, ১টি জেলা পরিষদ আসন ও ৬টির মধ্যে ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছিল কংগ্রেস। গত বিধানসভা ভোটের পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে তিনি ফের নিজের ‘কর্তৃত্ব’ প্রমাণ করে দিলেন। কংগ্রেস রাজ্যস্তরের একাধিক নেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে এনেও তাঁকে ‘কাবু’ করতে পারেনি বলে দলের নেতারা স্বীকার করে নিয়েছেন। ওই কংগ্রেস নেতাদের কথায়, জেলায় কংগ্রেসের একমাত্র শক্তঘাঁটি হরিরামপুর ব্লকের কর্তৃত্ব সোনাবাবুর হাতে থেকে গেল। শুধু রং বদল হল।
প্রিয় দাশমুন্সির অনুগত সৈনিক সোনাবাবু হরিরামপুরে সিপিএমের দুর্গে হানা দিয়ে ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিলেন। অভিযোগ, এলাকার সিপিএম বিধায়ক তথা তৎকালীন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাস পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে বহু মামলায় জড়িয়েও তাঁকে থামাতে পারেননি। লকআপের মারেও তিনি ক্ষান্ত হননি।
দল সূত্রের খবর, অঙ্গনওয়াড়ি, শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের সহায়িকা নিয়োগ থেকে ইন্দিরা আবাস-সহ নানা প্রকল্প রূপায়ণে তিনি ‘শেষকথা’ হয়ে ওঠায় হরিরামপুর পঞ্চায়েত সভাপতি মমতা বর্মন-সহ কয়েকজন দলীয় সদস্য সেই সময় সহকারী সভাপতি সোনাবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। সিপিএমে র সাহায্যে মমতা বর্মনেরা পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করে। কর্তৃত্ব হাতছাড়া হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও মারধরের অভিযোগ ওঠে। দলবিরোধী কাজে কংগ্রেস থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সময় দীপা দাসমুন্সি তাঁর পাশে দাঁড়ালেও বহিষ্কার আটকানো যায়নি। ২০১১ সাল গঙ্গারামপুর ভেঙে হরিরামপুর বিধানসভা তৈরি হয়। সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাস হরিরামপুরে প্রার্থী হন। আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবু সোনা পালকে পেয়ে ওই আসনে জিতে যান। এর পরেই তিনি জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক হন। |