চা বাগানেও ঘাসফুল ফুটতে শুরু করল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ডুয়ার্সের চা বলয়ে তৃণমূলের কোনও প্রার্থী জিততে পারেননি। বীরপাড়া, মাদারিহাট এলাকার বহু আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি। এ বার কিন্তু ছবিটা অনেকটাই পাল্টেছে। মেটেলি থেকে কুমারগ্রাম, প্রায় একশো আসনে তৃণমূল জিতেছে। এমনকী, বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানেও জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী।
তৃণমূল টি প্লান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জোয়াকিম বাক্সলা জানান, করম পুজোর ছুটি দেওয়া, চা শ্রমিকদের হাজিরা ৬৭ টাকা থেকে ৯৫ টাকা করা, এ সবই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খুব অল্প সময়ে মেটেলি থেকে কুমারগ্রাম পর্যন্ত ডুয়ার্সের ১৭৩ টির মধ্যে ৬৭ টি চা বাগানে তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠন খুলতে পেরেছে। তার জেরেই তৃণমূল ভাল ফল করেছে বলে তিনি মনে করেন।
ঘটনা হল, কালচিনি বাদে বাকি সব এলাকায় আগে একাধিপত্য ছিল প্রধানত আরএসপি এবং সিটুর। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের বছরখানেক পর থেকেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদ চা বলয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের প্রতি শ্রমিকদের সমর্থন বাড়তে থাকায় ধস নামে লাল দুর্গে। তারই ফায়দা পেয়েছে তৃণমূল। আগে যেখানে পা-ই রাখতে পারত না, গত বছর দেড়েক ধরে সেই এলাকাগুলিতে তৃণমূল সংগঠন তৈরি করেছে। তার ফলেই এ বার তৃণমূল জিতল একটি গ্রাম পঞ্চায়েত। আরও বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতে তারা ক্ষমতার শরিক হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রধানত বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লকেই তৃণমূলের ফল ভাল হয়েছে। সেখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪০ টি আসনের মধ্যে ৩৬টি জিতেছে তৃণমূল। ফালাকাটার দলগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েত একক ভাবে দখল করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির ২৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ৪টি আসনে। এমনকী বান্দাপানি গ্রাম পঞ্চায়েতের বন্ধ চা বাগান ঢেকলাপাড়ার আসনটিতেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীই জিতেছেন।
কালচিনি ব্লকের ১৯৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৩০টি আসনে তৃণমূল জিতেছে। পঞ্চায়েত সমিতির ৩২ আসনের মধ্যে ৩টি দখল করছে। কুমারগ্রামের চা বলয়ের ৩১টি আসন দখল করেছে তৃণমূল। সেখানে বামেদের প্রাপ্তি ৩৩ আসন।
কুমারগ্রাম ব্লকের ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে ১৪৪টি আসনের মধ্যে ঘাসফুল জিতেছে ৫০টি আসনে। নাগরাকাটার চা বলয়ে ২টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।
চা বলয়ে রয়েছে মালবাজার মহকুমার মোট ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এত দিন ওই এলাকাগুলিতে সিপিএমের আধিপত্য থাকলেও এ বার সেখানে অনেকটাই থাবা বসিয়েছে তৃণমূল, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মালবাজার মহকুমার চা বলয়ে তৃণমূল জিতেছে ২১ টি আসনে। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা ৪৭টি, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ১৩টি আসন পেয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে চা বলয়ে তৃণমূল ৯ টি আসনে জিতেছে। ফালাকাটার বিধায়ক তথা তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনিল অধিকারী বলেন, “গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বা ঝাড়খণ্ডীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা পঞ্চায়েত চালাব কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।” যদি সত্যিই হাত মেলানো হয়, তা হলে বীরপাড়া-মাদারিহাট পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
|
সহ প্রতিবেদন: সব্যসাচী ঘোষ |