ভোটের আগের উত্তেজনা, সংঘর্ষ অব্যাহত ভোটের ফল বার হওয়ার পরেও। সোমবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গের মালদহ, ইসলামপুর, চোপড়া এলাকায় খুন, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, ময়নাগুড়িতে দুই সংবাদকর্মীকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর ঘটনাও সামনে এসেছে।
মালদহের কালিয়াচক থানার শাহাবাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বামনটোলা গ্রামে সোমবার রাতে এক কংগ্রেস কর্মীকে গলার নলি কেটে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম নূরশাদ শেখ (৪২)। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। একই ভাবে বিজয় মিছিল করে বাড়ি ফেরার পথে সিপিএমের এক কর্মীকে বল্লম, লোহার রড দিয়ে খুঁচিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের মতিউর রহমান (৪০)। সোমবার রাতেই জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কাউয়ামারি গ্রাম ঘটনাটি ঘটেছে। দুই ক্ষেত্রেই যথারীতি অভিযুক্ত পক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুই ক্ষেত্রেই খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের খোঁজা হচ্ছে।” |
কালিয়াচকের ঘটনায় ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী বলেন, “নিহত কর্মী ভোটে প্রচন্ড সক্রিয় ছিলেন। সেই আক্রোশেই তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে খুন করেছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “ভোটে হেরে কংগ্রেস মিথ্যা অভিযোগ করছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় বিজয় মিছিলের পরে রাতে বাড়ির বারান্দায় একাই শুয়ে ছিলেন নূরশাদ শেখ। রাতে গোঙানির শব্দ শুনে বাড়ির লোকজন বাইরে বার হয়ে দেখেন তাঁর গলার নলি কাটা। দুই বছর আগে তিনি সিপিএম ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন।
হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাউয়ামারি গ্রামে সিপিএমের আজমা বিবি জেতার পর সিপিএম কর্মীরা এলাকায় বিজয় মিছিল বার করে। বিজয় মিছিল শেষ করে মতিউর রহমান আজমা বিবিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে একাই বাড়ি ফিরছিলেন। সিপিএমের অভিযোগ, তাঁকে একা দেখতে পেয়ে ১৫-১৬ জন কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা তাঁকে তুলে নিয়ে যান। তার পরে বল্লম, লোহার রড দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁকে খুন করা হয়। এলাকার এক বাসিন্দার বাথরুম থেকে দেহটি উদ্ধার হয়। নিহতের স্ত্রী ওই ব্যক্তি-সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। দলের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “কংগ্রেসে ভোটে হেরে হরিশ্চন্দ্রপুরে সন্ত্রাস শুরু করেছে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “আমরা খুনের রাজনীতি করিনি। না। অভিযোগ ভিত্তিহীন।” |
অন্যদিকে,. মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ও ইসলামপুরের বিভিন্ন এলাকাতে সিপিএম, তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে সিপিএম, তৃণমূল ও কংগ্রেস তিন দলের আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে ২০ জনকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতাল ও চোপড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। ইসলামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “গন্ডগোলের খবর পেয়ে প্রতিটি এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।” ইসলামপুরের সুজালিতে সিপিএম, তৃণমূলের গোলমালে বোমাবাজির অভিযোগ উঠছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। প্রতিটি দলই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছে।
ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে হামলা অব্যাহত ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকায়। কোথাও দোকান, ঘর ভাঙচুর আবার কোথাও বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এদিন বিকালে হামলার ঘটনা ঘটেছে ময়নাগুড়ির মাধবডাঙ্গা এলাকায়। সোমবার রাতে ধূপগুড়ির মাগুরমারি, দক্ষিণ আলতাগ্রাম, ঝার মাগুরমারি এলাকায় বামফ্রন্ট প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। সংযত থাকার জন্য প্রতিটি এলাকায় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।” |
ময়নাগুড়িতেই সংবাদ মাধ্যমের দুই কর্মীকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠল একদল তৃণমূল সমর্থকের বিরুদ্ধে। স্থানীয় একটি কেবল চ্যানেলের ওই দুই কর্মী বিজয় সরকার এবং প্রশান্ত অধিকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জখমদের বক্তব্য, ভোটের দিন বেশ কিছু ভোট দাতাকে বুথে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। তা সম্প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই হুমকি শুরু হয়। এদিন মারধর করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি চন্দনবাবু।
সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই পক্ষের ৩ জন জখম হন। এদিন সকালে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার বাসুরিয়া অঞ্চলের সর্বমঙ্গলা এলাকার ঘটনা। সিপিএমের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের ২ জন এবং সিপিএমের ১ জনকে গঙ্গারামপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনায় জনিত ৩ জনকে গ্রেফতারও করেছে। |