গনি ও গুহ ‘মিথ’-এ শেষ পর্যন্ত দাঁড়ি পড়ে গেল।
সোমবার বিকেলে, পঞ্চায়েতের ফল স্পষ্ট হতেই, মালদহ আর দিনহাটার রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে ক্রমেই ফিকে হয়ে গেল ‘পরিবার তন্ত্রের’ প্রশ্নাতীত প্রাধান্য।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাই মালদহের কোতোয়ালির প্রাসাদে অবসাদের ঘুম যেন আর কাটছে না। সাড়ে চারশো কিলোমিটার দূরে, দিনহাটার বাবুপাড়ার আটপৌরে গুহ-বাড়িতেও সদর দরজা বন্ধ থাকল সকাল থেকেই।
মালদহে ‘গনি-ম্যাজিক’ যে এ বার তেমন কার্যকর হবে না ভোটের আগেই তার ইঙ্গিত মিলেছিল। ফল প্রকাশের পরে দেখা গিয়েছে, গত দু-বারের পুনরাবৃত্তি এ বার আর হয়নি। জেলা পরিষদ দখলের ম্যজিক সংখ্যা ২০টি। তার আগে, ১৬-তে থেমে গেল কংগ্রেসের দৌড়। শুধু তা-ই নয়, খোদ কোতোয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতই এ বার দখল করতে পারেনি তারা। ১৫ আসনের সেই পঞ্চায়েতে সাতটি আসন পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কংগ্রেসকে। বামফ্রন্টের কাছে হারাতে হয়েছে কোতোয়ালির জেলাপরিষদ আসনটিও। |
মালদহে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রায় সমার্থক হয়ে পড়া গনি-পরিবারের বাড়িতে তাই মঙ্গলবার দুপুর গড়িয়ে শেষ বিকেলও আলো জ্বলল না। হতাশ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) বলছেন, “ভোরবেলা ঘুমিয়েছি। ঘুম ভাঙেনি তাই। আলোও জ্বালা হয়নি।” মন ভারী হয়ে আছে তাঁর ভাগ্নি সাংসদ মৌসম বেনজির নুরেরও। কথাই বলতে চাননি ডালুবাবুর দাদা আবু নাসের খান চৌধুরী এবং পুত্র ঈশা খান চৌধুরী। তাঁরা দু-জনেই কংগ্রেসের বিধায়ক।
আস্ত পরিবারটিকে এ ভাবে প্রত্যাখ্যান করল মালদহ? দলের এক পরিচিত জেলা নেতার কথায়, “মালদহটা কোতোয়ালির বাড়ি ভেবে নিয়েছিলেন ওঁরা। গনিখানের মতো ওঁরা কেউই বাড়ির বাইরে পা রাখতেন না। সব নির্বাচনই কি অতীত ভাঙিয়ে জেতা যায়!”
যেমন যায়নি কমল গুহ’র মিথ ভাঙিয়ে দিনহাটার মাটিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের জয় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। দিনহাটা ব্লকের ৮টি জেলা পরিষদ আসনের একটিও এ বার তাই ফিরে পায়নি কমল-পুত্র উদয়ন। কমলবাবুর আমল থেকেই যা ফব-র নিরঙ্কুশ দখলে। পিতা-পুত্রের পুরনো ‘দখলদারি’ এ বার হারিয়ে গেল? দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই অবশ্য গুহ পরিবারের এই পতনে অবাক নন। কেন? কী করে পাবে, ২০০৮-এ যে ‘সিপিএমের পুলিশ’ পাঁচ জন ফব কর্মীকে গুলি করে মারল দিনহাটায় তাদের সঙ্গেই গত দু-বছর ধরে যত দহরম মহরম উদয়নের। নিচুতলার ফব কর্মীদের মধ্যে যা নিয়ে ছিল চাপা ক্ষোভ। ক্ষোভ ছিল উদয়নবাবুর ‘পলায়নী মনোবৃত্তি’ নিয়েও। খুট্টিমারিতে তৃণমূল কর্মী খুনের পরে উদয়নবাবুর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় মাসাধিককাল তিনি ‘লুকিয়ে’ ছিলেন কলকাতায়।
নেতা-হীন দিনহাটায় ফব কর্মীরা পঞ্চায়েতের প্রচারই করতে পারেননি। তিন বার শিলান্যাস হলেও শিঙ্গিমারি নদীর উপরে সেতুটা আর গড়ে দিতে পারেননি কমল-উদয়নের কেউই। বছর দুয়েক আগে দিনহাটা পুরসভাতেও গুহ পরিবারের মিথ-এ ভর করে রেকর্ড আসন পেয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লক।
আর এ বার সেই উদয়নবাবুই ‘পালিয়ে’ বেড়াচ্ছেন’! এক জেলা নেতার কথায়, “এরপরেও কি জয়ের আশা করা যায়?” |