পুরসভা-প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই শহরের বিভিন্ন এলাকায় রমরমিয়ে কয়েকটি সংস্থার ঠান্ডা পানীয়ের দোকান গজিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। সেখানে পাঁচ টাকা দিলেই মিলছে নানা রঙের ভিন্ন স্বাদের পানীয়। লিচু, আমের স্বাদের পানীয় পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলি থেকে। শুধু দোকান নয়, শহরের স্কুলগুলিতে টিফিনের সময়ে গেটে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছে সংস্থাগুলির ফ্রুট জুসের ভ্রাম্যমান গাড়িও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠান্ডা পানীয়তে নানা রঙের তরল মেশানো হচ্ছে। তা কতটা স্বাস্থ্যকর তা দেখা হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে পুরসভা ও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। এই পানীয় দোকানগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও শিক্ষক শিক্ষা কর্মীরাও।
পুরসভার নাকের ডগায় দোকানগুলি চললেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিলিগুড়ি গালর্স হাই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত কর। তিনি বলেন ‘‘বিভিন্ন রঙের পানীয় বিক্রি হচ্ছে। সেগুলি আসলে রাসায়নিক। স্বাস্থ্যের পক্ষে এ ধরণের রাসায়নিক ভাল নয়। পুরসভার উচিৎ এই দোকানগুলি দ্রুত বন্ধ করা। কেন তাঁরা তা করছেন না বোঝা যাচ্ছে না। হয়ত কোন যোগসাজশ রয়েছে।” এই পানীয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিলিগুড়ি বয়েজ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন দাস। তিনি বলেন, “শহরে এ ধরণের বহু দোকান গজিয়ে উঠেছে। প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
শহরের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ সুকমল মিত্র বলেন, “এই পানীয়তে ফলের রস নেই। যা রয়েছে তা পুরোটাই রাসায়নিক। এগুলি থেকে নানা রোগের সম্ভাবনা থাকে।গুলি থেকে ধরনের রোগ হতে পারে। শিশুদের জন্য মারাত্মক হতে পারে।” ফুড লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই শহরের একাধিক ফ্রুট জুসের ওই দোকানগুলি চলছে বলে অভিযোগ। পুরসভার তরফে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুরসভা সূত্রে খবর, কোনও দোকানই সঠিক তথ্য দিয়ে লাইসেন্স নেয়নি। এখন পর্যন্ত ‘সোডা শপে’র লাইসেন্সের আবেদন জানিয়ে একটি মাত্র আবেদন জমা পড়েছে। তবে যে কয়েকটি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তার প্রত্যেকটিই একটি বিশেষ ঠান্ডা পানীয় বিক্রির জন্য। একটি ব্যবসার জন্য লাইসেন্স নিয়ে কী করে অন্য ব্যবসা চলছে তা নিয়ে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুরসভার তৃণমূলের তিন নম্বর বরো চেয়ারম্যান নিখিল সাহানি বলেন, “আমার বরো এলাকাতে বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। কোনওরকম লাইসেন্স ছাড়া সেগুলি চলছে। কেন দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বুঝতে পারছি না। আমরা বরো থেকে ব্যবস্থা নেব।” একধাপ এগিয়ে পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম বলেন, “কীভাবে এত কম টাকায় এই পানীয় তৈরি করা হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। কী জল ব্যবহার হচ্ছে, বিভিন্ন গন্ধ কী করে আসছে তা স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকেও দেখা হচ্ছে না। তবে পুরসভা কেন কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না।” তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, “কয়েক জন ঠান্ডা পানীয় বিক্রি করার জন্য লাইসেন্স নিয়েছেন, সোডা বিক্রির জন্য কোন লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা নেব।” ওই ঠান্ডা পানীয়ের ব্যবসায়ীরা অবশ্য তাঁদের কাগজপত্র রয়েছে বলে দাবি করেছেন। যোগেশ গুপ্ত, বিজয় গুপ্ত নামের দুই ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের সব কাগজ রয়েছে। পুরসভা দেখতে চাইলে তা দেখিয়ে দেব।” ঠিক কী কাগজ তাঁদের কাছে রয়েছে তা তাঁরা জানাননি।
|