জেলায় তাদের জয়জয়কার। কিন্তু, জেলারই শিল্পাঞ্চল দখলের লড়াইয়ে নেমে একটা জায়গায় হোঁচট খেতে হল তৃণমূল কংগ্রেসকে। বড়জোড়া ব্লকের ঘুটগোড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল সিপিএম। অথচ এই পঞ্চায়েত দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বামবিরোধী পঞ্চায়েত ও তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত ছিল।
কেন এই হার?
শ্রমিকদের চটিয়ে দেওয়াটাই কারণ বলে মনে করছে জেলা তৃণমূলের একাংশ। ঘুটগোড়িয়া পঞ্চায়েতের ১৯টি আসনের মধ্যে ১০টি সিপিএম, একটি বিজেপি এবং ৮টি তৃণমূল পেয়েছে। সোমবার এই পঞ্চায়েতের ফল জানাজানি হতেই বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। দু’টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতার পরেও পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করতে না পারার জন্য দলেরই শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতাদেরই দুষছেন ব্লক তৃণমূলের নেতারা। এমনকী, আইএনটিটিইউসি-র বাঁকুড়া জেলা সভাপতি তথা শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরিও নিজের সংগঠনকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন এই হারের জন্য। ঘুটগোড়িয়া অঞ্চলের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, গত দু’বছরে বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ ও কন্ট্রাক্টারদের থেকে আইএনটিটিইউসি-র ছোট-মাঝারি নেতাদের তোলাবাজির বিষয়টি একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু তাই নয়, কারখানায় কাজ দেওয়ার নাম করে এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার মতো ঘটনাও দিনের পর দিন বেড়েছে। জোর করে সংগঠনে ঢোকানোর প্রবণতা এবং তাঁদের মতের বিরুদ্ধে দলীয় মিছিল মিটিংয়ে সামিল করায় স্থানীয় শ্রমিকদের একটি বড় অংশ তৃণমূলের উপরে বিরূপ হয়েছেন। তা ছাড়া, অন্য রাজনৈতিক দলগুলির শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের উপরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই সবই ভোটের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
ঠিক ১৫ বছর আগে এই সব কারণেই বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন বামেদের থেকে। আজ সে কথা অস্বীকার করেন না এলাকার সিপিএম নেতারাও। আর বামেদের পথে চলতে গিয়ে একই দশা হল তৃণমূলেরওএমনই ফিসফিসানি চলছে দলের অন্দরে। ওই এলাকার এক বিশিষ্টজনের কথায়, “বামেরা ক্ষমতায় থাকাকালীন শিল্পাঞ্চল দাপিয়ে বেড়াত। স্থানীয় মানুষদের বঞ্চিত করে বাইরে থেকে নিজেদের লোকেদের এনে কারখানায় কাজ দিত। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের লোকেদের উপরে জুলুম করত। একই পথে চলেছে আইএনটিটিইউসি। তাদের পরিণাম তাই একই হল।” বিধায়ক স্বপনবাবু বলেন, “আমি খবর পেয়েছি, কিছু লোক আমাদের সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে শ্রমিকদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। এই কারণেই এলাকায় আমাদের বদনাম হয়েছে। এরা কেউ প্রকৃত তৃণমূল নয়।” পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা বড়জোড়ার বাসিন্দা সুজয় চৌধুরী বলেন, “আমাদের হয়তো কিছু ভুল ছিল। যে কারণে ১৫ বছর আগে মানুষ আমাদের পাশ থেকে সরে গিয়েছিলেন। তবে, নতুন করে মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়ার যে সুযোগ পেয়েছি, তাকে কাজে লাগাতে চাই।” |