গোঁজের ধাক্কা
কারও তরী ডুবল, কারও রক্ষা এক চুলে
ড়াই হল সমানে সমানে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে কেউ জিতলেন কানঘেঁষে, কারও আবার তরী ডুবল তীরে এসে। সৌজন্যে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীরা।
গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির পাশাপাশি বাঁকুড়ায় জেলা পরিষদের আসনেও তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ের পথে কাঁটা হলেন দলেরই বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীরা। ভোটের ময়দানে তৃণমূল সমর্থকদের ভোট কেড়ে নিয়ে বেগ দিলেন দলেরই প্রার্থীদের। সোনামুখী ও ইঁদপুর ব্লকে দু’টি জেলা পরিষদ আসনে এ কারণেই জয়ের মুখ দেখতে পেলেন না তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ব্রজ অধিকারী ও প্রদীপ চক্রবর্তী।
সোনামুখী শহরের বাসিন্দা জেলা তৃণমূল নেতা ব্রজ অধিকারী এ বার বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ৪৫ নম্বর আসনের প্রার্থী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নেমেছিলেন এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী লক্ষণ সিংহরায়। এই আসন থেকে গতবার নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে এ বারও সিপিএম প্রার্থী করে। ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সিপিএম প্রার্থী সুব্রতবাবুর কাছে ৬১০ ভোটে পরাজিত হয়েছেন ব্রজবাবু। এই আসনে সিপিএম প্রার্থী সুব্রতবাবু পেয়েছেন ১৭ হাজার ৫৩৭টি ভোট। তৃণমূল প্রার্থী ব্রজবাবু পান ১৬ হাজার ৯২৭টি। নির্দল প্রার্থী লক্ষণ সিংহরায় ভোট টেনেছেন ৭ হাজার ৪০৯টি। তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যা, সোনামুখী বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের বিধায়ক রয়েছে। সে কারণে এখানে তৃণমূলের ভালই সমর্থন রয়েছে। সেই ভোট নিজেদের দুই প্রার্থীর মধ্যে কাটাকাটি না হলে, অতি সহজেই জিততেন ব্রজবাবু।
একই ভাবে দলেরই এক বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীর জন্য ইঁদপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী ৩২১ ভোটে হেরেছেন। জেলা পরিষদের ৯ নম্বর আসনে এ বার তাঁকে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল। ওই আসনেই দলেরই বিক্ষুব্ধ কর্মী বিবেকানন্দ পতি নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ৮৩৭টি ভোট পেয়েছেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর সিপিএম প্রার্থী অক্ষয় বাউরির কাছে মাত্র ৩২১ ভোটে পরাজিত হন প্রদীপবাবু।
আর এই হারের জন্য তৃণমূলের এক শিবির আঙুল তুলছে অন্য গোষ্ঠীর দিকে। ব্রজবাবুর সাফ কথা, “দলের জেলা যুব সভাপতি সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীর লোকেরা নির্দল প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। তার জন্যই হেরেছি।” প্রসঙ্গত তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জন্যই গত পুরসভা নির্বাচনেও তৃণমূল সোনামুখী পুরসভা দখল করতে পারেনি। তবে হারের পরেও প্রদীপবাবু সংযত। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “এই হারের পিছনে কী কারণ রয়েছে তা দলীয় নেতৃত্বকে জানাব। সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলব না।” জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি সুরজিৎবাবু অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেন, “আমি দলের এক জন দায়িত্বশীল কর্মী। কোনও নির্দল প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচারেও নামিনি। এলাকার মানুষ যাঁকে উপযুক্ত মনে করেছেন তাঁকেই ভোট দিয়েছেন।” জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সরকার অবশ্য বলছেন, “ওই আসনগুলিতে দলের প্রার্থীরা কেন হারলেন তার কারণ খতিয়ে দেখা হবে।
দলের গোঁজেদের জন্য অল্প ভোটের ব্যবধানে যেমন তৃণমূলের কিছু প্রার্থী জয় পাননি, তেমনি গোঁজেরা চেষ্টা করেও হারাতে পারেননি অনেককে। তবে সিমলাপাল ব্লক তৃণমূল নেতা দিলীপ পণ্ডা বা বড়জোড়ার যুব নেতা সুখেন বিদ কার্যত অল্প ভোটের তফাতে জিতেছেন। জেলা পরিষদের ৪৬ নম্বর আসনে সোনামুখী থেকে সুখেন বিদ ২৩৬ ভোটে সিপিএমের সৌরিন্দ্রমোহন চৌধুরিকে হারিয়েছেন। অন্যদিকে, সিমলাপাল ব্লকে জেলা পরিষদের ২৭ নম্বর আসনে ৫০২ ভোটের ব্যবধানে সিপিএম প্রার্থী দীপককুমার সিংহবাবুকে হারিয়ে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ পণ্ডা। তাঁর বিরুদ্ধে দলেরই এক গোঁজ প্রার্থী ছিলেন ফটিক দুংরা। তিনি ২ হাজার ৪২২ ভোট পেয়েছেন। তবে এই ভোট কাটাকুটির পরেও দিলীপবাবু জয়ে তৃপ্ত। বলছেন, “কেউ কেউ হারানোর চেষ্টা করলেও জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের জিতিয়েছেন। এ জন্য আমরা ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। গোঁজ টোজ সব উড়ে গিয়েছে!”
ভ্রম সংশোধন। মঙ্গলবার এই সংস্করণে প্রকাশিত হয় রাইপুর ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মটগোদা ও ঢেকো পঞ্চায়েতে ফল ত্রিশঙ্কু হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মটগোদা ও সোনাগাড়া পঞ্চায়েতে ফল ত্রিশঙ্কু হয়েছে। ঢেকো পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হল তৃণমূল। অন্য খবরে প্রকাশিত হয়, পুরুলিয়া ২ ব্লকে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছে কংগ্রেস। ওই পঞ্চায়েতগুলি প্রকৃত পক্ষে পেয়েছে তৃণমূল। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য দুঃখিত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.