মডেলে খুশি নয় মহারাষ্ট্রই
পঞ্চায়েত ভোটে মহারাষ্ট্র মডেল চাইছে কমিশন
গোটা রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনপর্ব একসঙ্গে সেরে ফেলার পরিবর্তে ভবিষ্যতে এলাকা-ভিত্তিক নির্ঘণ্ট-বিন্যাসের কথা ভাবছে পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কমিশন। মহারাষ্ট্রে যেমনটি হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যার সুরাহা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
এ বারের জটিলতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিছু বদল আনতে চাইছে কমিশন। তারা ব্যাপারটা প্রস্তাবের আকারে রাজ্য সরকারকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে সব বিষয়ে বদলের কথা ভাবা হয়েছে, তার প্রথমেই রয়েছে ব্যালটের বদলে ইভিএমে ভোট নেওয়া। কমিশনের বক্তব্য: ব্যালট পেপার মারফত ভোটগ্রহণ হলে আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা বেশি দেখা দেয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ করতেও বিস্তর সময় লাগে। পাশাপাশি জনসংখ্যাবৃদ্ধির অনুপাতে বুথের সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না, সেটাও রাজ্যকে মাথায় রাখতে বলবে কমিশন। তবে পঞ্চায়েত ভোটে ইভিএম চালু করা যে যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ, কমিশন-সূত্রে তা স্বীকার করা হচ্ছে। খরচ বাড়ার কারণ, প্রতিটি বুথে তিনটি ইভিএম রাখতে হবে। যে সমস্যার প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট-নির্ঘণ্ট তৈরির ক্ষেত্রে বড়সড় পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে কমিশন। আর এ জন্যই ‘মহারাষ্ট্র-মডেল’ অনুসরণের প্রাথমিক ভাবনা। সেটা কী রকম?
পঞ্চায়েত নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্রকে ভাগ করা হয়েছে পাঁচটি এলাকায় বিদর্ভ, পশ্চিম মহারাষ্ট্র, কোঙ্কন, মারাঠাওয়াড়া ও খান্দেশ। এলাকাগুলিতে পঞ্চায়েতের কার্যকাল শেষ হয় এক-এক সময়ে। ফলে ভোটও হয় ভিন্ন সময়ে। একই ভাবে এ রাজ্যেও পঞ্চায়েত ভোট করা গেলে ইভিএম তুলনায় কম লাগবে বলে কমিশন মনে করছে।
কিন্তু ঘটনা হল, মহারাষ্ট্র প্রশাসনই এই ব্যবস্থা পাল্টে সারা রাজ্যে একসঙ্গে ভোটের কথা ভাবছে। মহারাষ্ট্র প্রশাসন সূত্রের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সময়ে এক-একটি এলাকায় নির্বাচন হওয়ায় ওই রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকে বছরভর ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই চালু প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে এসে এক সঙ্গে পুরো রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আয়োজনের জন্য মহারাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্র সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। তা হলে পশ্চিমবঙ্গ ওই পথে হাঁটার কথা ভাবছে কেন? এখানেও একই অসুবিধে হতে পারে?
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য ইভিএমের সংখ্যা কমানো। কোন ব্যবস্থায় তা ঠিক ভাবে হতে পারে, তা দেখা হচ্ছে। মহারাষ্ট্র মডেল তার অন্যতম। তাই বলে সেটাই মানতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।”
বস্তুত এ রাজ্যে সদ্য যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়ে গেল, তার প্রস্তুতিপর্বের গোড়া থেকেই বিভিন্ন প্রশ্নে রাজ্যের সঙ্গে কমিশনের টানাপোড়েন বেঁধেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলাকালীন সরকার কমিশনকে কতটা সহযোগিতা করেছে, এ প্রশ্নের জবাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে এ দিন বলেন, “কমিশনের সব নির্দেশ রাজ্য সরকার কার্যকর করেনি। যেমন, অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। রাজ্য তার কিছুই করেনি।” সরকার আগাগোড়া অসহযোগিতা করেছে এমন অভিযোগও মীরাদেবী তুলছেন না। “সরকার একেবারে সহযোগিতা করেনি, তা বলছি না। সহযোগিতাও পেয়েছি।”- মন্তব্য তাঁর।
তবে মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্য সরকারের কয়েক জন মন্ত্রী কমিশনকে আক্রমণ করে যে সব মন্তব্য করেছেন তাকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন মীরাদেবী। তাঁর কথায়, “কে কী বলছেন, তা নিয়ে কমিশন মন্তব্য করবে না। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে কমিশন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে পারে না।” কিন্তু কোনও কোনও নেতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হিংসা ছড়িয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে? তখন মীরাদেবীর জবাব, “যাঁর বক্তব্যে হিংসা ছড়িয়েছে, ঘটনার দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে মীরাদেবী এ দিন বলেন, “অনেকের ধারণা, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে দুর্ঘটনা বা গোলমাল হবে না। তা ঠিক নয়। নির্বাচন ঘটনাবিহীন হয় না।” তিনি জানান, কমিশন চাহিদার তুলনায় বেশি বাহিনী পেলেও বিধি-নিয়মের কারণে সব বুথে বাহিনী মোতায়েন করা যায়নি। নির্বাচন কমিশনারের দাবি, ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন ২২-২৩ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। ফলে ভোট সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলা যায় না। আবার ভোট শান্তিপূর্ণ হল, না অশান্ত, মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে তা-ও মাপা যায় না। মীরাদেবী জানান, হিংসার জেরে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে ১৮০টি বুথে ফের ভোট নিতে হয়েছিল। এ বার পুনর্নির্বাচন ১৫৫টি বুথে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.