কংগ্রেস ও বিজেপি-র টিঁকে থাকা লড়াই
বামেদের আসন বৃদ্ধি বনগাঁয় কপালে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূলের
ঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে দলের ভাল ফলের নিরিখে বনগাঁ ব্যতিক্রম না হলেও উত্তর ২৪ পরগনার এই মহকুমায় বেশ কিছু দলের হেভিওয়েট প্রার্থী এ বার হেরে যাওয়ায় তৃণমূল কিছুটা অস্বস্তিতে।
ভোটের ফলের হিসাবে মহকুমার তিনটি পঞ্চায়েত সমিতি বনগাঁ, বাগদা ও গাইঘাটা তৃণমূল দখল করেছে। এর মধ্যে বনগাঁ ও গাইঘাটা আগে তাদের দখলেই ছিল। বাগদা হাতছাড়া হয়েছে বামেদের। মহকুমার মোট ৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২৩টি পেয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতের ৭২৪টি আসনের মধ্যে তাদের দখলে এসেছে ৪০১টি আসন। ৯টি জেলা পরিষদের আসনের মধ্যে আটটিই পেয়েছে তৃণমূল। যেটিতে তারা হেরেছে সেটি হল বাগদার রবীন চক্রবর্তীর আসন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফলের প্রক্ষিতে জেলা পরিষদে তাদের একটি আসন বেড়েছে এই মহকুমায় সিপিএম তথা বামেরা এ বার মহকুমায় ১০টি পঞ্চায়েত দখল করেছে। ৭২৪টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে ২৯২টি। দলের বনগাঁ-বাগদা জোনাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ ঘোষের কথায়, “খুব বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত আমরা না পেলেও পঞ্চায়েতে আগের তুলনায় আমাদের আসন সংখ্যা বেড়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় শতাংশের হিসাবেও আমাদের ভোট বেড়েছে।”
সিপিএমের উল্লাস। — নিজস্ব চিত্র।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই মহকুমায় বামবিরোধীদের বিশেষত তৃণমূলের যে জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল, লোকসভা, পুরসভা, বিধানসভা পেরিয়ে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তা ধরে রাখতে পেরেছে তারা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গাইঘাটা ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের সবকটিই দখল করেছিল তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির সব এবং জেলা পরিষদের তিনটি আসনেও তারা জয়ী হয়। এ বার অবশ্য ৫টি পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়েছে তাদের। বামেদের দখলে গিয়েছে ২টি (রামনগর ও জলেশ্বর-২)। টাই হয়েছে তিনটি পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৯টি আসনের মধ্যে এ বার ৮টি হারিয়েছে তৃণমূল। সেগুলি গিয়েছে বামেদের দখলে। তবে জেলার পরিষদের তিনটি আসনই ধরে রাখতে পেরেছে তৃণমূল। তবে এই ব্লকে জয়ী হওয়া আটটি পঞ্চায়েতের মধ্যে সুটিয়া পঞ্চায়েতে জয় যথেষ্ট স্বস্তি দিয়েছে তৃণমূলকে। সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে প্রতিবাদী মঞ্চের সম্পাদক বরুণ বিশ্বাস খুন হওয়ার পর তৃণমূলের সঙ্গে মঞ্চের সদস্যদের দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল। আর এই দূরত্বের কারণেই বাম নেতৃত্বের ধারণা হয়েছিল পঞ্চায়েত ভোটে এর প্রভাব পড়বে। যদিও বামেদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে সেখানকার মানুষ তৃণমূলের উপরেই ভরসা করেছেন। সুটিয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ বলেন, “মানুষের এই রায়েই প্রমাণ হয়েছে এলাকায় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কারা থাকে।”
তবে পঞ্চায়েত স্তরে সার্বিক ফল তাদের দিকে থাকলেও আগের চেয়ে খারাপ ফল নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকেই আঙুল তুলেছে দলের একাংশ। বনগাঁ ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টি পেয়েছে তৃণমূল। যার মধ্যে উল্লেযোগ্য গোপালনগর-১ পঞ্চায়েত। এ বার তা হাতছাড়া হয়েছে সিপিএমের। এতদিন এলাকাটি সিপিএমের ঘাঁটি হিসাবেই পরিচিত ছিল। এই প্রথম পঞ্চায়েতটি হারাল তারা। এলাকাটি দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হিসাবে পরিচিত। বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এই এলাকা থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে উদ্যোগী হন। সেই হিসাবে এখানে পঞ্চায়েতের ফলে নজর ছিল অনেকের। পঞ্চায়েতটি দলের হাতে আসায় বিশ্বজিৎবাবুর বক্তব্য, “এলাকায় শান্তি ফেরায় মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছিলেন। তারই প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলে।”
এই ব্লকে পাঁচটি পঞ্চায়েত দখল করেছে বামেরা। যার মধ্যে ধর্মপুকুরিয়া, ঘাটবাওর, বৈরামপুরের মতো পঞ্চায়েত তারা ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূলের হাত থেকে। যদিও গতবারের হিসাবে তারা ২টি পঞ্চায়েত কম পেয়েছে এ বার। পাল্টা হিসাবে বামেদের কাছ থেকে ছয়ঘরিয়া, পাল্লা, দিঘারির মতো পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে নিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির ৪৭টি আসনের মধ্যে বামেরা পেয়েছে ১৭টি। বাকিগুলি পেয়েছে তৃণমূূল। জেলা পরিষদের তিনটি আসনও দখল করেছে তারা। তবে বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতিতে হেরে গিয়েছেন সমিতির বিদায়ী সভাপতি তৃণমূলের সৌমেন দত্ত, বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ সুব্রত পাল ও অলোক নন্দী। হেরে গিয়েছেন সমিতির বিজয়ী (আগের বার) বিরোধী দলনেতা সিপিএমের গোবিন্দ মণ্ডল। সৌমেনবাবুর বিরুদ্ধে যিনি জিতেছেন সিপিএমের সেই তপন দত্ত অবশ্য রবিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
তৃণমূল সূত্রে খবর, যাঁরা হেরেছেন তাঁদের কাজকর্ম নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ ছিল। প্রসঙ্গত, যে ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল সবচেয়ে বেশি সেই বাগদা ব্লকেই পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। ২৭টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে ১৫টি। বামেরা ১০টি। কংগ্রেস ও নির্দল পেয়েছে একটি করে। ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪টি পেয়েছে তৃণমূল। বামেরা পেয়েছে তিনটি। একটি ত্রিশঙ্কু ও একটি টাই হয়েছে। গতবারের চেয়ে বামেরা একটি পঞ্চায়েত বাড়িয়েছে। বাগদা পঞ্চায়েত সমিতিতে হেরেছেন সমিতির বিদায়ী জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের পরিতোষ সাহা। দলের বাগদা ব্লকের পর্যবেক্ষক ও প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠের কথায়, “পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে আমাদের ফল ভাল হয়েছে। দলের মধ্যে কোন্দলও অনেকটাই মেটানো গিয়েছিল। তবে পঞ্চায়েতে আর একটু ভাল ফল আশা করেছিলাম আমরা।”
তবে এ বার মহকুমায় বামেরা আগের চেয়ে আসন বাড়ালেও কংগ্রেস এবং বিজেপি কার্যত অস্তিত্ব হারিয়েছে। পঞ্চায়েতের ৭২৪টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৯টি। বিজেপি পেয়েছে একটি। রাজনৈতিক মহলের মতে মহকুমায় কংগ্রেস ও বিজেপির শক্তি না থাকাটা গোষ্ঠীকোন্দল থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলকে জিততে সাহায্য করেছে।
দলের জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “মানুষ এই জেলায় হয় আমাদের নয়তো সিপিএমকে বেছেছেন। কোনও ফড়েকে (পড়ুন কংগ্রেসকে) তাঁরা ভরসা করেননি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.